বিশেষ প্রতিনিধি।।গণতন্ত্র উদ্ধার ও হোঁচট খাওয়ার সকল আন্দোলন সংগ্রামে যে মানুষটি সংগ্রামী ভূমিকা রেখে সফল হয়েছেন। বিরোধী দল থাকা কোন সরকারি দলে থাকা অবস্থায়। সেই সকল ছাত্রদল সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটু এখন বসবাস করেন কানাডায়। বর্তমান সময়ের রাজনীতির বাইরে থাকলেও রাজনীতি নিয়ে লেখালেখি করে যাচ্ছেন নিয়মিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষক এ নেতা আজ দীর্ঘ একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী লেখা দিয়েছেন নিজের ফেসবুকে। ভোলা নিউজ এর পাঠকদের জন্য কিংবদন্তি এ ছাত্র নেতার লেখাটি হুবহু তুলে ধরলাম…..
“প্রথমে হলো আমি রাজনীতি করি না, করবোও না। দ্বিতীয় হলো আমি কানাডার নাগরিক। বাকী জীবন কানাডায়ই থাকবো। এখানে মারা গেলে আমার লাশ টানাহেচড়া করে দেশে নিয়ে দাফন করুক, তা আমি চাই না। বাংলাদেশ কিংবা কানাডা এই দুই দেশের যেখানেই মারা যাই, সেখানেই আমাকে সমাহিত করলে আমি খুশী হবো। এ দুটা হলো আমার নিজের ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত। আরেকটি সিদ্ধান্ত হলো আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটা সেটা পড়ে সময় পার করতে চাই। বড় কিছু হবার জন্য নয়। বরং এই পড়াশুনার মধ্যেই সময়টা আমার ভালো কাটে, তাই। আর যে কাজ করলে সময় ভালো কাটে, সেটাই তো জীবন। তাহলে কেন এই কথাগুলো বললাম?
বললাম এ জন্য যে, বাংলাদেশের কোন ব্যাপারে আমার কোন স্বার্থ নেই।সেখানকার প্রতিটি মানুষকে আমি ভালবাসি। এমনকি ছাত্রলীগ/ শিবির যারা করে, আমি তাদেরকেও ভালোবাসি। আর তাদের সকলের ভালোর জন্যই আমি আমার মতামত ব্যক্ত করি। এবং তা কেবলই প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে। ইক্সটার্নাল অডিটর যখন কোন কোম্পানীর উপর চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়, তখন বলে যে, প্রাপ্ত তথ্যের উপর সে এই মতামত দিলো। আমার বিষয়টিও তাই। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকেই আমি আমার বিশ্লেষণের ফলাফল ব্যাক্ত করি।
আসুন তাহলে জামায়াত শিবির নিয়ে দু/একটি কথা বলি। দ্যাখেন আপনারা তাদেরকে স্বাধীনতা বিরোধী বলে অভিহিত করেন। তার মানে আপনারা বুঝাতে চান যে, আপনারা ৭১ এ স্বাধীন হয়েছেন। আসলেই কি স্বাধীন হয়েছেন? দেখুন গতকালই ভারতের পদস্থ একজন মানুষ বলেছেন, “ডাকসুর ফলাফল নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।” কিংবা এরকম কিছু একটা বলেছেন। তাহলে বলুন আপনারা কি স্বাধীন? স্বাধীন হলে ভারত কি এরকম কথা বলতে পারে? বাংলাদেশ কি ভারতের অভ্যন্তরীন কোন বিষয় নিয়ে এমন করে বলতে পারে? পারে না। কিন্তু ভারত তো বলে! তাহলে কি বুঝা গেল? বুঝা গেল যে, বাংলাদেশ নামে মাত্র স্বাধীন। বাস্তবে স্বাধীন নয়।
এ যখন অবস্থা, তখন আপনারা যতবার স্বাধীনতা বিরোধী বলেন, ততবারই ওদের ভোট বাড়ে। কারণ মানুষ ততবারই দেখতে পায় ৭১ এ লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়ে যে স্বাধীনতা পেল, তাতো আসলে স্বাধীনতা নয়। বরং তা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে ভারতের অধীনতা বরণ। সেজন্য জামায়াতের ভোট বাড়ে। ভারতের সর্বশেষ পদস্থ কর্মকর্তা ডাকসু নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতেও জামায়েতের ভোট বেড়েছে। কারণ মানুষ দেখতে পায় যে, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে সেভাবে বলতে পারে না, যেভাবে বাংলাদেশের ব্যপারে বলে। আর বাংলাদেশের মানুষ ৭১ এর আগে পাকিস্তানের নাগরিকই ছিলো। তখনও তারা স্বাধীন একটি দেশেরই নাগরিক ছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক ছিলো। আর দেশের নাম ছিলো পাকিস্তান।
এবার আসুন ডাকসু ও জাকসু নিয়ে কথা বলি। অনেকেই আমাকে বলতে চেয়েছেন যে, বিগত ১ বছরে বিএনপির চাঁদাবাজী, দখল এবং বিএনপির কতক নেতার বেসামাল কথার কারণে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। আর বিএনপির ভারতের সাথে সখ্যতা, চুপ্পুর অপসারণে বাধা, ওয়াকারের অপসারণে বাধা, সংস্কার বাস্তবায়নে বাধা, নেতার লন্ডন থেকে আসতে দেরী করা, ছাত্রদল নির্বাচিত হলে ছাত্রলীগের মতই করবে, ইত্যদি ইত্যাদি। আসলেই কি শিবিরের বিজয় এবং ছাত্রদলের পরাজয়ের এটাই মূল কারণ?
আমি তাদের সাথে একমত যে, এসব কারণে বিএনপি তথা ছাত্রদলের ভোট কমেছে। আর শিবিরের বেড়েছে। তাই বলে কি এত বাড়া হঠাৎ বেড়ে গেল? না, শুধু এসবের জন্য শিবির জিতে নি। তাহলে কি? আসুন একটু বুঝে দেখি। আমি মনে করি বিএনপি বিগত ১ বছরে যেসব ভুল ও অন্যায় করেছে, তা না করলেও শিবিরই জিতে যেত। তার প্রমান জানতে চান? আসুন তাহলে প্রমান বের করি।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি কারা বন্ধ করলো? শুধুই কি সাধারণ শিক্ষার্থীরা? অবশ্যই না। এই শিবিরই পরিচয় গোপন রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশ ধারণ করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করিয়েছে। কিন্তু ছদ্মবেশে নিজেদের রাজনীতি নিজেরা করে গেছে। অন্যদেরকে করতে দেয় নি। সাধারণ ছাত্রছাত্রী নিজেরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সংগঠিত হয় না। কেউ না কেউ তাদেরকে সংগঠিত করে। আর যাদের কোন না কোন ভাবে গ্রহনযোগ্যতা থাকে, তারাই কেবল সংগঠিত করতে পারে। সূতরাং আবরারের হত্যাকান্ডকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি নিয়ে শিবির ছদ্মবেশে কাজ করে গেছে। সেই তখনই যদি ইউকসু নির্বাচন হতো, শিবিরই জিতে যেত। কারণ ততদিনে শিবির সেখানে বিশাল রকমের বিস্তার লাভ করেছে। সেজন্যই সাধারণ শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে তারা ঐ বড় বড় প্রসেশন গুলো করতে পেরেছে।
আসুন আরো বলি। ২৪ এর ৫ আগস্টের সময়ে হঠাৎ একদিন শুনতে থাকি যে, ছাত্রলীগকে একে একে হলগুলো থেকে বের করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের ৮টায় শুরু হয়ে ১১/১২ টার মধ্যে। আমি বিশ্বাস করতে পারি নি। কারণ ছাত্রলীগ সরকারী সংগঠন। পুলিশ, সরকার, প্রশাসন, গোলাবারূদ সব কিছুই তাদের সাথে। অথচ তাদেরকে বের করে দেয়া হলো। কারা করলো এই কঠিন কাজটি?
শিবির একাই এ কাজটি করেছে। ছাত্রলীগের কমিটির প্রায় পুরোটায়ই শিবির ছদ্মবেশে ছিলো। এবং তারা শুধু ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করার ঘোষনাটাই দিয়ে দিলো। আর কিছুই করা লাগে নি।
এই যে এমন একটা কাজ করতে পারলো, শিক্ষার্থীদের মধ্যে কি সমর্থনের দরকার হয়নি? তার মানে ছদ্মবেশে ছাত্র শিবির অনেক আগেই ঢাবি সহ সব শিক্ষাঙ্গনে সর্ববৃহৎ সংগঠনে রূপ লাভ করেছিলো।আসুন আরো বলি। কুয়েটে কোন এক ঘটনায় শত শত শিক্ষার্থী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে গেল। কোথা হতে এলো এত শিক্ষার্থী? কে সংগঠিত করলো? কেন করলো? আসলে কুয়েটে তখনই শিবির সর্ববৃহৎ সংগঠনে রূপ নিয়েছে। তারা চেয়েছে ছদ্মবেশে তারা কাজ চালিয়ে যাবে। আর কাউকে সেখানে কাজ করতে দেবে না। কাজ করতে গেলেই তাদের অংশ ছোট হয়ে যাবে। আসুন আরো বলি।
ঢাবিতে ছাত্রদল হল কমিটি দিলো। ছাত্র রাজনীতি থাকলে হল কমিটি তো থাকবেই। কিন্তু শতশত শিক্ষার্থী মূহুর্তের নেমে এসে এর প্রতিবাদ করলো। কোথা থেকে আসলো? কে পারলো এত শিক্ষার্থীকে বের করে আনতে? আমরা তো রাজনীতি করেছি। ১০ টা মেয়ে বের করতে হলে ২০ দিন পায়ে ধরা লাগতো। আর কারা শত শত মেয়েকে বের করে আনতে পারলো? তার মানে এরা সকলই শিবির। শুধু জগন্নাথ হিন্দুদের হল হওয়ায় ঐখানে ওরা কিছু করতে পারে নি।
এই ভাবে বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওরাই এখন সর্ব বৃহৎ সংগঠন। এবং হলে হলে ছদ্মবেশ নিয়ে ওরাই শুধু টিকে থাকতে চায়।
আর ওরাই টিকে যাবে, যদি দুটি বিষয় নিশ্চিৎ করা না যায়। একটি হলো গনতন্ত্র। আরেকটি হলো সত্যিকারের স্বাধীনতা। যদি গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে দ্বিতীয়টি এমনিতেই হয়ে যাবে। কারণ ক্ষমতা তখন চলে যাবে বাংলাদেশের জনগনের হাতে। তারাই সরকার বানাবে। তারাই ভাঙবে। ভারতের হাতে বাংলাদেশের সরকার গঠন ও টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা থাকবে না।
যেহেতু তাদের সরকার গঠনের ক্ষমতা থাকবে না, তাই বাংলাদেশের কোন দল কিংবা দলের নেতা ভারতের তাঁবেদারী করবে না। করে কি লাভ? কোন লাভ নেই। বরং নিজ দেশের জনগনের সমর্থন হারানোর ভয়ে আরো বেশী বেশী ভারতের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে। আর এটাই তো সত্যিকারের স্বাধীনতা।
সূতরাং সত্যিকারের গনতন্ত্রের মাধ্যমে জামায়াত শিবিরের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থান থামিয়ে দেয়া সম্ভব। কিন্তু সেরকম গনতন্ত্র কি প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে? নট লাইকলি। কারন বাংলাদেশে গনতন্ত্রের নামে যা আছে, তা মূলতঃ পরিবারতন্ত্র। তিন পরিবারের রাজতন্ত্র।
দেখুন হাসিনার যেরকম করে পতন হয়েছে, তাতে ৫ আগস্টের পরের দিনই তার পরিবর্তে অন্য কারো দলের শীর্ষ পদের দায়িত্ব নেবার কথা ছিলো। হাসিনাকে বহিস্কার করার কথা ছিলো। কিছু কি তার হয়েছে? হয়নি। কারণ এটা রাজতন্ত্র। রাজার কোন ভুল নেই। তিনি পৃথিবীর যেখানেই থাকেন, তিনিই রাজা।
এই যে ডাকসু/ জাকসুতে এরকম ঘটনা ঘটেছে, বড় একটি দলের ভরাডুবি হয়েছে, কারো কি কিছু হয়েছে? হয়নি। গনতন্ত্র থাকলে বর্তমান টীম যেটা আছে, শুধু পদত্যাগই করতো না। ব্যর্থ ও ভুল নেতৃত্বের কারনে বহিষ্কারও হতো। কিন্তু সেরকম কি কিছু হয়েছে? হয়নি। কারণ রাজা ও রাজার টীমের কোন চ্যালেন্জ মোকাবেলা করতে হয় নি।
তাই দেশে কখনই গনতন্ত্র আসার কোন লক্ষন নেই। নেই লক্ষন ভারতীয় আধিপত্যবাদ দূর হবার। তার মানে বাংলাদেশ ভারতের অধীন। এই অধীনতার বিরুদ্ধের সবচেয়ে বড় শক্তিই হয়ে উঠবে এই জামায়াত শিবির। কারণ ওরা গুপ্ত সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাবে। আর বলবে যে, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ যদি আলাদা না হতো, ভারত কখনই এরকম সাহস দেখাতে পারতো না। মানুষও তখন তাদের কথার যৌক্তিকতা খুঁজে পাবে। সূতরাং এই জামায়াতকে আর কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হলো প্রাপ্ত তথ্যের উপর আমার বিশ্লেষণ এবং বের হয়ে আসা ফাইন্ডিং। সকলকে ধন্যবাদ।”
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান
মন্তব্য করুন