চরফ্যাশন প্রতিনিধি।।ভোলার চরফ্যাশনে স্ত্রী-সন্তান হত্যার দায়ে স্বামী ও দেবরকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।আজ বুধবার দুপুর ১২টায় চরফ্যাশন চৌকি অতিরিক্ত দায়রা জজ মো: শওকত হোসাইনের আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন। দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন মাহাবুব আলম ওরফে মাফু ও দেবরের ইব্রাহিম। তারা চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর আফজাল গ্রামের বাসিন্দা মান্নান মাঝির ছেলে। আমৃত্যু কারাদন্ড পাওয়া আসামি মাহাবুব ও ইব্রাহিম আপন ভাই। একই সঙ্গে তাদের ২ জনকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের চর আফজাল গ্রামের মাহাবুব আলম ওরফে মাফু ও দেবরের ইব্রাহিমদের পরিবারের সাথে একই গ্রামের জনৈক মিলন নক্তির সাথে জমি-জমা নিয়ে পূর্ব শত্রুতা ও বিরোধ ছিল। এই বিরোধের সূত্র ধরে মিলন নক্তিকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য আসামি মাহাবুব এবং ইব্রাহীম ভিকটিম জাহানারাকে হত্যা করে এর দায় মিলনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেন। পরে পরিকল্পনা মাফিক ২০১৮ সালের ৩ মার্চ রাতে জাহানারাকে ধারালো দা দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করেন। কিন্তু এ ঘটনা, ওই সময়ে একই বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা আবির (৮) দেখে ফেলায় আসামিরা আবিরকেও হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে দেন। এমন ঘটনা ঘটিয়ে আসামি ইব্রাহীম ও অপর আসামি মাহাবুবকে তাদের ঘরের সামনের গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধে এবং চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে এবং দাবি করে যে মিলন ভিকটিমদের খুন করেছে।
এ ঘটনায় নিহত জাহানারার বাবা মো: সৈয়দ আলী চৌকিদার তারপরে দিন বাদী হয়ে ৪ জন আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে চরফ্যাশন থানা পুলিশ এবং তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩ জন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। বাদীপক্ষ উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দরখাস্ত দিলে আদালত ডিবি ভোলাকে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেন। অধিকতর তদন্ত শেষেও ৩ জন আসামির বিরুদ্ধেই ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি পুনরায় চার্জশিট দেওয়া হয়। পরে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় ৩ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। দীর্ঘ সুনানির পর অবশেষে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় চরফ্যাশন চৌকি অতিরিক্ত দায়রা জজ মো: শওকত হোসাইনের আদালত আসামি মাহাবুব আলম ওরফে মাফু ও দেবরের ইব্রাহিমকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করেন এবং একই সঙ্গে ২ জনকে ২০ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ মামলায় অপর আসামি মান্নান মাঝির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেন।
মামলার রায়ের সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট হযরত আলী হিরণ ও আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট ছিদ্দিক মাতাব্বর ও অ্যাডভোকেট মাঈনুল ইসলাম নাবিল সরমান উপস্থিত ছিলেন। ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে আদালতে এ রায় দেয়া হয়। আসামিদের মধ্যে আসামি মাহবুব আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান
মন্তব্য করুন