অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
সরকারি কর্মচারীদের কোনো কাজ অবহেলায় ফেলে না রেখে দ্রুততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য তিনি মানবেন না। সেই সঙ্গে সরকারি কাজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং অকারণে অর্থের অপচয় যেন না হয় তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
সোমবার রাজধানীতে জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে দেয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৬ সাল থেকে চালু হয় এই পদক। এবার তৃতীয়বারের মতো পদক দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং মাঠ পর্যায়ে সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সাফল্যের পুরস্কার স্বরূপ এই পদক দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক বলেন, ‘এই পদক কর্মচারীদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতায় কেবল উৎসাহ দেয়নি, সরকারি সেবা জনগণের কাছে আরও বেশি সহজলভ্য করেছে।’
‘কাজে গতিশীলতা আনতে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তাদের প্রণোদনা এবং নারী কর্মচারী নিয়োগে আরও বেশি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ জনপ্রশাসনকে আরও গণমুখী করবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে জনপ্রশাসন মানেই যে জনগণের সেবা করা, জনগণের কাজ করা, মানুষের উন্নয়ন করা, সেটি স্মরণ করিয়ে দেন। জনগণের করের টাকায় সবার বেতন-আরাম আয়েশ হয়, এটি জানিয়ে তৃণমূলের মানুষের প্রতি নজর রাখার তাগাদাও দেন তিনি।
সরকারি কাজে মেধা, দক্ষতার পাশাপাশি উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারেরও পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কাজে জটিলতা থাকবেই। এক সময় প্রচলিত ছিল লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। এখন লাল ফিতা ব্যবহার হয় না, সাদা ফিতা ব্যবহার হয়। কিন্তু সাদা ফিতা ব্যবহার হলেই যে কাজের গতি দ্রুত হয়, সেটা না। কাজেই এই লাল ফিতা এখনও প্রচলিত আছে।’
‘এই দৌরাত্ম্য যেন না থাকে। কোনো কাজ যেন থেমে না থাকে, কোনো কাজ যেন পড়ে না থাকে। আপনাকে একটা ফাইল দেয়া হলো, আচ্ছা ঠিক আছে, এটা পড়ে থাকল হারিয়েও গেল, ভুলেও গেলাম, সেটা যেন না হয়।’
‘আবার অহেতুক অর্থ খরচের জন্য এমন এমন প্রকল্প নিয়ে আসা যার কোনো কার্যকারিতাই নেই বা যার কোনো শুভফলই মানুষ পাবে না, সেটাও যেন না হয়।’
‘কোন কাজটা করলে সঠিকভাবে জনসেবা নিশ্চিত হবে, দেশের উন্নতি হবে, আর দেশের উন্নতি মানেই তো ভবিষ্যত প্রজন্ম, আপনার বংশধররা সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত জীবন পাবে, আধুনিক জীবন পাবে। সেভাবেই আপনারা কাজ করবেন, সেটাই আমরা চাই।’
যেকোনো কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে বলেও জানিয়ে দেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আপনি একটা কাজ করেছেন, তার কতটা সফল করতে পারলেন, বাকিটা কেন পারলেন না? আবার সে কাজটাকে ধরে উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে, মেধা দিয়ে সে কাজটাকে আরও বিকশিত করে জনকল্যাণে কতটা কাজ করতে পারেন সেই চিন্তা ভাবনাটা যাতে থাকে এবং বিকশিত হয় সে ব্যবস্থা করার জন্যই আমরা এই উদ্যোগটা নিয়েছি।’
মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বেতন, আরাম আয়েশ
সরকারি চাকুরেদের বেতন, আবাসনসহ নানা সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে জনগণকে তার প্রতিদান দেয়ারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
‘একটা সময় ছিল সরকারি চাকরি, কাজ করলেও বেতন, না করলেও বেতন, করলে করলাম, না করলে না করলাম। এই চিন্তাটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়।’
‘মনে রাখতে হবে সরকারি চাকরি মানে আমার দেশের মানুষ, কৃষক, শ্রমিক মেনতি মানুষের ট্যাক্সের টাকায় সকলের বেতন, সকলের আরাম আয়েশ সব কিছু। এটা মনে রাখতে হবে তাদের সেবা করা, তারা যেন ভালো থাকে, সেই চিন্তাটা সব সময় মাথায় থাকতে হবে।’
আর সরকারি সেবার লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠী হিসেবে তৃণমূলের মানুষদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার ওপরও গুরাত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘গরিব মানুষটা, যে কৃষক বাবা তার সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে সমাসীন করলেন, সে কৃষক পরিবার যারা আছে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে।’
‘ঠিক এইভাবে চিন্তাটা করতে হবে, চিন্তাটা সব সময় নিচে, তৃণমূল মানুষের দিকে দৃষ্টি রেখেই করার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। তাহলেই আমাদের উন্নয়নটা স্বার্থক হবে। দেশ উন্নত হবে এবং এই দেশে আর দারিদ্র্য থাকবে না। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ আমরা গড়তে পারব।’
বর্তমান সরকারের আমলে দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেনর প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। মাঝখানে বহু সময় হারিয়ে গেছে। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। আমরা আশা করি এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
‘একটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, সেটার প্রমাণ নিশ্চয় আপনারা এখন দেখছেন, পাচ্ছেন।’
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৩জুলাই-২০১৮ই)