ভোলায় নারীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, শশুড়বাড়ি থেকে ভন্ড হারুন গ্রেফতার

 

নিউজ ডেস্ক : ভোলায় বিরোধপূর্ণ জমি দখলকে কেন্দ্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক নারীকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় হারুন শিকদার ওরফে ভন্ড হারুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে দৌলতখান উপজেলার চালতাতলা বাজার সংলগ্ন কাজী বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আজ আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, গেল ১৪ নভেম্বর দুপুরে উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে বাবুল শিকদার ও তোফাজ্জল শিকদার গ্রুপের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রুপ নেয়। এসময় বাবুল শিকদারের নেতৃত্বে হারুন শিকদার ওরফে ভন্ড হারুন, নাগর শিকদার, জাকির শিকদার, শামীম শিকদার, মফিজল শিকদার, শাহীন শিকদার, রেশমা বেগম এবং রুমা বেগম তোফাজ্জল শিকদারের পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় তোফাজ্জল শিকদার গ্রুপের সেন্টু ওরফে অভি, লিটন শিকদার, তোফাজ্জল শিকদার, আমেনা বেগম ওরফে লিপি আক্তার, রুমানা বেগম এবং আব্দুল মন্নান গুরুতর আহত হন।

এদের মধ্যে আমেনা বেগম ওরফে লিপি আক্তারকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। আসামিরা মধ্যযুগীয় কায়দায় লিপি আক্তারকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। তার পড়নের পোশাকপরিচ্ছদ টেনেহিঁচড়ে তাকে শ্লীলতাহানি করেছে। আসামিরা লিপি আক্তারকে বাড়ির উঠান থেকে ধস্তাধস্তি করে হারুন শিকদার ওরফে ভন্ড হারুনের ঘরে নিয়ে আটকে শ্লীলতাহানি করে। তার পড়নের সমস্ত পোশাকপরিচ্ছদ টেনেহিঁচড়ে খুলে তাকে বিবস্ত্র করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে। পরে জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯-এ খবর পেয়ে ভোলা সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে ভোলা সদর ২৫০ শস্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

ঘটনার পর ১৭ নভেম্বর তোফাজ্জল শিকদার গ্রুপের রুমানা বেগম বাদী হয়ে বাবুল শিকদার গ্রুপের বাবুলকে প্রধান আসামি করে নয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করলে আদালত সদর থানা পুলিশকে মামলাটি দায়ের করার জন্য নির্দেশ দেন। এরপর পুলিশ মামলাটি আমলে নেয়।

মামলার বাদী রুমানা বেগম জানান, বাবুল শিকদার এবং তোফাজ্জল শিকদার উভয় পরস্পর আত্মীয়স্বজন। বসতবাড়ির জমি নিয়ে তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে আগের থেকে বিরোধ রয়েছে। সেই বিরোধ মিমাংসা করতে তোফাজ্জল শিকদার বাবুল শিকদারকে অভিযুক্ত করে নৌবাহিনীর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা তাদের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় কারো মাথা, কারো পা এবং কারো হাত ফেটে রক্তাক্ত জখম হয়। হামলার একপর্যায়ে লিপি আক্তারকে উঠান থেকে ধস্তাধস্তি করে ধরে হারুনের ঘরে নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে, যা স্পর্শকাতর।

মামলা দায়ের হওয়ার পর মামলার ৫ আসামি গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় আদালত মামলার ৮ নম্বর আসামি শাহীনের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠায়।

মামলার ১,২,৩ ও ৪ নম্বর আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ না করে আত্মগোপনে থাকেন। এরপর পুলিশ খবর পেয়ে হারুনকে তার শশুড়বাড়ি দৌলতখান থেকে গ্রেফতার করে। তিনি মামলার ২ নম্বর আসামি। তিনি পেশায় একজন কবিরাজ। ভুয়া কবিরাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়ার কারনে স্থানীয়রা তাকে ভন্ড হারুন নামে চেনে।

মামলার ১,৩ ও ৪ নম্বর আসামি এখনো আত্মগোপনে আছে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু টিম তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে, বাবুল শিকদার গ্রুপের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে বাবুল শিকদার ও তোফাজ্জল শিকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত দ্বন্দ্ব চলছে। এরই জের ধরে দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এতে বাবুল শিকদার গ্রুপের কয়েকজন আহত হয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভোলা সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সোহেল হাওলাদার জানান, এ ঘটনায় উভয়পক্ষ আদালতের মাধ্যমে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া চলমান রেখেছে।

ঘটনাটি মর্মান্তিক উল্লেখ করে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাসনাইন পারভেজ জানান, আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ দ্রুতই আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE