অর্থনীতির সংকটে বিনিয়োগ ভাটা।।

 

শিল্প বাণিজ্য  |
অনলাইন ডেস্ক।।

অর্থনীতির সংকটে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। তিন মাসে বিনিয়োগ কমেছে ৩৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি এবং অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগ বাড়ছে না। ফলে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, বাড়বে না জিডিপির প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) হিসেবে চলতি বছরের মে-জুলাই মাসে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ প্রস্তাব কমেছে ৩৯ শতাংশ। চলতি বছরের মে-জুলাই সময়ে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন খাতে ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বর্তমান ভূ-অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ভাঙন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি শুরু হয়েছে। এই বাহ্যিক কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমেছে। তিনি বলেন, এই বিনিয়োগ প্রবণতা অন্তর্বর্তীকালীন এবং ভূ-অর্থনৈতিক সংকট শেষ হলেই আমাদের বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ইতিবাচকভাবে বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ৭ শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের অস্থিরতা, মূলধন বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত অর্থবছরে মূলধন বিনিয়োগ ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ কমেছে। আন্ত-কোম্পানি ঋণ কমেছে ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ। তবে বিদ্যমান বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনরায় বিনিয়োগ ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৬২২ মিলিয়ন ডলার ও কোরিয়া থেকে ৬০৩ মিলিয়ন ডলার। নেদারল্যান্ডস থেকে ৫১২ মিলিয়ন ডলার, হংকং থেকে ৩৭১ মিলিয়ন ডলার, যুক্তরাষ্ট্র ৩৪৭ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ৩৩০ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার ও চীন থেকে ২৩২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নন-ইপিজেড অঞ্চল ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। অপরদিকে ইপিজেড পেয়েছে ৪০৬ মিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়ে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক। সামষ্টিক অর্থনৈতিক দুর্বলতা, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার এবং আমদানি বিধিনিষেধ বিনিয়োগ আগ্রহে প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, যদিও সব বিনিয়োগ প্রস্তাব পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় না, কিন্তু এটি বিনিয়োগ পরিস্থিতি ও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের একটি সূচক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলার হার আগের বছরের চেয়ে ২২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ঋণপত্র নিষ্পত্তি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ কমে ৪৯০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিনিয়োগ কমে যাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের জন্য একটি নেতিবাচক দিক, কারণ বিনিয়োগ না বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে না। একই সঙ্গে এটি অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অভাবের একটি প্রতিফলন। উদ্যোক্তারা বলেন, যে কোনো সাধারণ নির্বাচনের আগে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহ সাধারণত কম থাকে। কিন্তু এ বছরের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিদেশিরা এখন নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না। কেন এমনটা হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমেছে। অন্যদিকে ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে। অথচ দেশের বর্তমান বাস্তবতায় বিদেশি বিনিয়োগ অনেক বেশি দরকার। বর্তমানে বিদেশিদের মূলধনি বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE