মনজু ইসলাম ঃ নদী ভাঙ্গন ভোলার মানুষের একটি বড় সমস্যা, জেলার চারদিকে নদী থাকায় হুমকির মধ্যে বসবাস করতে হয় এ জনপদের মানুষ কে। নদী ভাঙ্গন রোধে মেঘনার জন্য সরকারের ব্যাপক বজেট থাকলেও তেতুলিয়ায় নেই বলেই চলে। সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের পাশেই বহমান তেতুলিয়া নদী। নদী ভাঙ্গন ভেদুরিয়ার মানুষের একটি বড় সমস্যা। তেতুলিয়া নদীর গর্ভে হাজার হাজার মানুষ হারিয়েছেন বসতভিটা ও ফসলি জমি। তেঁতুলিয়ার গর্বে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিলুফা বেগম নামে একজন বলেন,তিনবার নদিতে ভাঙা দিছে, এখন আবারো ভাঙনের মুখে ,যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হবে বসতভিটা। আমরা গরিব মানুষ, আশ্রয় নেব কোথায়।চোখমুখে দুশ্চিন্তা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন নিলুফা বেগম।
ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটের দক্ষিণ পাশে তেঁতুলিয়া নদীর পাড়েই বসবাস আমেনা বেগমের। আমেনা বেগম বলেন এক সময় আমাদের বাড়ি চটকিমারা এলাকায় ছিলো, চটকিমারা এলাকায় থাকাকালীন নদীতে ভাঙ্গা পরে বসতবিটা ও ফসলী জমি। চটকিমারা থেকে ভাঙ্গার পরে ভেদুরিয়া ৫নং ওয়ার্ডের দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছি। গেল কয়েক বছরের নদী ভাঙ্গনে মানবতার জীবনযাপন করছি আমরা। এখানেই থেমে থাকেনি জীবন। পাঁচ বার নদীতে ভাঙার পর এখন আবার ভাঙনের মুখে পড়েছি। ভাঙনের কারণে নিঃস্ব আমরা। স্বামী মাছ ধরার কাজ করে, পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। নদীতে মাছ থাকলে স্বামীর টাকা ইনকাম করতে পারে আর মাছ না থাকলে নিরুপায় হয়ে জীবন যাপন করতে হয় আমাদের। বর্তমানে যে বসত বাড়িতে বসবাস করছি সেটাও এখন নদীর সন্নিকটে। এমত অবস্থায় যদি নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে রাস্তায় বসবাস করতে হবে আমাদের। তাই সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লকে ব্যবস্থা জাতে করা হয়। জাকির নামে একজন বলেন,বর্তমানে ভাঙনের মুখে রয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই এখন আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশা নিয়ে বসবাস করছেন তেঁতুলিয়ার পারে। নদী ভাঙনের কারনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। আমাদের ভেদুরিয়া ইউনিয়নে রয়েছে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ। হুমকির মধ্যে স্কুল-কলেজ গ্যাস ফিল্ড, সরকারি রাস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এমনতো অবস্থায় তেতুলিয়া নদী ভাঙ্গন বন্দে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার পাশাপাশি ব্লকের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় তেঁতুলিয়ার গর্ভে হারিয়ে যাবে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। জাকির আরো বলেন, শহরের নেতারা অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। অনেক এমপি-মন্ত্রী ভেদুরিয়ার মানুষকে আশাহত করেছিলেন কিন্তু নদীভাঙ্গা রোদে আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই নদী ভাঙ্গার বেদনা নিয়েই আতঙ্কের মধ্যেই বসবাস করছে ভেদুরিয়া বাসি। সরেজমনে গিয়ে দেখা যায়, ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটের উত্তরে মোল্লাবাড়ির দরজা হইতে দক্ষিণে চটকিমারা খেয়ার ঘাট পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা নদীভাঙ্গনে হুমকির মধ্যে রয়েছে। এঅবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্লকের ব্যবস্থা করা না হলে হুমকির মধ্যে ভেদুরিয়া ইউনিয়ন। এ ব্যাপারে ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বলেন, তেঁতুলিয়া নদীতে যে পয়েন্ট দিয়ে ভাঙন চলছে ওই পয়েন্টে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তবনা দেওয়া হয়েছে। এখন ওই এলাকায় সমীক্ষার কাজ চলছে। সমীক্ষা শেষ হলেই আশাকরি খুব শিগগিরই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।