আরিয়ান আরিফঃ ভোলায় শীতের সকালে কয়েক বছর আগেও চোখে পড়তো রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ কাটার সরঞ্জামসহ গাছির ব্যস্ততার দৃশ্য। সকাল হলেই খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলতো খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। গ্রামবাংলার এ দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এর প্রধান কারণ খেজুর গাছ নিধন। এতে দিনে দিনে ভোলায় কমছে খেজুরের গাছ। আগের মত খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে ১০ গুন বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।এদিকে, শীত মৌসুমে ভোলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খেজুর গাছের রস আহরণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তুলনামূলকভাবে ভোলার জেলার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে খেজুর গাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাঠে আর মেঠোপথের ধারে কিছু গাছ দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই খেজুরগাছ আজ অস্তিত্ব সঙ্কটে। যে হারে খেজুরগাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপণ করা হয় না। সদর উপজেলার কানাইনগর গ্রামের মোঃ ইউছুফ,তরিকুল ইসলাম, মাকসুদ মিয়াসহ একাধিক লোক বলেন, কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের পরের প্রজন্মরা তো পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়। তারা জানান, গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় খেজুর রস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখন গাছ যেমন কমে গেছে তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সে রস এখন আর তেমন নেই। গাছি মোঃ আনিচ মিয়া জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয় রোজগার হতো তাতে সঞ্চয়ও থাকতো, যা দিয়ে বছরের আরো কয়েক মাস সংসারের খরচ চলতো। পশ্চিম ধনিয়া গ্রামে যে কয়েকটা খেজুর গাছ আছে তা বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। তিনি আরও জানান, এইতো কয়েক বছর আগে এক হাড়ি খেজুর রস বিক্রি করতাম ২০-৫০ টাকা। এখন খেজুর গাছ না থাকায় সে রসের দাম বেড়ে হয়েছে ১শ থেকে ২শ টাকা। ইলিয়াছ মিয়া ধনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বলেন, রসের প্রচুর পরিমানে সংকট রয়েছে। আমরা যারা শহরের বসবাস করছি তারাতো এখন আর খেজুর রস খেতেই পারেনা। গত বৃহস্পতিবার দড়িরাম শংকর গ্রাম থেকে ১৫০ টাকা করে প্রতি হাড়ি রস কিনে এনেছি। কিন্তু তাতেও অরিজিনাল রস পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।