ক্ষুদে লেখকঃ রবিন আহমেদ
৯ জুলাই ২০২০ ইং
রিপোর্টঃ মোঃ আরিয়ান আরিফ
প্রচলিত কথায়,যতো দোষ,নন্দ ঘোষ।আজ প্রবাসী ভাইদের অবস্থা তা-ই হয়েছে।বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সূচনালগ্ন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অনেক বুদ্ধিজীবি প্রবাসীদেরকে দূষে আসছেন।প্রথমদিকে যখন বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা দেশে আসা শুরু করে,তখন থেকেই স্বজনপ্রীতি ও অর্থের লোভ সামলাতে না পেরে কোনোরকম পরিক্ষা ছাড়াই কর্তব্যরতরা তাদের রিলিজ দিয়ে দেয়।এরপর আরো চাপ বাড়তে থাকে,প্রতিদিন হাজারে হাজারে লোক দেশে ফিরে আসে তাদেরও যথাযথ চেক-আপ না করে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকার শর্তে রিলিজ দেয়া হয়।আপনাদের কি মনে হয়,এ-তো বছর পরে একজন মানুষ নিজ দেশে ফিরে গৃহবন্দী থাকবেন!এভাবেই এদেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু।এরপর শুরু কথিত লকডাউন।নেহায়েত বিনোদন ছাড়া আর কি।সবার ছুটি, দু’এক মাস বেশ ভালোই কাটলো।প্রথমদিকে বেশ উপভোগ করতাম স্বাস্হ্যমন্ত্রীর ঘুমপাড়ানী সংবাদ সম্মেলন।এরপর শুরু আরেক দুর্ভোগ।কাজ বন্ধ থাকায় দেখা দিল অর্থ সংকট।অনেক যায়গায় গৃহকর্তা পরিবারের ভরণপোষণে ব্যর্থ হয়ে অথবা মা শিশু সন্তানের খাবার জোগাড় করতে না পারায় আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটেছে।মসজিদও লকডাউন করা হলো কয়েকদিনের জন্য।অবশ্য সেটা পাবলিক তোয়াক্কাই করেনি।অন্যদিকে সরকারি ত্রাণ নিয়ে চেয়ারম্যান,মেম্বার,রাজনৈতিক নেতার গুদাম ভরার প্রতিযোগিতা।সাহায্যের নামে কৃষকের কাঁচা ধান কেটে ফটোসেশান করা।চলে এলো ঈদ।মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের মধ্যে সুদখোর ছাড়া বাকি সবারই পকেট প্রায় ফাঁকা।উঠিয়ে দেয়া হলো কথিত লকডাউন।প্রকাশ্যে গ্রাম থেকে শহর,শহর থেকে গ্রামে মানুষের যাতায়াতের পরিমান আরোও বাড়তে থাকলো।মার্কেট,সপিংসেন্টার উন্মুক্ত করা হলো অনেকটা লুঙ্গি দিয়ে মুখ ঢাকার মতো করে।এরপরে সংক্রমণের ভয়াবহতা বাড়তে লাগলো।শুরু হলো ভূয়া করোনা নেগেটিভ সনদ বিক্রির হিড়িক।গণস্বাস্থ্য ও ঔষধ প্রশাসনের নাটক।যার পরিচালক ক্ষমতাসীন সরকার।সম্প্রতি সরকারের কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে রিজেন্ট হসপিটালের মালিক বনে যাওয়া সাহেদের কুকীর্তি ফাঁস হলো।যদিও এখন হাসপাতালটি সিলগালা করা হয়েছে।কিন্তু গত সাড়ে তিন মাসে তারা কোনো প্রকার পরিক্ষা ছাড়া যেসকল মানুষদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ দিয়ে আসছে এবং তাদের দ্বারা আরো কতজন সংক্রমিত হয়েছে তার হিসাবতো একমাত্র উপরওয়ালাই জানেন।অনেক চেতনাধারী ভদ্রলোকেরা বলছেন,প্রবাসীরা ভূয়া করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিদেশে গিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।তাদের বলি লজ্জা থাকলে জীবনে দেশের ভাবমূর্তির কথা মুখে আনিস না ভাই।মানলাম প্রবাসীরা দুধে ধোয়া তুলসি পাতা না।আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রবাসী ভাইয়েরা ততোটা শিক্ষিত না বিধায় শ্রমিক হিসেবেই তাঁরা বিদেশে কাজ করতে যায়।প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধা না।তারা পরিবারকে বাঁচাতেও প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছে।বিদেশে যেতে তারা হয়তো জমি বিক্রি করে,মা/বউয়ের গহনা বন্ধক(গচ্ছিত) রাখে অথবা সুদে টাকা নিয়ে থাকে।অর্থ উপার্জনের একটি রঙিন স্বপ্নের বীজ বপন করে সবাইকে ছেড়ে বিদেশের পথে পাড়ি জমায়।বিদেশ যাওয়ার পরে তাদের সেই রঙিন স্বপ্নটার মূল্য পরিশ্রমী শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে দিতে হয়।তাদের কি দোষ দেবেন,যত কষ্টই হোক অর্থ উপার্জন করা ছাড়া তাদের আর দিক বেদিক জ্ঞান থাকে না।নিজে না খেয়ে,ভালো কিছু না কিনে,সস্তায় থাকার ব্যবস্থা করে।একটাই লক্ষ্য পরিবারকে ভালো রাখা।আর মাথার উপর পাহাড়সম ঋণের বোঝাও যে পরিশোধ করতে হবে।তাঁদের কি দোষ,যে প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা ভূয়া করোনা নেগেটিভ সনদটি সংগ্রহ করেছে সেটি নিশ্চয়ই সরকার অনুমোদিত।করোনার শুরু থেকেই দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার দূর্নীতি ও অবনতি নিয়ে অনেকেই গলা ফাটিয়েছি।তখন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।দু’মাস আগেও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় ভূয়া করোনা নেগেটিভ সনদের ব্যপারে লেখালেখি হয়েছিল।তখনও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।অথচ আজ যখন প্রবাসীরা ভূয়া সনদসহ অন্য দেশের এয়ারপোর্টে ধরা খেয়ে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে।তখন একদল লোক বলছে এরা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।আমিতো মনে করি ভালোই হয়েছে,দেশের মানুষের কথা যখন কানে যায়নি,এখন গোটা পৃথিবী জানুক বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কি হাল!”উন্নয়ন” শব্দটা শুনতে শুনতে আমরা অনেকটাই শ্রবণ প্রতিবন্ধীতে পরিনত হয়ে গেছি।আর কোনো শব্দ যেন কান সহ্য করতে পারে না।কাঠের পুতুলের মতো অসার আমরা যেদিক থেকে সুতার টান আসে ঐদিকেই ঝুকে পরি।