বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চরফ্যাসনের চরকলমী ইউনিয়নের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও মসজিদের ইমামকে মারধর করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীর পরিচয়ধারী একদল দুর্বৃত্ত। শনিবার বিকালে চর কলমী ইউনিয়নের চরমায়া গ্রামের মোহাম্মদীয়া তামিমুল কোরআন নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসা থেকে ধরে এনে ১ কিমি দক্ষিণে দক্ষিণ মায়া সপ্রাবি’য় মাঠে ফেলে প্রকাশ্যে এই মারধর করা হয়। আহত ইমামকে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের ৬ নেতা-কর্মীকে আসামী করে শশীভূষণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ শাহে আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেফতারের দাবীতে আজ সোমবার চর মায়া গ্রামের ওই মাদ্রাসা ময়দানে বিক্ষোভ করেছে গ্রামের নারী-পুরুষ। পাশাপাশি অপরাধীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমুল শাস্তির দাবীতে আজ সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন চরফ্যাসন উপজেলা মসজিদের ইমাম সমিতি।
সরেজমিনে ঘুরে জানাযায়, হাফিজুর রহমান হাফেজ দুর্ধর্ষ জলদস্যু ছিল। জলদস্যুতার দাপট কমে গেলে সে যুবলীগের কর্মী হয়ে পর্যটনস্পট মায়ানদীর ব্রীজ এলাকায় ছিনতাই, মাদক ব্যবসার রাজত্ব গড়ে তোলেন। পাশাপাশি মায়ানদীর ব্রীজ এলাকায় বেড়াতে আশা দর্শনার্থী যুবক-যুবতীদের আটক করে টাকা আদায়ের পাশাপাশি ধর্ষণের কথাও আছে লোকমুখে। তার এসব অপকর্মের ভাগিদার শশীভূষণ থানা আওয়ামীলীগের সহসভপতি বাচ্চু হাওলাদারসহ যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী এসব অপকর্মে হাফেজকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে আসছে। এজন্য থানা পুলিশ কখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিতে চায়নি। পাশাপাশি গ্রামের মানুষও তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়নি।
আক্রান্ত ইমাম নুর হোসাইন জানান, তিনি চর মায়া গাজি বাড়ির দরজায় জামে মসজিদে ইমামতি করেন। পাশাপাশি মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় মোহাম্মদিয়া তামিমুল কোরআন নামে একটি হাফেজি মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। যুবলীগ নেতা হাফেজ এই মাদ্রাসা থেকে মাসিক নির্দিষ্ট পরিমান সুবিধা দাবী করে আসছেন। এই টাকা দিতে অস্বীকার করায় নানান ভাবে সে মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করেন। শনিবার ইমাম নুর হোসেন মাদ্রাসার বাহিরে ছিলেন। এসময় হাফেজ মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে তালা ঝুলিয়ে দেন। ইমাম নুর হোসাইন মাদ্রাসায় ফিরে এলে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙ্গে মাদ্রাসায় প্রবেশ করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা হাফেজ, কামাল, সুজন এবং স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মাকসুদ ২টি মোটরসাইকেল যোগে মাদ্রাসায় হানা দেয়। তারা মাদ্রাসা থেকে ইমাম নুর হোসাইনকে তুলে দক্ষিণ চর মায়া সপ্রাবি’য় মাঠে নিয়ে আসেন। এখানে শশীভূষণ থানা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি বাচ্চু হাওলাদারসহ এসব দুর্বৃত্তরা স্কুল মাঠে ইমামকে বেধকড় মারধর করে । পরে স্থানীয় লোকজন ইমামকে রক্তাক্তবস্থায় উদ্ধার করে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আজ সোমবার মাদ্রাসা মাঠে বিক্ষোভ মিছিলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন. হাফেজকে সামনে রেখে গ্রামজুড়ে ছিনতাই চাদাবাজি মাদক ব্যবসা এবং নারী ধর্ষণের অপরাধ সীমা ছাড়ালেও পুলিশ কখনো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি। ইমামকে মারধরের পরও পুলিশ হাফেজসহ মুল হোতাদের গ্রেফতার না করে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে করেছেন।
মসজিদ কমিটিরি সভাপতি বাদসু বেপারী জানান, যুবলীগ নেতা পরিচয়ধারী হাফিজুর রহমান হাফেজ জলদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, ডাকাতি, নারী ধর্ষণসহ নানান অপরাধে জড়িত। শশীভূষণ থানা আওয়ামীলীগের সহসভপতি বাচ্চু হাওলাদার ও চরকলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক মাকসুদুর রহমান মাকসুদসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে হিস্যা দিয়ে হাফিজুর রহমান হাফেজ এসব অপকর্ম করছে। এসব নেতা-কর্মীরা থানা পুলিশ থেকে সব আপদ বিপদে তাকে সুরক্ষা দিয়ে আসছেন। এছাড়াও এই মাদ্রাসা ও মসজিদ থেকে ইতিপুর্বে একধিক আলেমদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন এই চক্র।
শশীভূষণ থানার ওসি (তদন্ত) হাবিবুর রহমান জানান, মসজিদের ইমামকে মারধরের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত সাহে আলম নামে একজনকে গ্রেফতার করে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারেরর চেষ্টা চলছে।