টিপু সুলতান
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এই শাপলা ফুল আনাচেকানাচে দেখা যেতো। শাপলা ইংরেজিতে যাকে বলা হয় water lily যার বৈজ্ঞানিক Nymphaea nouchali নাম ।অথচ অযত্নে আর অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এ নয়নাভিরাম পুকুর পুশকুনিতে বিলে-ঝিলে ভাসা পদ্ম বা শাপলা ফুল। শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, শ্রীলংকারও জাতীয় ফুল এ শাপলা। শ্রীলংকায় শাপলাকে বলা হয় নীল-মাহানেল। খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয় ভরাটের কারণে শুধু ভোলা নয় ঢাকার পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা। সংরক্ষনের নেই কোনো উদ্যোগ। উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা সাধারণত আবদ্ধ অগভীর জলাশয়, খাল-বিলে জন্মে থাকে। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো ও এরিস্টটল এর এক শিষ্য থিউফ্রাস্টাস বলেছেন, শাপলা একটা জলজ উদ্ভিদ, যা প্রায় ৩’শ খ্রিস্টপূর্ব পুরনো। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণত পাঁচ প্রকার শাপলা ফুল দেখা যায়। সাদা, লাল, বেগুনি, হলুদ ও নীল রঙের। এর মধ্যে সাদা শাপলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। গ্রামবাংলার আনাচে কানাচে হাওড় বিলে ঝিলে পুকুরে ডোবায় অহরহ দেখা যেত এ জলে ভাসা ফুল। তবে এখন অযত্নে অবহেলায় আর কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভোলায় দুই’ধরনের শাপলা দেখতে পাওয়া যেত। একটি সাদা আরেকটি লাল। স্থানীয় ভাষায় সাদা শাপলাকে শাপলা আর লাল শাপলাকে রক্ত শাপলা বলা হয়ে থাকে। কৃষি জমি বালু দিয়ে ভরাট, প্রতি বছর ইরি জমি থেকে ইট ভাটার জন্যে মাটি কেটে নেয়া ইত্যাদি কারণে শাপলা আজ ভোলায় পুকুর, খাল-বিল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শাপলা ফুল যখন আবদ্ধ জলাশয়ে অনেক ফুটে থাকে তখন সেখানে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। আর ফুল থেকে যে অংশ ফলে রূপান্তরিত হয় তাকে স্থানীয় ভাষায় ড্যাব বলা হয়ে থাকে। এ ড্যাবের ভিতরে অনেক ছোট ছোট বীজ থাকে। এগুলো মানুষ উঠিয়ে নিয়ে ভেঙ্গে শুকিয়ে খই ভেজে খায়। এ খই খুবই সুস্বাদু।শাপলা বর্ষাকালে জন্মে ও ফুল ফোটে। জাতীয় ফুল শাপলা ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নাজিউর রহমান কলেজের আনোয়ার স্যার বলেন, শাপলা ফুল অগভীর আবদ্ধ জলাশয় আর খাল-বিলে জন্মে। বিশেষ করে বিলেই বেশি জন্মে। খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো বালু দিয়ে ভরাটের কারণে সেখানে আর শাপলা জন্মাতে পারে না। এ ছাড়া আবদ্ধ জলাশয়গুলোতে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষকরার ফলে শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্র গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নবীন-প্রবীনদের অনেকেই বলেন, জাতীয় ফুল শাপলা এক সময় হয়তো কাগজে-কলমে, পাঠ্য বইপত্রে লেখা থাকবে। দ্রুত বিলুপ্তির কারণে বাস্তবে আর হয়তো শাপলা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সদর উপজেলার বাপ্তার চৌদ্দঘরের ওমর ফারুক মিয়া বলেন, এক সময় বিলে ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলার বাহারী রূপে মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। শাপলা ছোটদের খুব প্রিয়। গাও গ্রামের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুব জনপ্রিয় ছিল এ শাপলা। অনেকে আবার বিল থেকে শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো।