বুকে বুক নয়, হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছুঁই

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

ছোট বেলায় ঈদের আনন্দ শুরু হতো রোজার প্রথম দিন থেকে। রোজার সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে আনন্দও বাড়তে থাকত। ঈদের আগের রাত কাটত প্রায় নির্ঘুম। ঈদের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে নতুন পোশাক পরে বড়দের সাথে ঈদ গা এ যেতাম ঈদের নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে বাসায় এসে কিছুটা ফিরনী সেমাই খেয়ে কাজিনরা মিলে দল বেধে যেতাম প্রতিবেশী ও আত্নীয় স্বজনদের বাড়ি। সেখানেও খেতাম হরেক রকমের বাহারী নাস্তা। সালামের জন্য বড়রা আমাদের ঈদের সালামি দিতেন। তখনকার দিনে দশ/ বিশ টাকা সালামি পেলে যে কি খুশী হতাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না!

বড় হওয়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দও ক্রমেই কমতে লাগল। ছাত্র জীবনে ঈদের আগের রাত ও ঈদের দিন বন্ধুদের সাথে আড্ডার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত ঈদের আনন্দ। কর্ম জীবনে প্রবেশের পর থেকে বাড়ির ছোটদের আনন্দের মধ্যে নিজের শৈশবকে খুঁজে আনন্দিত হওয়ার চেষ্টা করছি। ঈদের নামাজ শেষে আত্নীয় ও বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করা, মৃত অাত্নীয়দের কবর জিয়ারত করা, ছোটদের নিয়ে আত্নীয় ও বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া- এসব করেই কাটে ঈদের দিন।

কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার ঈদ এসেছে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। করোনাভাইরাসের কঠিন সময়ের এই ঈদে নেই বাড়তি জাঁকজমকতা। দেশের বেশির ভাগ লোকের আয় রোজগার বন্ধ। তাই এবারের ঈদ তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য করোনাকালীন সময়ের আর দশটা দিনের মতই নিরানন্দময়।

সরকারের পাশাপাশি নিঃস্বার্থ কিছু মানুষ এই নিরানন্দময় মুখগুলোতে হাসি ফুটাতে কাজ করে যাচ্ছে অবিরাম। ঈদে নতুন পোশাক না কিনে সেই টাকা দিয়ে দুস্থ পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে চাল, তেল, সেমাই, চিনি কিনে দেয়ার খবর শুনে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। ঈদের অনন্দকে তুচ্ছ করে এক দল ডাক্তার, নার্স, অাইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে অন্যদের সুস্থ করতে নিরলস যুদ্ধ করে যাচ্ছেন এক অদৃশ্য শক্তি করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) এর বিরুদ্ধে। সে সকল কোভিড যোদ্ধার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। টেলিভিশনের পর্দায় যখন দেখতে পাই একজন ভিক্ষুক তার ভিক্ষার মাধ্যমে জমাকৃত টাকা সরকারি তহবিলে তুলে দিয়ে করোনার কারনে অসহায় হওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ায় তখন সেই বিশাল মনের মানুষের কাছে আমাদের মানবতা নামে মেকি চিৎকারের কন্ঠও যেন রুদ্ধ হয়ে যায়। যখন দেখি একজন স্কুল শিক্ষর্থী তার টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে জমাকরা মাটির ব্যাংক নিয়ে অসহায় মানুষদের সাহায্যে এগিয়ে আসে তখন তার চোখে দেখি আগামীর মানবিক বাংলাদেশ।

দেশ ও পৃথিবীর এই সংকটময় অবস্থা কেটে যাবে এক সময়, ইনশাআল্লাহ। আঁধার কেটে উঠবে সোনালী সূর্য। এই পাশে থাকার ছোট ছোট গল্পগুলোই এক সময় হয়ে উঠবে এক একটা বিরাট ইতিহাস, আগামীর অনুপ্রেরণা।

আজ ঈদের দিনে স্বাস্থ্য বিধির জন্য, সামাজিক দুরত্বের কারনে আমরা বুকের সাথে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করতে পারব না ঠিকই কিন্তু হৃদয় দিয়ে তো হৃদয় ছুঁতে পারব। নিকট প্রতিবেশী, আত্নীয়, অসহায়, দুস্থ মানুষকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারব। সাধ্যমত সাহায্য সহায়তা করতে পারব অসহায়, দুস্থ মানুষদের। তাহলেই তো ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পরবে সবার মাঝে।

সবাইকে ঈদ মোবারক।

SHARE