ইমরান হোসেন দৈনিক যুগান্তরের অনরাইন ডেস্কের দায়িত্বে রয়েছেন। ভোলায় যতদিন সাংবাদিকতা করেছেন আদর্শ থেকে কেউ বিচ্যুত করতে পারেননি কারনে কিম্বা অকারণে। একজন আদর্শ সাংবাদিক হিসেবেই ইমরানের পরিচিতি ভোলার সংবাদ পাড়ায়। গত কাল ঈদ উল আজহা উপলক্ষে গ্রামের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে এসেছেন। ঢাকা থেকে বোরহানউদ্দিন পর্যন্ত আসতে যে প্রতিকুলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত একটি ফিরিস্তি তুৎে ধরেছেন তার এফবি টাইম লাইনে। ভোলা নিুজের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো…
বিচার পাই না, তাই বিচার চাই না। জানি, কোনো কিছু বলে কোনো ফল হবে না। সব কিছুই চলে প্রশাসনের নাকের ডগায়। তবুও কেউ দেখছে না। যে যার জায়গার এমন দুর্নীতি করছে, মনে হচ্ছে এসব তাদের বাবার সম্পত্তি। কারও কিছু করার নেই। বাস্তবেও তাই হচ্ছে, কেউ প্রতিবাদ করছেও না, আবার যারা করে তাদের টুটি চেপে ধরা হয়। তাই অনিয়মই এখন নিয়ম হয়ে ঝেঁকে বসেছে। তবুও সড়কপথে আসার অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি…
বৃহস্পতিবার বিকালে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়িতে যাব। অনেকবার সড়কপথে মোটরসাইকেলে বাড়ি গেলেও আবহাওয়া বৈরী থাকায় মাইক্রোবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সে ভাবনা থেকে রাজধানীর ৩০০ ফিট হয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে কাঙ্কিত মাইক্রোবাসে উঠলাম। আমার সফরসঙ্গী Rajib Howlader।
যাইহোক রাত ৩টার দিকে মজুচৌধুরীরহাট ফেরিঘাটে আসলাম। ফেরি ঘাটে না থাকায় মাইক্রোবাস থেকে বিদায় নিয়ে লঞ্চ ঘাটে থাকা সিট্রাকে উঠি। ১০ মিনিটের ব্যবধানে ছোট্ট সিট্রাকটির কর্তারা হাজারের বেশি যাক্রী উঠিয়ে ফেলল। আমরা কোথাও জায়গা না পেয়ে ছাদে উঠে পড়লাম। সিট্রাকটিকে ছাড়ার অনুরোধ করলেও তারা অধিক পরিমাণে যাত্রী উঠাচ্ছে। মনে হচ্ছে খাঁচার মধ্যে ঠেসে ঠেসে মুরগী উঠাচ্ছে।
ঘাটে কর্তব্যরত দুইজন এসআই ও কয়েকজন কনেস্টেবল দেখতে পেয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভ হয়নি। তারাই যেন ডেকে ডেকে মানুষ ওঠাচ্ছে।
পরে সঙে থাকা অন্য যাত্রীদের নিয়ে প্রতিবাদ করায় খিজির-৫ নামে সিট্রাকটি ছাড়তে বাধ্য হয়। পুলিশ যে কেন সহযোগিতা করেনি আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি।
টিকিটি কাটতে আসা লোকটির কাছে জানতে চেয়েছি বিআইডব্লিউটিএ টিকিটের বোনো টাকা পাবে কিনা? উত্তরে জানালো, প্রভাবশালী মহল এটি লিজ নিয়েছে।
রাত ৪টার দিকে সিট্রাক ছাড়ে। ভোলা ইলিশা পৌঁছানোর আগে বৃষ্টি হওয়ায় ছাদে থাকা প্রায় সবাইকে ভিজতে হয়েছে। যদিও আসার কাছে কাছে ছাতা ছিল। কিন্তু বাতাসে সেটি ধরে রাখাই প্রায় অসম্ভব ছিল। ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই না থাকায় ছাদের কেউ ঢুকতে পারননি।
অবশেষে ভোলা নামার পর বাসের কাছে গিয়ে শুনি যেখানে নামেন ২০০ টাকা। আর তারা লোকাল যাত্রী নেয় না। ডাইরেক্ট সার্ভিস। এখন ভরসা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সেখানে ভোলা বাসস্ট্যান্ডের ভাড়া জানতে চাইলাম। ব্যস্ততার মধ্যেই চালক জানালো একজন ১৫০টাকা, যাইলে যান আর না যাইলে হাটেন।
তারা বলতে থাকল সামনে আর কোনো পরিবহন নেই।
মাহেন্দ্র ভাড়া করে উঠলাম। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি তারাও লোকাল যাত্রী নেবে না। প্রতিবাদ করে বাসে উঠলেও ছাড়বে এক ঘণ্টা পর তার সঙ্গে ভাড়া দ্বিগুণ। দেরি হবে বলে আবার সিএনজি রিস্কা দ্বিগুণ দামে ভাড়া করে উঠলাম।
ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলাম, গ্যাসে না পেট্রলে চলে, সে জানাল সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে চালাচ্ছে। চোখ কপালে উঠল! যে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে রান্না করি, তারা সেটা দিয়েই সিএনজি অটোরিকশা চালায়! কত বড় মাপের বিজ্ঞানী?
পথে পথে এসব অনিয়ম আর দুর্নীতি একদিনে হয়নি। প্রশাসনের সুদৃষ্টি থাকলে এসব অন্যায় নিমিষেই শেষ করা সম্ভব হত। কিন্তু বাস্তবতা এমন যে, যারা দায়িত্বে থাকেন তারাই এসব প্রশয় দেন!
হারাম উপার্জন এখন উপরের লেভেল থেকে নিচে চলে আসছে, ফলে সাধারণ মানুষও হারাম উপার্জন করছে। যে যেখান থেকে পারছে করছে। হারাম উপার্জন যেমন দেশে মাহামারী ছড়িয়েছে, আর আল্লাহর গজবও (ডেঙ্গু) সারা দেশে ছড়িয়েছে।