ইয়ামিন হোসেনঃ
ভোলা নিউজ-০৪.০
ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সী গ্রামের মৃত ইউছুফ আলী ছেলে মোঃ দরবেশ আলী মিঝির (৮৫) সংসার চলছে করুণ পরিণতিতে কোন রকম জীবন কাটাচ্ছেন কাগজ ও বাঁশের পাতার মিশ্রনে তৈরি করা এক অন্ধাকারাচ্ছন্ন ঘরে।
সর জমিনে গিয়ে দেখা যায়, দরবেশ আলী মিঝি পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গুপ্তমুন্সি গ্রামে বসবাস করছেন স্থানীয় আনছার বয়াতির জমিনে। কোন মতে নড়বড়ে ঘরে কাটছে তার জীবন। সামান্য কিছু জমির মধ্য বাঁশ ও তেরপাল দিয়ে তৈরি করেছেন এক নজরবিহীন ঘর। যে ঘরে নেই একটু টিনের টুকরাও। চারকোণায় চারটি গাছের কিলা তাও খেয়ে ফেলেছে পোকামাকড় উপরে বাঁশের পাতার ছাউনি ও তার সঙ্গে মিশে আছে কিছু পলিথিন ও তেরপাল। যার সাহায্য দাঁড়িয়ে আছে ঘরটি। নেই স্বাস্থ্যসম্মত একটা টয়লেটও। আর এই ঘরেই বসবাস করছে দীর্ঘ বছর ধরে ৫ সন্তানের জনক ও জননী। চার মেয়ে ও এক ছেলের জনক দরবেশ আলী। যার মধ্য ৩ মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন ও এক মেয়ের স্বামী বিয়ের পরই মারা গেছে।
ছেলে একজন সেও বিয়ে করে বউ নিয়ে দূরে কোথাও কাটাচ্ছে জীবন। আর তাদেরই মা ও বাবা থাকেন আনছার বয়াতির জমিনে এক নড়বড়ে ঘর নিয়ে। যে ঘরে বসবাস করছেন দরবেশ আলী ও তার সহধর্মিণী মল্লিকা খাতুন। বৃদ্ধ দরবেশ আলী ২০ বছর ধরে তেমন একটা চোখে দেখেন না ডায়াবেটিস, প্যারালাইসেন্স,উচ্চরক্তচাপ ও বিভিন্ন রোগ সমূহে আক্রান্ত তিনি। উপার্জনের পথ একমাত্র ভিক্ষা। আর সেই ভিক্ষা করেই সামান্য চাল,ডাল পেয়ে থাকেন তার সহধর্মিণী মল্লিকা খাতুন। স্বামী অসুস্থ তাই জীবন বাঁচাতে অসুস্থ স্বামীকে ঘরে রেখে সকাল হলেই ফযরের নামাজ পরে বেড়িয়ে পরেন ভিক্ষার জন্য। সারাদিন ভিক্ষা শেষে সন্ধ্যায় আসেন বাড়িতে। এসে স্বামীকে খাওয়ান খাবার নিজেও খান। তারপরেই ঘুমিয়ে যান পরের দিনের উদ্দেশ্য। আর এই ভাবেই চলছে তাদের জীবন।
শনিবার দুপুরে এই প্রতিবেদক বৃদ্ধা দরবেশ আলীর বাড়ীতে গিয়ে তার সাথে আলাপ কালে জানান,তার জীবনের শেষ আকুতি এই সময় তিনি বলেন বাজান মৃত্যুর আগে বঙ্গবন্ধুর কন্যার দেওয়া একটি ঘরে থাকতে চাই আপনারা একটু ব্যবস্থা করে দিন, বৃষ্টি আসলে অঝরে পানি পরে ঘরে তাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘর দিচ্ছে যদি আমাকে একটা দিতো তাহলে মৃত্যর আগে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।
কি ভাবে চলছে তাদের জীবন? এমন প্রশ্ন করতেই চোখ থেকে অঝড়ে ঝড়তে থাকে পানি। কি বলবে আমাদেরকে কিছুই বলতে পারছেনা মনের আবেগে ও চোখের জলে। তাদের চোখের পানি দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না তার সংসারে পরিনতি
দরবেশ আলীর এক প্রতিবেশি বলেন, আজ প্রায় ২ বছর ধরে এই দুই জন অসহায় বসবাস করছেন এইখানে। এই কথা বলে তিনিও চোখ মুছতে থাকেন আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনিও কিছু বলতে পারছেনা। প্রশ্ন করলাম আপনি তো এই পরিবারের কেউ না আপনি কাঁদছেন কেনো.?
এই কথা বলার পরেই তিনি বলে উঠলেন আমি আর কি বলবো আপনারাই তো দেখতে পাচ্ছেন। আজ এতো বছর ধরে কেউ ই এক নজর দেখতে আসেনি তাদেরকে আজ আপনারা এসেছেন দেখতে এই জন্যই আমার মন কাঁদছে। সমাজের এতো ধনী, বড়লোক মানুষ থাকতে আপনারা এসেছেন এদের খোঁজ নিতে এই জন্যই কাঁদছি আমি। তিনি বলেন, আমি কি বলবো কিছুই বলার নেই শুধু এইটুকু ই বলবো আল্লাহ যদি দয়া করেন এদেরকে। এ কথা বলে থমকিয়ে গেছেন তিনি। তাই পাশে থাকা আরেক প্রতিবেশী শেলিম মালের স্ত্রী নুর নাহারের কাছে জানতে চাইলাম তাদের বিষয়ে এসময় তিনি বলেন, আজ প্রায় ২ বছর আগে এরা এই দুই জন ইলিশা বাজারের কাছে ছিলো। পরে আনছার বয়াতি এদেরকে এনে আশ্রয় দিন তার এই জমিনে। আমি আমার ঘরে ১ মাস রেখেছি এদেরকে। পরে কোন মতে স্থানীয় লোকদের সাহায্য নিয়ে কিছু টাকা তুলে এই তেরপাল কিনে এই ঘরটি তুলে দেওয়া হয়।
আজ ২ বছর এই ঘরে কাটছে তাদের জীবন। বৃষ্টি হলে পানি পরে সমস্ত ঘর ভিজে যায়। আবার রোদ হলে শুকায়। মাঝে মাঝে বেশি ঝড় ও বৃষ্টি হলে আমাদের ঘরে নিয়ে আসি। ঘরের মুরব্বি অসুস্থ তাই ভিক্ষা করেন এই খালা। কোন মতে চলে জীবন। মুরব্বির বয়স হয়েছে খালার ও বয়স হয়েছে একদিন হয়তো এই কষ্টের জীবন ছেড়ে চলে যাবেন কবরে। কখনো ভালো একটা খাবার খেতে পারেন না। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে খাবার এনে তা স্বামীকে খাওয়ান কখনো কখনো সেই খাবার পঁচে ও যায় তাও তা খেয়ে বেঁচে থাকেন।
এই বিষয়ে এই প্রতিবেদক ২নং ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাছনাঈন আহমেদ হাছান মিয়া কে জানালে তিনি প্রতিবেদকের কাছে পরিবারটির এই করুন পরিনতি শুনে ভিডিও কলে দেখতে চায় পরে ভিডিও কলে ঘর ও বৃদ্ধর কথা শুনেন এবং অতিদ্রুত তিনি এই পরিবারটির জন্য ঘর ও ভাতা কার্ডের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।