অনলাইন ডেস্ক:
ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টকে ‘কয় টাকার চাকরি করিস’ বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া সেই নারী কোনো সংসদ সদস্যের মেয়ে নন। আর তিনি শৈশব থেকেই মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত।
দুই দিন ধরে এই নারীর ধারণ করা ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তুমুল আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে। ওই ভিডিওতে তিনি যে ভঙ্গিতে কথা বলছিলেন তাতেই তিনি স্বাভাবিক, সুস্থ মানুষ কি না, সেটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। পরে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান অসুস্থতার কথা।
ওই নারীর নাম ফারজানা ইয়াসমিন। তাদের বাড়ি ঢাকার দোহার থানায়। তার একজন স্বজন জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত। প্রায়ই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান।
এই ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছেন ওই নারীর বাবা আবদুল বাতেনও। পরে তিনি তার মেয়েকে নিয়ে ওই সার্জেন্টের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে এসেছে বলেও জানান ওই স্বজন।
ওই স্বজন বলেন, আমরা এই ভিডিও দেখে খুবই লজ্জিত। সেই সার্জেন্টের এটা বোঝা উচিত ছিল সে কিছুটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। তাছাড়া সেখানে একটি শিশু রয়েছে। এখানে তারও সম্মানহানির বিষয় আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে এই সংবেদনশীলতা থাকা উচিত ছিল।
মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর ১৩ নম্বর স্কলাস্টিকা স্কুলের সামনে একটি গাড়িতে বসা ওই নারীর ৪৭ সেকেন্ডের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন সার্জেন্ট ঝোটন সিকদার। পরে তা তিনি ফেসবুকে ছেড়ে দেন।
সার্জেন্ট ঝোটন ওই নারীকে তার গাড়ি সরিয়ে নিতে অনুরোধ করেন। আর এ সময় তিনি ওই গাড়ির ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। ভেতরে থাকা ফারজানা ইয়াসমিন এতে বিরক্ত হন এবং বলতে থাকেন, ‘এই, কার গাড়ির ছবি তোলো? এটা সরকারি দলের লোকের গাড়ি। কার গাড়ির ছবি তোলো?’
‘তোমার মতো সার্জেন্ট কয় টাকা বেতনে চাকরি করে? কয় টাকা বেতনে চাকরি করে তোমার মতো সার্জেন্ট? আমরা প্রধানমন্ত্রীর লোক, ঠিক আছে?’
‘আমার বাবা জাতীয় কমিটির সদস্য, আমার বাবা এমপি, ঠিক আছে? কয় টাকা বেতনে চাকরি করো?’
তবে ফারজানা ইয়াসমিন নিজেকে সাংসদ-কন্যা হিসেবে পরিচয় দিলেও দশম জাতীয় সংসদ সদস্যদের তালিকায় তার বাবা আবদুল বাতেনের নাম নেই।
ফারজানার মেট্রো গ-২৬-৯৩৪৭ নম্বরের গাড়ির বিরুদ্ধে অবৈধ পার্কিংসহ তিন ধারায় তিনটি মামলা করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের উপকমিশনার লিটন কুমার রায় তিনি বলেন, ‘ফারজানা ইয়াসমিনের প্রকৃত পরিচয়ের ব্যাপারে আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তিনি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন বিধায় তার গাড়ির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে। তার পরিচয় সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারলে সেটা পরে দেখা যাবে।’
ঘটনার কারণে ওপর থেকে কোনো চাপ বা ফোন কল এসেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, আমার কাছে এমন কোনো কল বা কারও কোনো চাপ আসেননি। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।’
ফারজানা ইয়াসমিন কিছুদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সারা দেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৬সেপ্টেম্ববর-২০১৮ইং)