অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
যুদ্ধ জাহাজের মতো এখন দেশেই আকাশ পথে চলাচলের জন্য উড়োযান হেলিকপ্টার ও বিমান তৈরি করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর জায়গা হিসেবে তিনি পছন্দ করেছেন লালমনিরহাট জেলাকে।
এই জেলায় অলস পড়ে থাকা এয়ার স্ট্রিপে একটি অ্যারোনেটিকাল সেন্টার তৈরির জন্য বিমানবাহিনীর সঙ্গে কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাহিনীর প্রধানকে তিনি বলেছেন একটি পরিকল্পনা করতে।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের বিমান ও হেলিকপ্টারগুলো এখানে মেরামত ও ওভারহোলিংয়ের কাজ করা হবে এবং পরে সেখানে এসব আকাশযান তৈরির উদ্যোগও নেয়া হবে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জেলা প্রশাসন সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে এই পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা তার সরকারের নেয়া নানা প্রকল্প এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে জেলা প্রশাসকদের নানা পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা দেন। এই প্রসঙ্গে উঠে আসে অ্যারেনেটিকাল সেন্টার তৈরির উদ্যোগের বিষয়টি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লালমনিরহাটে একটা এয়ার স্ট্রিপ আছে। বিশাল জায়গা পড়ে আছে। আমি আমাদের বিমানবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমরা একটি অ্যারোনেটিকাল সেন্টার ঢাকায় করেছি। আর সেখানে আমরা করতে চাই।’
‘যেখানে আমরা আমাদের প্লেন বা আমাদের হেলিকপ্টার ওভারহোলিং করতে হয়, সেখানে আমরা এই ধরনের একটি অ্যারারোনেটিক্যাল সেন্টার গড়ে তুলব, যেন ভবিষ্যতে সেখানে আমরা নিজেরাই হেলিকপ্টার তৈরি করতে পারব, প্লেনও তৈরি করতে পারব।’
‘আমরা কেন পারব না? আমরা এখন নিজেরা যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করছি। খুলনা শিপইয়ার্ডে। যেটা এক সময় একেবারে বসে গিয়েছিল, শেষ হয়ে গিয়েছিল।’
‘বিমানবাহিনীর প্রধানকে বলেছি একটা প্ল্যান করতে, সেটা কেবল বাংলাদেশের নয়, আশপাশের দেশের বিমানবাহিনীর বিমান বা হেলিকপ্টার আমার ওভারহোলিং করব, মেরামত করব।’
চার রুটে বুলেট ট্রেন
গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেয়া সংবর্ধনার মতো আজও প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত ও আধুনিক করতে বুলেট ট্রেন চালুর কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেন এক ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারি, ঢাকা থেকে দিনাজপুর যেন দুই ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারি, ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত, অর্থাৎ পায়রা বন্দর পর্যন্ত যেন রেলে পৌঁছাতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী সিলেটের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে একজন দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সে কথাও উল্লেখ করেন। আর রসিকতা করে বলেন, ‘সিলেটের কথা ভুলি নাই মনে আছে। সিলেটের কথা ভুললে অর্থমন্ত্রী তো পয়সাই দেবেন না।’
‘এক ঘণ্টায়, ৪০ মিনিটে বা ৫০ মিনিটে পৌঁছে যাবে, সেভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা উন্নত করতে চাই।’
‘সিলেট এয়ারপোর্টটাকে উন্নত করতে চাই। সৈয়দপুরটাকে আমরা আঞ্চলিক এয়ারপোর্ট হিসেব উন্নত করব।’
দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর হবে
পটুয়াখালীর পায়রায় নতুন সমুদ্র বন্দর করার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোনাদিয়া ও মহেশখালীতে যেমন গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠবে, তেমনি আমাদের পায়রাবন্দরটাকেও গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’
উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে শহর তৈরির ঘোষণা
বেশ কিছুদিন ধরেই নানা কর্মসূচিতে প্রধানমন্ত্রী গ্রামে শহরের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলে আসছেন। জেলা প্রশাসকদেরকেও সেই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
‘জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পরিকল্পিত শহর গড়ে তুলতে চাই। তার জন্য মাস্টার প্ল্যান করা একান্তভাবে দরকার।’
‘কারণ, কৃষিজমি, বনায়ন সেগুলো যেমন সংরক্ষণ করতে হবে। তেমনি শিল্পায়ন আর বিনোদন, মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা নিয়ে যেন তারা জীবনযাপন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।’
‘আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, প্রতিটি গ্রামই যেন শহর হিসেবে গড়ে উঠে। গ্রামের মানুষও যেন সমানভাবে নাগরিক সুবিধা পায়। তাহলে মানুষ আর শহরমুখী হবে না। তার নিজের এলাকায় বসেই সব রকমের সুবিধা পাবে।’
আর এই নতুন শহর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এখন থেকেই গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে শেখ হাসিনা। বলেন, ‘ঢাকায় শুরুতে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে আমরা এখন সমস্যায় পড়ে গেছি। কিন্তু আমরা এখন থেকে যদি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যেহেতু আমরা শিল্প, বহুতল ভবন, অফিস আদালত গড়ে তুলব, এখন থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থাটা আপনাদের নিতে হবে।’
‘এখন করা যাবে, জায়গা পাওয়া যাবে। তাহলে এটা নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো দুশ্চিন্তা করতে হবে না।’
তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি চাকুরেদের আবাসনের সুযোগ
উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব সরকারি কর্মচারী আছেন, তাদের আবাসন সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকদের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বলেন, ‘আমি একটা মেয়ে ডাক্তারকে পাঠালাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা উপজেলা হাসপাতালে পাঠালাম। কিন্তু তার সেখানে বাড়িভাড়া করে থাকার সুবিধা হয় না। ছেলেরা যেখানে সেখানে এক জায়গায় ব্যবস্থা করে থাকতে পারে। কিন্তু মেয়েরা তা পারে না।’
‘প্রত্যেকটা উপজেলায় আমরা যদি মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং করে দিয়ে সেখানে আমরা তাদের আবাসন ব্যবস্থাটা করে দেই… আর কর্মজীবী মেয়েদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা করে দেয়া…’।
এগুলো শহর থেকে একটু দূরে করার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তাহলে সেসব এলাকাতেও মিনি শহর গড়ে উঠবে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৪জুলাই-২০১৮ই)