ডেস্ক: অনলাইন-ভোলানিউজ.ক,
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে, বিশেষ করে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলার ঘটনায় কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভাঙচুরের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সবাইকে খুঁজে বের করা হচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কেউই পার পাবে না।
শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের ঘোষণার সমালোচনা করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নূন্যতম টাকায় পড়াশোনা করার সুবিধার বিষয়টিু তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, কোটা নিয়ে কমিটি কাজ করছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা যাবে না। কারণ, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে। আর এটি অগ্রাহ্য করলে তা হবে আদালত অবমাননা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে চলতি বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
গত ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে ব্যাপক হামলা হয়। হামলাকারীরা লুটপাটের পাশাপাশি উপাচার্য আখতারুজ্জামানকে হত্যা চেষ্টারও অভিযোগ উঠে।
এই হামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা ভেবেছে ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছে, ফুটেজ নিয়ে গেছে, কিছু পাওয়া যাবে না। কিন্তু তারা এটা জানে না যে আশেপাশের বিভিন্ন ভবনেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ক্যামেরায় অনেকের চেহারা দেখা গেছে। তাদের সবাইকে খুঁজে খুঁজে ধরা হচ্ছে।’
‘মোটামোটিভাবে যেখানেই যারা থাকবে, অবশ্যই তাদের ছাড়া হবে না, সে যতই আন্দোলন হোক। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। কারণ, এরা লেখাপড়া শিখতে আসেনি।’
সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারির দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলনকারীরা আবার মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত ২৭ জুন কোটা আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতা রাশেদ খান তার ‘রক্ত গরম হয়ে যাওয়ার পর’ আবার রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়ে ভিডিওবার্তা দেন। সেখানে তাদের সঙ্গে ‘প্রতারণা করা হয়েছে’, ‘মনে হয় তার বাপের দেশ’ এই জাতীয় বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেন তিনি।
এরপর ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের নেতাদের ওপর হামলা হয়। তার পরদিন গ্রেপ্তার হন রাশেদ। তারও পরদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পেটানো হয় আন্দোলনে সম্পৃক্তদেরকে, হাতুড়িপেটায় পা ভেঙে যায় একজনের।
এর আগে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবিটি সহানুভূতি নিয়ে দেখার কথা অনুরোধ করেন।
আর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনে হামলার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খলা কখনও বরদাশত করা যায় না। ভাঙচুরকারীরা ভিসির বাড়ির ক্যামেরার চিপস নিয়ে গেলেও আশেপাশে থাকা ক্যামেরা দেখে তাদের একটা একটা করে খুঁজে বের করা হচ্ছে।’
‘যারা ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ ও আক্রমণ করেছে, তাদের তো ছাড়া হবে না। তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তদন্ত করা হচ্ছে। অনেকে স্বীকারও করছে। যত আন্দোলনই হোক না কেন, এদের ছাড়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে।’
‘আজকে আন্দোলন তারা করছে খুব ভালো কথা। বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, ছেলেপুলে আন্দোলন করতেই পারে। কিন্তু ভিসির বাড়িতে আক্রমণ করে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া, গাড়িতে আগুন দিয়ে পোড়ানো, বাড়ি ভাঙচুর করা, বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা, স্টিলের আলমারি ভেঙে গহনা, টাকাপয়সা সব কিছু লুটপাট করেছে। ভিসির পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। এটা কি কোনও শিক্ষার্থীর কাজ? এটা কি কোনও শিক্ষার্থী করতে পারে?’
আন্দোলনকারীদের ক্লাস বর্জনের আহ্বানের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কথায় কথায় বলে ক্লাস করবে না। ক্লাসে তালা দেয়, ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে? আমরা সেশনজট দূর করেছি। এদের কারণে এখন আবারও সেই সেশনজট। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টাকা খাবার, কোথায় আছে পৃথিবীর?’
‘আজ নতুন নতুন হল বানিয়েছি। ১৫ টাকা সিট ভাড়া আর ৩৮ টায় খাবার খেয়ে তারা লাফালাফি করে। তাহলে সিটভাড়া আর খাবারে বাজারদর যা রয়েছে, তাদের তা দিতে হবে। সেটা তারা দিক।’
‘তারা হলের গেট ভেঙে ফেলে দেবে। মধ্যরাতে হল থেকে ছাত্রীরা বেরিয়ে যাবে। আমার টেনশনে আমি বাঁচি না। আমি পুলিশকে, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বলেছি- এই মেয়েদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়। ভোর ছয়টা পর্যন্ত জেগে থেকে যার যার হলে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি ঘুমাতে গিয়েছি।’
‘অল্প পয়সায়, এত কম পয়সায় পৃথিবীতে কখনও কেউ উচ্চশিক্ষা কোনো দেশেই পায় না। এমনকি বাংলাদেশেও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যাক না, কয় টাকায় পড়াশোনা করবে। তার পরেও আমরা সুযোগ দিচ্ছি।’
‘কীভাবে শিক্ষা দেব, সে নীতিমালা তো সরকার দেবে। এটা আমাদের দেখার বিষয়। তাদের বিষয় পড়াশোনা। আর চাকরির সুযোগ তো আমরা দিচ্ছি।’
বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ বেকার সমস্যার বিষয়টি তুলে ধরে প্রায় পৌনে তিন লাখ সরকারি পদ খালির বিষয়টি তুলে ধরেন। এসব পদ শূন্য কেন সে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ছাত্ররা চাকরি না পেলে আন্দোলন করবেই।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী ঠিকই বলেছেন, অনেক জায়গায় চাকরি এখনও খালি পড়ে আছে। যেখানে যেখানে খালি আছে, সেখানে কিন্তু ইতিমধ্যে…পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অনেক শক্তিশালী করা হয়েছে। পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এবং চাকরি ঠিকই দেয়া হচ্ছে। এখানে কেউ বাদ যাচ্ছে না কিন্তু। যারা পরীক্ষা দিচ্ছে, পাস করছে, ভাইভায় টিকে যাচ্ছে, তারা কোনো না কোনোভাবে চাকরি পেয়ে যাচ্ছে, চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
‘এখন কেউ ফেইল করলে, আমি তো তাকে পাস করিয়ে দিতে পারব না, এটা হচ্ছে বাস্তব।
‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হলে আদালত অবমাননা হবে’
কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১১ এপ্রিলে আন্দোলনের মুখে ১১ তারিখ সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোটা থাকবে না। এরপর ২ মে সংবাদ সম্মেলন আর ২৭ জুন সংসদে দেয়া বক্তব্যে একই কথা বলেন তিনি।
সরকারি চাকরিতে যে ৫৬ শতাংশ কোটা রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। তাদের জন্য সংরক্ষিত আছে ৩০ শতাংশ চাকরি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই কোটার সুবিধা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের দেয় আর পরে নাতি নাতনিদেরকেও এর আওতায় আনা হয়।
আর সে সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের অনুসারীরা আন্দোলনে নামে এই কোটা বাতিলের দাবি তুলে। তবে চলতি বছর বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলনে নামে কোটা সংস্কারের কথা তুলে। কোনো কোটার নাম না তুলে তারা সব মিলিয়ে কোটা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানায়।
গত ২ জুলাই কোটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর এর মধ্যে ১১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলন করে জানান, মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে আদালতের আদেশ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তব্যে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এই কোটা বাতিল হলে তিনি আদালত অবমাননায় পড়বেন।
অবশ্য কোটা থাকবে না বলে তার দেয়া আগের বক্তব্যও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি কাজ করছে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১২জুলাই-২০১৮ইং)