বিশেষ প্রতিনিধি-ভোলানিউজ.কম,
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ কি না, এ নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে সংশয় আছে বলে মনে করেন তোফায়েল আহমদ। বলেন, অসুস্থ হলে কেউ হাসপাতাল পছন্দ নিয়ে সময় নষ্ট করতে পারেন না।
ঈদের ছুটি শেষে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল এমনকি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল নয়, খালেদা জিয়া জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতাল ইউনাইটেড ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসালয়ে যাবেন না তিনি।
আর এই মনোভাবের সমালোচনা করে তোফায়েল প্রশ্ন তোলেন আসলেই খালেদা জিয়া অসুস্থ কি না। তিনি বলেন, ‘সরকার তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে তিনি যখন যান না। তখন অনেকে মনে করেন তিনি (খালেদা জিয়া) অসুস্থ নন। কোন অসুস্থ লোক হাসপাতাল পছন্দ নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে পারে না।’
গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে যাওয়া খালেদা জিয়া আগে থেকেই বেশ কিছু রোগে ভুগছেন। গত ২৮ মার্চ তার অসুস্থতার খবর ছড়ায়। এরপর বিএনপি প্রথমে তাদের নেত্রীকে বিদেশে নেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক গুঞ্জন শুরু হলে অবস্থান পাল্টে ইউনাইটেডে নেয়ার দাবি তোলে দলটি।
এর মধ্যে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়। আর তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা মত দেন, হাসপাতালে ভর্তির মতো কিছু হয়নি খালেদা জিয়ার।
গত ৯ জুন কারাগারে বিএনপি প্রধানের সঙ্গে দেখা করে এতে সার চারজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক দাবি করেন, ৫ জুন পড়ে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং সে স্মৃতি মনে নেই তার। এ থেকে তাদের ধারণা খালেদা জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোক করেছিল।
এই চিকিৎসকরাই আবার গত ২৮ এপ্রিল বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। একজন সেদিন বলেন, কারাগারে থাকলে খালেদা জিয়া প্যারারাইজড হয়ে যেতে পারেন, একজন বলেন, বিএনপি নেত্রী অন্ধ হয়ে যেতে পারেন, একজন বলেন তার প্রস্রাব-পায়খানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
১০ জুন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে আনার উদ্যোগ নেয় কারা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি এই হাসপাতালে আসবেন না জানানোর পর ১২ জুন তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এতেও রাজি নন বিএনপি প্রধান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সামলোচনা করে তোফায়েল বলেন, ‘আপনারা নির্বাচনে আর্মি চান। অথচ আর্মির হাসপতালে যেতে চান না, এটা কেন? যার সিএমএইচ এর প্রতি আস্থা নেই তার দল নির্বাচনে আর্মি চায় কীভাবে?’
কেন বিএনপি বারবার কেবল ইউনাইটেডের কথা বলছে, সেটিও বুঝতে পারছেন না তোফায়েল। বলেন, ‘পারটিকুলার একটি হাসপাতাল বলেন কেন? সেই হাসপাতালের চেয়ে বড় হাসপাতাল তো আরও আছে। স্কয়ার আছে, ল্যাবএইড আছে।’
‘আন্দোলনের সামর্থ্য বিএনপির নেই’
ঈদের পর ‘সর্বাত্মক’ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের হুমকির বিষয়েও কথা বলেন তোফায়েল। বলেন, ‘মওদূদ আহমদের কথা অনুযায়ী এ সরকারকে বড় আন্দোলন ছাড়া হটানো যাবে না। আমি মনে করি সেই আন্দোলনের সামর্থ্য বিএনপির নেই। এটা পরিষ্কার।’
‘আর আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নেওয়ার সুযোগ বিএনপিকে দেওয়া হবে না। সুতারাং তাদের আন্দোলন বিগত সময়ের মতোই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’
‘তারা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে তা কোনোদিন বাস্তবায়ন হবে না। আর সহায়ক সরকারের কোন সুযোগ সংবিধানে নেই।’
ঈদে তার এলাকায় বিএনপি নেতাদের কোনো তৎপরতা ছিল না জানিয়ে অবাক হওয়ার কথাও বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমি গ্রামে গেলাম। কিন্তু অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের দেখলাম না। আমি অবাকই হলাম। সারাদেশে একই অবস্থা কি না সেটা আমি বলতে পারব না।’
বিএনপি তো অভিযোগ করে তাদেরকে এলাকায় যেতে দেয়া হয় না-এমন প্রশ্নে তোফায়েল বলেন, ‘আমার এলাকায় সম্প্রীতি আছে। জেলা প্রশাসনের ইফতারে বিএনপি নেতারাও যায়। সুতরাং সেখানে তো কোনো বাধা দেয়ার খবর নেই।’
বিএনপির আন্দোলনে নামার অধিকার আছে জানিয় জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিক বলেন, সেই আন্দোলন ২০১৩ সালের মতো জ্বালাও পোড়াও, পুলিশ হত্যা, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হত্যার মতো হলে তাতে লাভ হবে না।
‘যদি তারা এমন আন্দোলনের চেষ্টা করে তাদের ইতিহাসে আরেকটা ভুল যোগ হবে। কারণ, সেই সময় আন্দোলনের নামে এমন অপকর্ম করে তাদের লাভ হয়নি। বরং আজ তারা ক্ষতিগ্রস্ত। আজ বিএনপির এমন নাজুক পরিস্থিতির জন্য দায়ী ২০১৪ সালে নির্বাচনে তাদের অংশ না নেওয়া।’
নিত্যপণ্যের ‘কম দামে’ দেশবাসী খুশি
এবার রোজা এবং ঈদে নিত্যপণ্যের দাম কম ছিল বলেও দাবি করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমাদের কথা দিয়েছিল। তারা কথা রেখেছে। দাম এবারের রমজানে স্বাভাবিক ছিল।’
‘পেঁয়াজ ও চিনির দাম নিয়ে শঙ্কা ছিল কিন্তু পেঁয়াজের দাম সর্বনিম্ন ছিল। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়েছি। একটা কথা সব জায়গায় একটা প্রশ্ন করেছি। ভোগ্য পণ্যের দাম কমেছে কি না। তারা সবাই বলেছে কমেছে।’
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১৮জুন-২০১৮ইং)