ইসলাম |
অনলাইন ডেস্ক।।
শাবান মাস শেষের পথে। এর পরই পবিত্র মাস মাহে রমজান। এই শাবান মাস থেকেই নিতে হবে রমজানের প্রস্তুতি। রসুল (সা.) এ মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতেন ও রোজা রাখতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, “আল্লাহর রসুল (সা.) এমনভাবে সিয়াম পালন করতেন যে, আমরা বলতাম তিনি মনে হয় আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না। আমি রসুল (সা.)-কে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি” (বুখারি)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসুল (সা.) শাবান মাসের তারিখ এতটাই মনে রাখতেন যে, যতটা অন্য মাসের তারিখ মনে রাখতেন না। শাবানের ২৯ তারিখে চাঁদ দেখা গেলে পর দিন রমজানের রোজা রাখতেন। আর সে দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে শাবান ৩০ দিন পূর্ণ করে রমজানের রোজা শুরু করতেন” (আবু দাউদ)। শাবান মাসকে বলা হয় কোরআন তেলাওয়াতকারীদের মাস। শাবান মাস শুরু হলে আমর ইবনে কায়েস তার দোকান বন্ধ রাখতেন এবং কোরআন তেলাওয়াতের জন্য অবসর নিতেন। রজব মাস হলো বীজ বপনের মাস আর শাবান মাস হলো খেতে সেচ প্রদানের মাস এবং রমজান হলো ফসল তোলার মাস। সুতরাং শাবান মাসেই আমাদের রমজানের জন্য পুরোদমে তৈরি হতে হবে। রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখা ছাড়াও রসুল (সা.) শাবান মাসে নফল রোজা রাখতেন। এবং এই শাবান মাসে রোজা রাখাকে তিনি অনেক বেশি ফজিলত হিসেবে মনে করতেন। ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, “হে আল্লাহর রসুল, কোন রোজার ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, রমজানের সম্মানে শাবান মাসে আদায়কৃত রোজার ফজিলত বেশি। আবার জানতে চাওয়া হলো, কোন দানের ফজিলত বেশি? উত্তরে তিনি বললেন, রমজান মাসে কৃত দানের ফজিলত বেশি” (বায়হাকি)।
হাদিসে এসেছে, রসুল (সা.) শাবান মাসে যত রোজা রেখেছেন তা অন্য মাসে এত রোজা রাখেননি। শাবান মাসটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস। রমজান মাসকে সামনে রেখে মানুষ এই মাসের প্রতি উদাসীন থাকে। অথচ এই মাসের নেক আমল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। রসুল (সা.) শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে এত অধিক হারে নফল রোজা আদায় করতেন না (বুখারি)। রমজানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা জরুরি। সংযত কথাবার্তা, পরোপকারী হওয়া, ব্যবহারিক কাজ-কর্মে পরিবর্তন আনা জরুরি। পরনিন্দা, পরচর্চা ও অন্য আজেবাজে কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বেশি বেশি দান সাদাকা করা রমজান মাসে উত্তম। নিজের খারাপ ও বাজে বদ-অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করে তা বর্জন করা উচিত। রমজান মাস পাওয়া একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। যেহেতু রমজান মাস কল্যাণ ও নিজেকে সংশোধন করার মাস, সেজন্য এই মাসে যত বদ-অভ্যাস পরিবর্তন করা যায়, ততই মঙ্গল। রমজানে আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেন আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখেন। রমজান মাসে একজন মুসলমান দিনে রোজা রাখবে আর বেশি বেশি করে নফল ইবাদত করবে। আল্লাহর দরবারে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিনয়াবনত হয়ে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য ও মুসলিম জাতির জন্য কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করবে। আল্লাহ যেন তার নেক আমলগুলো কবুল করে নেন এবং তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন। রমজান আসার আগেই আমাদের উচিত, আল্লাহর দরবারে তওবা করে ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘আর হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর, যাতে করে সফলকাম হতে পার’ (সুরা আন নূর-৩১)। সুতরাং রমজানকে সামনে রেখে আমরা এই শাবান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত ও নফল রোজা রাখতে সচেষ্ট হই এবং রমজানে সুস্থ থেকে ফরজ রোখা রাখার তৌফিক অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের রোজা রাখার তৌফিক দান করুন।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান