অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,
শুক্রবার ভারত-বাংলাদেশের মানুষের নজরে থাকবে বিশ্বভারতী। এদিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ দেবেন বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে।
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বিশ্বভারতীর আচার্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও।
তবে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়াই নয়, আসল নজর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ঘিরে। বৈঠকে অসমাপ্ত তিস্তা চুক্তিসহ একাধিক বিষয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার কথা হতে পারে।
যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের উদ্দেশ্য তিস্তা চুক্তি নয়, তারপরও দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরে এ নিয়ে কথা হতেই পারে, সেই বিষয়টি দুই দেশের প্রভাবশালী গণমাধ্যমেই এসেছে।
সফরে তিস্তার জটের পাশাপাশি মোদি-হাসিনার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন, সীমান্তে জঙ্গি অনুপ্রবেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকবেন কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি।
তিস্তার সমপরিমাণ জলের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে তিস্তা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার ৪২.৫ শতাংশ জল পাবে ভারত, বাকি ৩৭.৫ শতাশ জল পাবে বাংলাদেশ।
কিন্তু তিস্তার জল ভাগাভাগি নিয়ে এখনও নারাজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তার আপত্তিতে ঝুলে রয়েছে চুক্তির ভবিষ্যৎ। তিস্তার পরিবর্তে তোর্সার জল ভাগ করার প্রস্তাব দেন মমতা।
দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনাতে যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হবে, তার আঁচ পাওয়া গেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলে। তাদের মতে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন মানেই, দুই দেশের একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবেই।
দিল্লির একটি সূত্র মারফৎ জানা গেছে, প্রায় ৪৫ মিনিটের মতো বৈঠক হতে পারে দুজনের।
শেখ হাসিনা সরকারের কাছে তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন করা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামনেই বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের মুখে তিস্তা জলবণ্টনের মতো দীর্ঘদিনের বকেয়া ইস্যু সমাধান না করলে অস্বস্তিতে পড়বে শেখ হাসিনার দল। এই বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের খোলাখুলিই বলেছেন। গত এপ্রিলে ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছেও এই কথা বলে এসেছেন তিনি।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শিবাজীপ্রতিম বসুর মতে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই তার সরকারকে চাপে রেখেছে। ভারত থেকে হাসিনা কী পেয়েছেন, সে নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন তারা।
‘আবার আগামী বছরের লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রাখলে মমতা এবং মোদি, দুজনের পক্ষেই এটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। মমতা বেশি জল দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হলে সে বিষয়টি তার বিরুদ্ধেই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করবে বিরোধীরা।’
শানিতনিকেতনে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উপস্থিতির সম্ভাবনা না থাকলেও চুরুলিয়ায় কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালের সমাবর্তনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা হবে শেখ হাসিনার। শনিবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ডিলিট সম্মানে ভূষিত করা হবে।
শুক্রবার শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানানোর বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা। তার উপস্থিতিতে দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান ও রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করার কথাও রয়েছে।
সংগীত ভবনের প্রায় ৩০ জন ছাত্র এই মুহূর্তে মিউজিক্যাল পারফরম্যান্স নিয়ে ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনের দিন শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হবে এই বিশেষ অনুষ্ঠান।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন বলছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বরণে গোটা শান্তিনিকেতন প্রস্তুত।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৪ মে-২০১৮ইং)