বনানীতে সরকার দলের হামলায় সেলিমা-আলাল-শামা-তাবিথ আহত।।

ডেস্ক রিপোর্ট।।

রাজধানীর বনানীতে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচিতে হামলা করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৮টায় শেরাটন হোটেলের সামনে এই হামলা হয়। এ সময় ইট–পাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠির আঘাতে তাবিথ আউয়াল, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাবিথ আউয়ালকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়ছে। খবর বাপসা নিউজ। একই কর্মসূচিতে আহত হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়ালসহ দলটির অন্তত ২০ নেতাকর্মী। গুরুতর আহত তাবিথকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বরকত উল্লাহ বুলু তাঁর নোয়াখালীর গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বিকেলে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিপুলাসার বাজারের একটি হোটেলে যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাঁর ওপর অতর্কিতে হামলা চালান। এতে বুলুর শরীর রক্তাক্ত হয়। তাঁর স্ত্রী শামীমা বরকত লাকী ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি শরীফ হোসেনসহ অন্তত আট নেতাকর্মী হামলায় আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা এ সময় বুলুর ব্যবহৃত গাড়িটিও ভাঙচুর করে।এদিকে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে দলের তিন কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত মোমবাতি প্রজ্বালন ও মৌন অবস্থান কর্মসূচিতেও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা হামলা করেন।কুমিল্লায় হামলায় আহত বরকতউল্লাহ বুলু।ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বনানীর কাকলী থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বনানীর নির্ধারিত স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা আসার আগেই পুরো এলাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দখল করে নেন। এ পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭টার দিকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর একপাশে মোমবাতি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান বিএনপির নেতাকর্মীরা। তখন রাস্তার উল্টো দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য শেষ করার আগেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।হামলার শুরুতে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রথমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে আওয়ামী লীগের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে একযোগে হামলা করলে সবাই বনানী কে-ব্লকের ২৬ নম্বর রোড দিয়ে সরে যান। এ ঘটনায় ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে সেলিমা রহমান ও মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল রয়েছেন। শামা ওবায়েদ পিঠে আঘাত পান। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
হামলার একপর্যায়ে তাবিথ আউয়াল একটি বাড়িতে ঢুকে পড়লে সেখানে গিয়েও তাঁর ওপর হামলা করা হয়। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বনানীতে হামলায় ছাত্রদল-যুবদলের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক রুনা লায়লা, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক আকরাম হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার আগে প্রায় দেড় ঘণ্টা কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর তিন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মহড়া দিতে থাকেন। এ সময় তাঁদের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে মিছিল করতে দেখা যায়। এর আগে সাড়ে ৭টার দিকে দুটি মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার উদ্দেশ্যে তেড়ে যান। সে সময় পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশ ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ কাদের খান, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন, বনানী থানা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।অন্যদিকে, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আরেকটি মিছিল বনানী কাঁচাবাজারের পাশে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেয়। বিএনপির কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে তাঁরা একযোগে হামলা করেন বলে অভিযোগ বিএনপির নেতাকর্মীদের।বিএনপির কর্মসূচিতে হামলার ঘটনাকে মিথ্যাচার দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা কাদের খান বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে দেখি, বিএনপি কর্মসূচি পালন করছে। এ সময় আমাদের মিছিল বিএনপির কর্মসূচি থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলে যায়। এরপর জানতে পারি, বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা হয়েছে।’বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, ‘দুই দলেরই আলাদা কর্মসূচি ছিল। তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি শেষ করার পর পুলিশ ফিরে আসে। এরপর কারা, কী করেছে- আমরা জানি না। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর নাকি হঠাৎ হুড়োহুড়ি-দৌড়াদৌড়ি হয়েছে; পরে তো চলে গেছে।’এর আগে সেখানে বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে হলে রাস্তায় ফয়সালা করতে হবে। সে লক্ষ্যে বিএনপি আন্দোলন করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ এ আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু কোনো বাধা এ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে রুখতে পারেনি।এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বনানীর কাকলী মোড়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা বাংলাদেশ ইউএই মৈত্রী কমপ্লেক্সের সামনে জড়ো হয়ে মিছিল করতে থাকে। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ কাদের খান, বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জসিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন ও বনানী থানা কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মাসুদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত হন।এ সময় ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE