শেখ হাসিনাই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন

অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,

সেদিন আমাকে একজন জিজ্ঞেস করলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন? আমি হেসে দিলাম। সেটা আমি কীভাবে বলব? চেনেন কি না, শেখ হাসিনাই ভালো বলতে পারবেন। চিনতে পারেন, যেহেতু আমি তাঁর প্রেস উইং এ টানা তিন বছর সুনামের সাথে কাজ করেছি। আবার নাও চিনতে পারেন, এত বড় মানুষ, এত ব্যস্ত মানুষ, আমার মত সাধারণ মানুষকে উনি কেন চিনবেন। কত স্মৃতি আছে উনার সাথে আমার!

গ্রামের বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকেই আমাকে বলেছে, তুমি হইলা একটা ‘গাছ বেকুব’! প্রধানমন্ত্রীর দফতর ছেড়ে কেউ শিক্ষক হয়? এর উত্তরে কী বলা যায়, আপনারাই বলেন। আজ যখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট১ উৎক্ষেপণের গর্বে গর্বিত জাতি, তখন প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে খুব মিস করছি। খুব কাছ থেকে আমি উনাকে দেখেছি, খুব সতর্ক এবং বিস্ময়পূর্ণ সে দেখা। আপনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি শেখ হাসিনারও। কিন্তু এ কথা আপনাকে স্বীকার করতেই হবে যে, শেখ হাসিনার মত সফল নেতা বর্তমান বাংলাদেশে আর কেউ নেই। অনেক দিন থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয়, বিশ্বাসযোগ্য, দূরদর্শী, দেশপ্রেমিক ও সৎ নেতার নাম শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে সৌদি আরবে উমরাহ হজের সময় সকালে তাওয়াফ শুরুর আগে আমাকে মক্কা প্যালেসের সামনে বললেন, ‘তোমার বয়স এত কম, সাবধানে থেকোমহান আল্লাহর ঘরকে কেন্দ্র করে সবাই ঘুরছে। পবিত্র পাথরখণ্ডে চুমু খাওয়ার জন্য সবাই ধাক্কাধাক্কি করছে। নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা আমাদেরকে ঘিরে রাখলেও সফর সঙ্গীদের মধ্যেও একটা প্রতিযোগিতা ছিল। এক নারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে সুযোগ দিতে গিয়ে আমার সেই পবিত্রস্থানে চুমু  খাওয়া হয়নি। এই আফসোস আমার জীবনেও যাবে না। বিটিভির ক্যামেরাপার্সন আফজাল ভাই ভারী ক্যামেরা হাতে নিয়ে উল্টো হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রোগ্রাম ভিডিও করার জন্য। সবাই আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করছে। কিন্তু আফজাল ভাই পেশাদারিত্বের খাতিরে প্রধানমন্ত্রীর মুভমেন্ট ধারণ করছেন ক্যামেরায়। সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন মায়ের সাথে। শেখ হাসিনা হঠাৎ আফজাল ভাইকে বললেন, “তুমি ক্যামেরা রাখ! আল্লাহর ঘরের সামনে এসেছ, ভিডিও করা লাগবে না, মনোযোগ দিয়ে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ কর!”

আরেকবার গেলাম সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে। অলিম্পিক মিউজিয়ামের পাশে একটা পুরনো যাদুঘরে গেলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে। সেখানেও আফজাল ভাই আছেন। মিউজিয়ামের প্রবেশ পথে ছোট ছোট পাথর বিছানো। প্রধানমন্ত্রী হেঁটে হেঁটে প্রবেশ করছেন। আফজাল ভাইকে তিনি বললেন, ‘দেখো সাবধানে! পড়ে যেতে পার!”। ভিক্ষুক রমিজা খাতুনের কথা আপনাদের মনে আছে নিশ্চয়। একজন ভিক্ষুককে কী অবলীলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বার জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন!

২০০৯ সালেই নভেম্বর মাসে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর রাজধানীর পোর্ট অব স্পেনে কমনওয়েলথ সামিটের ফাঁকে এক গ্র্যান্ড চাইল্ড এর জন্মদিন পালন করবেন। খুবই সাধারণ সে আয়োজন। সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসলেন। জন্মদিনের কেক কাটা হল একটা স্থানীয় হোটেলে। আমরা যথারীতি কাগজ, কলম নিয়ে মনোযোগ দিয়ে তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত হলাম। শেখ হাসিনা আমাকে বললেন, ‘কাগজ কলম রাখ তো, কেক খাও”! এমন অনেক স্মৃতি আছে তাঁর সাথে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবারের মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলাম। প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন সাংবাদিকতায় আমার গুরু, বর্তমানে ওয়াশিংটনে প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমদ। শামীম ভাই এর এক রিপোর্টের সূত্রে আমরা জানতে পারলাম, তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক ভোজসভায় শেখ হাসিনাকে সম্মান দেখাতে গিয়ে নিজে জগ হাতে তাঁর গ্লাসে পানি ঢেলে দিয়েছেন। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফরে শেখ হাসিনাই ছিলেন জাতিসংঘ অধিবেশনের মূল চরিত্র। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এমন এক জবাব দিয়েছেন তাঁতে বিশ্বের মজলুম সব মানুষ খুব খুশি হয়েছেন, সাহস পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ট্রাম্পের কাছে আমি কী সাহায্য চাইব। যে মানুষ দুঃখী মানুষের কষ্ট বুঝেন না, তার কাছে সাহায্য চেয়ে কী হবে!’ ঠিক যেমন বঙ্গবন্ধু দেশে-বিদেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সর্বদা সরব ছিলেন। সব কথা এখানে বলে শেষ করা যাবে না।

শেখ হাসিনাকে পুরো বিশ্ব এখন নেতা মানে। নিজেদের নেতাকে আমরা অনেকেই হয়ত অশ্রদ্ধা করি বা তাঁকে বোকা বানানোর চেষ্টা করি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল, শেখ হাসিনার মত করিৎকর্মা এবং সাহসী দেশপ্রেমিক নেতা বর্তমান বাংলাদেশে আর কেউ নেই। মুশকিল হল, দেশে এখনো এত সমস্যা আছে যে, শুধু উন্নয়নই আমাদের চোখে পড়বে, এমন আশা করা ঠিক না। যারা শুধু উন্নয়নকেই সামনে আনে, তাদের দলে আমরা নই। আবার তাদের দলেও আমরা নই, যারা কোন উন্নয়নেরই স্বীকৃতি দিতে চান না। যারা শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে, তাদের দলে আমরা নই। প্রশংসা না থাকলে মানুষ বাঁচে না, মানুষ না বাঁচলে সমাজ বাঁচে না। গত ৯ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী পরিমাণ গতি এসেছে সেটি বুঝতে শুধু সমাজের দিকে গভীর মনোযোগ দিলেই চলে। শুধু ঢাকা নয়, গ্রামেও ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। নতুন নতুন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে, কাঁচা রাস্তা পাকা হয়ে যাচ্ছে, ফ্লাইওভার হয়ে যাচ্ছে, দুই লেনের রাস্তা চারলেন হয়ে যাচ্ছে। সরকারি চাকুরিতে বেতন ১২৩ গুণ  বেড়েছে। মেয়েরা ফুটবলে, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনীতে নিজেদের দাপট দেখাচ্ছে। এভারেস্ট এ উঠে ছেলে-মেয়েরা লাল-সবুজের পতাকা উড়াচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে, অকালে বন্যা হচ্ছে , বানের পানিতে ধানী জমি ভেসে যাচ্ছে। ভারত পানি দেয় না বলে, জলবায়ুর পরিবর্তনে নদীর পানি শুকিয়ে মরুকরণ হচ্ছে। এত কিছুর পর বাংলাদেশ থেকে দুর্ভিক্ষ বিদায় নিয়েছে। দারিদ্র যে বিমোচন হচ্ছে, সেটি বিশ্বব্যাংকই সনদ দিচ্ছে। জিডিপির সাইজ বাড়ছে, ব্যাংক রিজার্ভ বাড়ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তানকে আমরা পেছনে ফেলেছি।

অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সুশাসনের প্রশ্নে সরকারকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এই যে বরিশালের এক গ্রামে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের মাথায় গু ঢেলে দিয়ে চরম অসভ্যতা দেখাল কিছু নরপশু তার বিচার কি করতে হবে না? পাগলের মত সরকারি চাকুরির পেছনে ছুটা নতুন প্রজন্ম আন্দোলন করছে কোটার সংস্কার দাবিতে। কখনো মনে হয়, কোটার আন্দোলন আর হবে না। আবার কিছুদিন যেতেই দেখা যায় আন্দোলন নতুন করে দানা বাঁধে। এর যে একটা আশু স্থায়ী সুরাহা হওয়া দরকার, সেটি আমরা সবাই বুঝতে পারছি। কিন্তু অনেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মানুষের কথা শুনলে মনে হয়, দেশের নতুন প্রজন্মের সমস্যাকে আমলে নিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার সঠিক একজন মানুষ যেন এই সমাজে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি ঘোষণাকে সঠিকভাবে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত করার জন্য দক্ষ ও আন্তরিক রাজনীতিবিদ কিংবা আমলাদের অভাব অনুভব করছে দেশের মানুষ।

দেশে অবকাঠামোখাতে যেমন উন্নয়ন হচ্ছে, আবার মানুষকে সাময়িক দুর্ভোগের মধ্যেও পড়তে হচ্ছে ভালোভাবেই। ঢাকা –চট্টগ্রাম মহাসড়কে রোজা শুরুর আগেই ৮০ কিলোমিটার যানজট হচ্ছে। উন্নয়ন কাজের জন্যই যে এমন হচ্ছে, সেটি আমরা জানি। কিন্তু কতজন মানুষ আমাদের মত করে জানে? সবাইকে একটা সুশাসনের অনুভূতি দেয়ার দায়িত্ব কিন্তু সরকারের এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই। বিএনপি-জামাত তার রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য অনেক অপপ্রচার করবে, স্বাভাবিক। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ নিয়ে পর্যন্ত এরা হাস্যকর প্রচারে নেমেছে। এরা আওয়ামী লীগের আমলের একটা ভালো কাজেরও স্বীকৃতি দিতে চায় না। বিএনপি-জামাতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সেটিও দেশের মানুষকে বোঝাতে হবে। এরজন্য দেশের সাধারণ মানুষের পাশে সরকার এবং দলকে থাকতে হবে। মাদ্রাসার যে শিক্ষককে মাথায় গু ঢেলে অপমান করা হয়েছে, তাঁকে সাহস দিতে হবে, তাঁর সম্মান পুনরুদ্ধার করতে সবগুলো দুর্বৃত্তকে কারাগারে পাঠাতে হবে। রাস্তায় বাসের চালকের নিষ্ঠুরতায় যখন কোন যুবকের হাত ছিঁড়ে যায়, তখন তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। উল্টো তাঁকেই দোষারোপ করা যাবে না। দুই/একটা শিবির বা রাজাকারের জন্য লাখ লাখ ছেলে-মেয়েকে শিবির বা রাজাকার বলে গালি দেয়া যাবে না। নিজের স্বার্থের জন্য মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার আর রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা বানানো যাবে না। নিজের স্বার্থের জন্য অমুক্তিযোদ্ধাকে সনদ বাগিয়ে দিতে সাহায্য করা যাবে না। মুখে ‘জয়বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করা যাবে না।

এদেশে শিশু জন্ম নিয়েই শিক্ষিত বাবা-মায়ের কাছে শুনে দেশের সব খারাপ, আর বিদেশের সব ভালো। সে দেশ যে এখনো বিরানভূমি হয়ে যায়নি, তার কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের, এর কৃতিত্ব এদেশের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের। দেশ চলে কৃষক আর শ্রমিকের ঘামে, শ্রমে। অথচ সমাজের সব সম্মান নিয়ে নেন পুঁজিপতি, আমলা-রাজনীতিবিদ-বুদ্ধিজীবীসহ সকল মধ্যসত্বভোগী শ্রেণির লোকজন। অবদান অনুযায়ী সব মানুষ যেদিন যার যার প্রাপ্য সম্মান পাবে না, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে না। জিডিপি বাড়বে, শিল্প-কারখানা বাড়বে, মাথাপিছু আয় বাড়বে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে হলে সর্বক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে হবে। সমস্ত অসঙ্গতি দূর করতে হবে। আশার কথা হল, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সে পথেই এগুচ্ছে। পথে অনেক কাঁটা বিছানো ছিল, দূর করা হচ্ছে। এরকম কাঁটা আরও বিছানো হবে। একা শেখ হাসিনা লড়ে যাচ্ছেন । সাথে আছে দেশের সরলমনা কৃষক-শ্রমিক। অথচ মুখে জয়াবাংলা বলার লোকের অভাব নেই। এরা জয়বাংলা বলে শুধু নিজেদের পকেট ভারী করতে শিখেছে ভালো। পকেট উপচে কিছু পয়সা-কড়ি নিচে পড়লে তার ভাগ পাচ্ছে গরীব মানুষেরা। এমন আশা-নিরাশার দোলাচলে শেখ হাসিনাকে আমাদের খুব দরকার। আরও অনেক সময়ের জন্য দরকার। শেখ হাসিনাই এখন আমাদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছেন। ভরসা তাই শেখ হাসিনারই উপর থাক আমাদের।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১৫মে-২০১৮ইং)

SHARE