মিলি সিকদার ঃ ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা বোরহানগঞ্জের কথিত পল্লী চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় কাচিয়া ইউনিয়নের প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।নবজাতক শিশুকে জন্মদিয়ে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুতে অনিশ্চিত শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। গত(১৮ আগস্ট)বিকেলে অভিযুক্ত কথিত পল্লী চিকিৎসক পিযুষ,পিতা.আশুতোষ মিলিটারি বোরহানউদ্দিন উপজেলা কাচিয়া ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি।একই ওয়ার্ডের নজরুল ইসলামের প্রসূতি স্ত্রী জান্নাত বেগম(৩২)কে ভুল চিকিৎসা দেয়ার কয়েক ঘন্টা প্রচুর ব্লাডিং,পেইনিং শুরু হয় প্রসূতি ঐ নারীর। ফলে ডেলিভারি হলেও নবজাতক জন্মদিলেও শেষরক্ষা হয়নি প্রসূতি মায়ের। ভুল চিকিৎসার ফলে নিজ বাড়িতেই মর্মান্তিক মৃত্যু হয় জানায় বোরহানউদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক ড.সফিকুল ইসলাম।তিনি জানানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার আগেই জান্নাত বেগমে মারা যান বলেও ঘটনাটি নিশ্চিত করেন এ চিকিৎসক।তার শরীরে পরপর চারটি (অক্সিটোসিন গ্রুপের অছিন) নামক চারটি ইনজেকশন একসাথে পুশড করা হয়। ফলে প্রসব বেদনা তার দ্বিগুন ব্লাডিং হয় ফলে ইনফ্যাক্ ক্রীয়া বন্ধ হয়ে রোগীটি মারা যান।যদিও একই সাথে ৪টি ইনজেকশন পুশড করা কোনভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলেও জানান বোরহানউদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বরত চিকিৎসক।এদিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করার পরেও তালবাহানা ও তড়িঘড়ি করে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কনফার্ম করার বাহানায় বোরহানউদ্দিন থেকে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও পরবর্তীতে ভোলা সদর হাসপাতালে মৃত ব্যক্তির ঘোষণা সরকারি কোন রেজিস্ট্রারে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইমারজেন্সি সিনিয়র স্টাফ মোহাম্মদ হাফিজ উদ্দিন।জানা যায় কথিত ভুয়া চিকিৎসক পিযুষ,মুলত একজন ওষুধ ব্যাবসায়ী। বোরহানগঞ্জ বাজারে তার মেডিসিন ব্যাবসা রয়েছে। উক্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের গেলে সংবাদকর্মীদের দেখে নিবে বলেও হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। এদিকে পিযুষ এর বাবা আশুতোষ মিলিটারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।ও (অসকস)ভোলার সংস্থার সদস্য।তাই তার বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করলে তার কিছুই হবে না।এমনকি পুলিশ প্রশাসন তার কিছু করতে পারবেনা বলে দাম্ভিকতা ছাড়েন কথিত চিকিৎসক। অপরদিকে প্রসূতি নারীর স্বামীকে বিভিন্ন স্থানীয় দালাল চক্রের প্রভাবিত করে হুমকি-ধামকি দিয়ে অভিযোগ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেছে কথিত এই পল্লী চিকিৎসক। হুমকির ভয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছে প্রসূতি নারীর পিতা-মাতা সহ আত্মীয় স্বজন। তাই সরাসরি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে লোভী স্বামী নজরুল ও পিযুষের মধ্যকার অর্থ লেনদেনে সমঝোতা হয় বলেও জানায় স্থানীয়রা।অনুসন্ধানে এমন খবর পেয়ে একদল সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে যান। এসময় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে ভুয়া চিকিৎসক পিযুষ এর দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে বেড়িয়ে আসে ভুল চিকিৎসা ও মেডিসিন দেয়ার সত্য ঘটনা। প্রসূতি নারীর দেহে সেদিন কি মেডিসিন দেয়া হয়? প্রশ্নের জবাবে পিযুষ জানায় বোরহানগঞ্জ বাজারে তার ওষুধ ফার্মেসী থেকে নেয়া (এলজিন স্যালাইন) ও গ্যাস্টিক (পেনটোনিক)এবং Ocine নামক ইনজেকশন পুশড করে তিনি তার চিকিৎসা সম্পন্ন করেন বলে সত্যতা স্বীকার করেন।একজন সামান্য মেডিসিন ব্যাবসায়ী হয়ে বা চিকিৎসক না হয়েও কিভাবে প্রসূতি রোগীকে অবৈধ পন্থায় তিনি এমন চিকিৎসা দিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পিযুষ কৌশলে কোন সঠিক উত্তর না দিতে পারলেও,প্রসূতি নারীর পরিবারের লোকজনের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে চিকিৎসা সেবা প্রধান করেন বলেও জানায়।এদিকে স্থানীয়রা উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ভুয়া চিকিৎসক পিযুষ এর শাস্তি দাবি করেন। তারা জানান ইতিপূর্বে পিযুষ এভাবে অসংখ্য রোগিদের বিভিন্ন সময় মনগড়া ট্রিটমেন্ট দিয়ে গ্রামগঞ্জের অসহায় মানুষকে চিকিৎসা দেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।এদিকে ভুল চিকিৎসায় ঐ প্রসূতি নারী জান্নাত বেগমের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ একদল দালাল চক্রের চলে দফায় দফায় দৌরঝাপ। ঘটনাটি তার লোভী স্বামীসহ টাকার বিনিময়ে দালালদের সমন্ময়ে মিটমাট করার পরিকল্পনা করে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহ (অসকস)সংগঠনের সদস্যরা রাতভর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।পরে সামাজিক গণমাধ্যম ও সোস্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে তীব্র প্রতিবাদ জানায় স্থানীয় ও ভোলার গনমাধ্যমকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার সাধারণ মানুষ। তারা জানান কিছু দালাল চক্রের কারণে এসব পল্লী চিকিৎসকরা আইনের হাত থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে।আর যার ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যুঝুকি সহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামগঞ্জের অসহায় সাধারণ হতদরিদ্র মানুষ। এ বিষয়ে বোরহানউদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল আমিন বিপিএম জানান,বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, খুব দ্রুতই তার এই সমস্ত ভুয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে অভিযান পরিচালনা করবেন। ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার,বোরহানউদ্দিন লালমোহন সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেলুর রহমান জানান, অভিযোগ পেলে অবশ্যই ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে জানা যায় ভুল চিকিৎসা ও মাত্রাতিরিক্ত মেডিসিন প্রয়োগের ফলে নবজাতকের শিশুটিও ক্ষতিগ্রস্ত হন।এবং বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা বা মৃত মায়ের শাল দুগ্ধ না পাওয়া সহ এই শিশুটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও আশংকা ঝুকিতে রয়েছে বলেও জানান -মেডিকেল চিকিৎসকরা।