আরিয়ান আরিফঃবরিশালের চরমোনাই দরবার শরিফে তিন দিনব্যাপী বার্ষিক মাহফিল শুরু হয়েছে। এবার মাহফিলে প্রায় পৌনে এক কোটি মুসল্লির সমাগম হবে বলে আশা করছেন মাহফিল কর্তৃপক্ষ।বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জোহরের পর চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মো. রেজাউল করীমের বয়ানের মধ্য দিয়ে মাহফিলের সূচনা শুরু।উদ্বোধনী বয়ানে চরমোনাই পীর বলেন, চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি উদ্দেশ্যে নয়। পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যই প্রতি বছর চরমোনাইয়ে মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এখানে দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে যদি কেউ এসে থাকেন তাহলে তাকে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধি করতে হবে।সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, ‘চরমোনাইয়ে যারা নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে আখেরাতের খেয়াল-ধ্যান অন্তরে জায়গা দেন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব ভাব বের করে দিয়ে আল্লাহর কুদরতি পায়ে নিজেকে বিলীন করে দিতে হবে। সদা-সর্বদা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে দিলকে তরতাজা রেখে আল্লাহর ওলি হয়ে চরমোনাই থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।’এবারের মাহফিলে যুবকদের ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে চরমোনাই পীর বলেন, দেশের যে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তনে যুব সমাজের ভূমিকা অগ্রগামী। তাই যুব সমাজ যদি চারিত্রিকভাবে ভালো হয়ে যায়, তবে সমাজের বিদ্যমান অনাচার- অবিচারের মূলোৎপাটন হওয়া সময়ের ব্যাপার।বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে আগত মুসল্লিদের বর্ণনা দেন চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ মো. রেজাউল করীম।চরমোনাই পীরের সহোদর ও চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুফতি এসাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, প্রতি বছর বাংলা মাস হিসাব করে চরমোনাই দরবার শরিফে অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাসে দুটি মাহফিল হয়। ফাল্গুন মাসের মাহফিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। লাখ লাখ মুসল্লি মাহফিলে অংশ নেন।উদ্বোধনী বয়ানসহ তিনদিনে মূল বয়ান হবে সাতটি। চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পাঁচটি বয়ান এবং শায়খে চরমোনাই নায়েবে আমিরুল মুজাহিদিন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম দুটি বয়ান করবেন। মাহফিলে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দেওবন্দ ও নদওয়াতুল ওলামা এবং তুরস্ক থেকে শীর্ষস্থানীয় আলেমদের উপস্থিত হওয়ার কথা রয়েছে।মাহফিলের মিডিয়া সেলের প্রধান মাওলানা মো. শরিয়ত উল্লাহ বলেন, মুসল্লিদের জন্য প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর মোট পাঁচটি মাঠে প্রায় ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সামিয়ানা টানানো হয়েছে। বুধবার সকালে পাঁচটি মাঠই মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। চরমোনাই ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। উদ্বোধনী বয়ানের সময় চরমোনাই এলাকার বিভিন্ন বাগান, পুকুরপাড় এবং মানুষের বসতবাড়ির উঠানে মুসল্লিদের জায়গা নিতে দেখা গেছে। করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সুরক্ষাবিধি মেনে চলার জন্য আগত মুসল্লিদের অনুরোধ করা হয়েছে।স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাহফিলে আগত কোনো মুসল্লি অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট চরমোনাই মাহফিল হাসপাতাল করা হয়েছে। মাহফিল এলাকায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।এবার পৌনে এক কোটি মুসল্লি মাহফিলে সমাগত হবেন বলে আশা করছেন মাহফিলের মিডিয়া সেলের প্রধান। তিনি বলেন, শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে মাহফিল শেষ হবে। মো. শরিয়ত উল্লাহ বলেন, মাহফিলে আগত সাতজন মুসল্লি বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন। জানাজা শেষে মরদেহ তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।