।। তাইফুর সরোয়ার ।।
“মোদের গরব মোদের আশা,
আমরি বাংলা ভাষা।”
আমাদের মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের গর্ব ও অহংকার। মাতৃভাষা বাংলাকে কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে বুকের তাজা রক্তে বাংলার দামাল ছেলেরা নিজের ভাষাকে রক্ষা করেছে। উর্দু নয় বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাতেই তারা কথা বলে, লেখে, স্বপ্ন দেখে। এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে আমাদের বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতা। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এখন সারা পৃথিবীতে ২১শে ফেব্রুয়ারী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
ফেব্রুয়ারীকে বলা হয় ভাষার মাস। কিন্তু ভাষার নির্দিষ্ট কোন মাস নেই। ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা নতুন করে ভাষা চেতনায় শানিত হই। কিন্তু সারা বছর ধরে বাংলার চর্চা আসলে কতোটা চলে এই আত্মোপলব্ধি অত্যন্ত জরুরি। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার যে মর্যাদা প্রাপ্য ছিল সেটি কি আসলেই অর্জিত হয়েছে?
দুঃখজনক হলেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। যে রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা ছিল সেখানে আজ সিংহভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিচারিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা বললেও এখনো অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাকে উপেক্ষা করে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি বাংলাকে ইংরেজি এবং হিন্দির সাথে মিশিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আজ রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন সাইনবোর্ডগুলো লেখা হয় ইংরেজিতে। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা নিয়ম একেবারেই কম ব্যবহার করা হয়।
সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু। প্রযুক্তিনির্ভর একবিংশ শতাব্দীতে তরুণ প্রজন্মও বাংলা ভাষার প্রতি চরম উদাসীন। অন্যভাষা শেখায় কোনো দোষ নেই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – “আগে চাই বাংলা ভাষার গাঁথুনি, পরে ইংরেজি শেখার পত্তন।” মাতৃভাষা ভালো করে না জানলে কোনো ভাষাতেই দক্ষতা অর্জন করা যায় না। এবারের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের শপথ হোক মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার।
যে মাতৃভাষা বাংলাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে গিয়ে এ জাতির বীর সন্তানেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিল সে মাতৃভাষা বাংলাকে এইভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল করা মেনে নেওয়া যায় না। তাই বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে ব্যবহার এবং প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।