ষ্টাপ রিপোর্টার : স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার পরিবারের হাতে ৫২ হাজার টাকা দিয়ে ধর্ষককে দায়মুক্তি দিয়েছে।শনিবার (২৮ নভেম্বর) ভোলার বোরহানউদ্দিনে কাচিয়া ইউনিয়নের কালির হাট এলাকায় এঘটনা ঘটে। ভিক্টিম জানান, ফুলকাচিয়া আবাসন প্রকল্পের বাসিন্ধা কিশোরী(১৫) দীর্ঘদিন যাবৎ তার বড় বেনের সাথে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও, বাদশা চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় ইয়াছিন হাজীর ভাড়া বাসায় থেকে একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। ভিক্টিমের আপন চাচাতো ভাই রতন মুন্সির ছেলে হোটেল কর্মচারী সেন্টু (৩৭) নিজ বোন সহ একই বিল্ডিং পাশাপাশি রুম ভাড়া নিয়ে থাকতেন। প্রায় এক বছর পূর্বে সেন্টুর বোন যখন বোরহানউদ্দিনে গ্রামের বাড়ী ছুটিতে চলে আসেন এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁরই চাচাতো বোনকে হাত-পা বেঁধে জোর পূর্বক ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করতেন সেন্টু। ধর্ষণের পাঁচ মাস পর ভিক্টিমের পেটে সন্তান আসলে তার অস্বাভাবিক চলাফেরায় স্থানীয় বাসিন্ধাদের মাঝে সন্দেহ ও আলোচনা শুরু হলে লম্পট সেন্টু ভয়-ভীতি দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী জাহাঙ্গীর কলোনির ভাড়াটিয়া মামুন নামের এক যুবককে ধর্ষক হিসেবে বলতে বাধ্য করে ভিকটিমকে। ধর্ষক সেন্টুর প্রোরচনায় ভিক্টিম নিরপরাধ জনৈক মামুনের বিরুদ্ধে গত ০৭-০৩-২০২০ ইং তারিখ চট্রগ্রাম চান্দগাঁও থানায় ভিক্টিম বাদী হয়ে মামুনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত-০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার-১৩। চান্দগাঁও থানার এসআই জাকির মামলাটির তদন্ত শেষে আসামি মামুনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এই ঘটনার পরপরই ভিকটিমের চাচাতো ভাই হোটেল কর্মচারী সেন্টু চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে গাঢাকা দেয়। এরইমধ্যে ভিকটিমের পেটে আসা বাচ্চা প্রসব হলে গোপনে গ্রামের বাড়ী ফুলকাচিয়া আবাসনে তার বৃদ্ধ মা বাবার কছে শিশুটিকে পাঠিয়ে চট্রগ্রামে থাকেন ভিক্টিম। আবাসন এলাকায় পিতৃ-মাতৃহীন ভাবে শিশুটিকে বৃদ্ধ নানা-নানী লালন পালন করায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আবাসন এলাকাবাসীর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে শিশুর আসল রহস্য। এক পর্যায়ে ভিক্টিমের মা-বাবা স্বীকার করেন তার মেয়ের সাথে আপন ভাই রতন মুন্সির ছেলে ভাতিজা সেন্টুর অবৈধ মেলামেশার ফলে এই শিশুর জন্ম হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে রতন মুন্সি তার ভাতিজির সাথে তার ছেলের ঘটনাটি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ভিকটিমকে চট্টগ্রাম থেকে এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে গত শনিবার (২৮ নভেম্বর) স্থানীয় কথিত সিআইডি সোর্স পরিচয় দানকারী নুরুল ইসলাম হাওলাদারের নেতৃত্ব আলমগীর, রতন হাওলাদার, আ. রহিম, আজগর, ধর্ষকের বাবা রতন মুন্সি সহ কতিপয় ব্যক্তি ভিক্টিম ও তার পরিবারের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ধর্ষণের অপরাধে সেন্টুকে দোষী সাব্যস্ত করে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভিক্টিমকে ৫২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। জরিমানার অবশিষ্ট ২৮ হাজার টাকা শালিশের নামে দালালরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এবং শালীশের সিদ্ধান্তে নবজাতক শিশুটি ধর্ষক সেন্টুকে লালনপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।এবিষয়ে অভিযুক্ত সেন্টু জানান, আমি চার পাচঁ দিন আমার চাচাতে বোনের বাসায় ঘুমিয়েছি, একদিন গভীর রাতে দেখি আমরা চাচাতো বোন আমার গায়ে পা তুলে ঘুমায়। তখন হয়তো একবার তার সাথে আমরা শারীরিক সম্পর্ক হতে পারে। এই ঘটনায় ভিক্টিম জানান, আমার চাচাতো ভাই সেন্টু আমাকে ধর্ষণ করেছে। সেন্টু ভয় দেখিয়ে চট্রগ্রামে মামুকে আসামী করে আমাকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। আমি সেন্টুর বিচার চাই।ভিক্টিমের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার এসআই জাকির জানান, মামুন নামের একজনকে আসামি করে গত ৭ মার্চ চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় ভিকটিমের অভিযোগ ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী মামুনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরন করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেছি।বোরহানউদ্দিন থানার (ওসি) মাজহারুল আমিন (বিপিএম) জানান, এই ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে চট্রগ্রামে ধর্ষনের ঘটনা হওয়ায় আমার কিছু করার নেই। ধর্ষণের ঘটনার বিচার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, শালিশ বিচারের বিষয়ে ইউএনও ব্যবস্তা নিতে পারে আমি পারিনা।এই ঘটনায় স্থনীয় সুশীল সমাজের অনেকেই মনে করেন, অপরাধ না করেও নিরপরাধ মামুন জেল হাজতে রয়েছে এটি দুঃখ জনক। আপর দিকে ধর্ষক সেন্টুকে নুরুল ইসলাম হাওলাদারের নেতৃত্বে বিচারের নামে শুধু জরিমানা করে দায় মুক্তি দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি করেন।