স্টাফ রিপোর্টার ॥
ভোলায় যৌতুকের দাবীতে গৃহবধুকে অমানবিক নির্যাতন, মারধর করতো পাষন্ড স্বামী ও তা পরিবার। পাষ- স্বামী এমরান, শ্বশুর, শ্বাশুরী, দেবরদের অত্যাচার, নির্যাতনের হাত থেকে বাচতে বিয়ের পর থেকে বাবার বাড়ী থেকে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা ও ৩ লক্ষ টাকার স্বর্ণাংলাক আনে স্বামীকে যৌতুক দেয় নাজমা বেগম। একাধিকবার দাবীকৃত যৌতুকের টাকা এনে স্বামীর হাতে দিয়েও কপালে সুখ জোটেনি নির্যাতনের শিকার নাজমা বেগমের। স্বামী ও তার পরিবারের অমানুষিক নির্যাতন, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নাজমা বেগম বাদী হয়ে ভোলার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় দেবর জাকির হোসেন ও মোঃ মনির জেল খেটে জামিনে এসে গৃহবধু নাজমা বেগমকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। বর্তমানে অনিশ্চিত ভবিষ্যত ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে দিন কাটাচ্ছে নির্যাতিত নাজমা বেগম।
অভিযোগ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের মৃত রফিকুল ইসলামের মেয়ে নাজম বেগমের সাথে বিয়ে হয় শিবপুর ইউনিয়নের নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ ইমরানের সাথে। পিতা রফিকুল ইসলাম জীবিত থাকা অবস্থায় মেয়ের সুখের জন্য ঘর করে দিয়েছেন। জামাইর ব্যবসার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সময় টাকা দিয়ে সহযোগীতা করেছেন। সুখের আশায় মেয়েকে ইমরানের সাথে বিয়ে দিলেও সেই সুখ নাজমার কপালে জোটেনি। বিয়ের পর থেকে কাপড় ব্যবসায়ী ইমরান ও তার পরিবার যৌতুকের দাবীতে নাজমা বেগমকে পাষবিক নির্যাতন করতো। নির্যাতনের হাত থেকে বাচতে পিতার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় যৌতুকের টাকা এনে স্বামী ইমরানের হাতে তুলে দিতো নাজমা। তারপরও নাজমার সংসারে ফিরে আসেন সুখের সুবাতাস। তাদের সংসারে রয়েছে ১ মেয়ে ও ১ ছেলে। সন্তানদের নিয়ে সুখে থাকার আশায় নাজমা বেগম স্বামী ও তার পরিবারের নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে গেছে বছরের পর বছর। মেয়ে বড় হয়েছে, বিয়ে দিতে হবে। এ জন্য নাজমা বেগম বাপের ওয়ারিশ সম্পত্তি বিক্রি করে ১২ লক্ষ টাকা এনে ৩ তলা ফাউন্ডেশন নিয়ে ঘর নির্মান শুরু করেন। সুখের ঘর নির্মানের শুরুতেই অশান্তি শুরু হয় নাজমার সংসারে। স্বামী ইমরান আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। একদিকে নাজমা বেগম এর উপর চলতো যৌতুকের জন্য নির্যাতন, অন্য দিকে এক মেয়ের সাথে চলতো ইমরানের পরকীয়া। নাজমা বেগমকে ভরণপোষণ না দিয়ে মাঝে মধ্যেই সংসার রেখে উদাও হয়ে যেতো সে। এই বিষয় নিয়ে নাজমার ভাই মোঃ মনির হোসেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানায়। পরে দুই পক্ষ উকিলের মাধ্যমে শালিশে বসে। সেখানে স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে ইমরান অঙ্গীকার করে আর কোন দিন নাজমা বেগমকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করবে না এবং সুখে শান্তিতে সংসার করবো। অঙ্গীকার করেও সঠিক পথে আর আসেনি ইমরান। কিছুদিন যাওয়ার পর পূর্বের রুপে ফিরে যায় সে। গত ০১-০৬-২০ইং তারিখে পূর্বের দাবীকৃত ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক না দেওয়ায় নাজমা বেগমের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় পাষন্ড স্বামী মোঃ ইমরান। নাজমা বেগমকে এলোপাথারী মারধর করে মারাত্মক জখম করে সে। পরে নাজমা বেগমকে উদ্ধার করে মুমুর্ষ অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বামী ও তার পরিবারের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নাজমা বেগম বাদী হয়ে স্বামী মোঃ ইমরান, দেবর জাকির হোসেন, মোঃ মনির, মোঃ নুরুল ইসলাম, মানছুরা বেগমকে আসামী করে ভোলার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইর্ব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জাকির হোসেন ও মনির জেল খেটে জামিন বের হয়ে নাজমা বেগমকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। রাতের আধারে নাজমা বেগমের ঘরের চালায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং অকর্ত্য ভাষায় গালিগালজ করে জাকির গংরা। তাদের এই অত্যাচার, নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি ভয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে নাজমা বেগম। তিনি এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু সমাধান দাবী করেন।
নাজমা বেগমের ভাই মোঃ মনির হোসেন বলেন, বোনের সুখের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। কিন্তু ভগ্নিপতি ইমরান ও তার পরিবার যৌতুকের দাবীতে আমার বোনকে অমানুষিক নির্যাতন করতো। আমার বোন যাতে সুখে শান্তিতে সংসার করতে পারে সে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইমরানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ইমরানের ভাই জাকির হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের স্বামী-স্ত্রীর সাথে কি হয়েছে সেটা আমরা জানি না। আমার ভাইর অনুপুস্থিতিতে আমরা বাজার করে দিয়েছি, সংসারের খোজখবর নিয়েছি। কিন্তু নাজমা বেগম শুধু শুধু আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে। আমরাও চাই তাদের সংসার সুখে শান্তিতে চলুক। প্রয়োজনে আপনারা বসে এটার একটা সমাধান করে দেন।