।। তাইফুর সরোয়ার।।
পাঁচ দিন আগে গায়ে জ্বর জ্বর অনুভব করায় থার্মোমিটার কিনতে গিয়েছিলাম ভোলার যুঘীর ঘোল এলাকায়। কয়েকটি দোকানে খুঁজে পেলাম না। পরে এ রব হাই স্কুলের সামনের ঔষধ মার্কেটের একটি দোকানে পেলাম মোটা কাঁচের টিউবের থার্মোমিটার। দাম চাইল ১৫০ টাকা, যেটার দাম চার পাঁচ মাস আগেও ছিল ৩৫- ৪০ টাকা। দাম বেশি কেন? প্রশ্ন করতে দোকানী জানালো যে চায়না থেকে মাল কম আসছে। তাই তাদেরকেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। পরে দুই তিন দোকান খুঁজে ৩৫ টাকা দিয়ে চিকন একটি থার্মোমিটার নিয়ে বাড়ি ফিরলাম, এটাও করোনা সংকটের আগে বিক্রি হতো ২০-২৫ টাকায়।
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওষুধের দাম লাগামহীন। অনেকে স্থানে অ্যান্টিবায়োটিক ও সাধারণ অন্যান্য ওষুধ বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বহুলপ্রচারিত কয়েকটি ঔষধের দাম নেওয়া হচ্ছে আকাশছোঁয়া। পাড়া-মহল্লার ও গ্রামের দোকানগুলোতে ঔষধের দামের তারতম্য সবচেয়ে বেশি।
ফার্মেসি মালিকদের অভিযোগ, তারা ঠিক মতো ঔষধের সরবরাহ পাচ্ছেন না। যা পাচ্ছেন তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ঔষধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরাই বেশি দাম নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে। ওষুধ কোম্পানিগুলোও পরিবহন সংকট ও কাঁচামাল সংকটের কারণ দেখিয়ে বাড়িয়ে দিয়েছে বেশ কিছু অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধের দাম।
করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ মৌসুমি জ্বর ইনফ্লুয়েঞ্জা। করোনাকালীন এ অবস্থায় অনেক চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ থাকায় এবং অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি করতে অনীহার কারণে অনেকে ফার্মেসির ঔষধ বিক্রেতার স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। আবার অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া চিকিৎসকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জেনে নিচ্ছেন তার রোগের ওষুধের নাম। এছাড়া অনেক চিকিৎসক করোনা সহ নানান রোগের জন্য রোগীকে কি কি ওষুধ খাওয়াতে হবে- তার বিবরণ সমেত প্রেসক্রিপশন স্ক্যান করে তুলে দিচ্ছেন ফেসবুকে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল, ভিটামিন সি ট্যাবলেট ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন জাতীয় ওষুধের বিক্রি কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় ওইসব ঔষধের সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় অনেক জায়গাতেই ক্রেতাদের বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে এসব ঔষধ।
ঔষধের পাশাপাশি করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেওয়া সার্জিক্যাল মাস্কসহ অন্যান্য মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, জীবাণুনাশক স্যাভলন, ডেটল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, দেহে অক্সিজেনের মাত্রামাপক অক্সিমিটারের দাম হাঁকা হচ্ছে ইচ্ছামতো। একেক দোকানে একেক ধরনের দাম হাঁকা হচ্ছে। যার কাছে যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমন দাম নিচ্ছেন ওষুধ বিক্রেতারা। অনেক জয়গায় ফার্মেসির বাইরে ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে দেড়গুণ দ্বিগুণ বেশি দামে এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। এসব সামগ্রীর মান নিয়েও জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
করোনার এই মহাদুর্যোগে সারা দেশের মানুষ চরম আর্থিক সংকটে আছে। অনেকের আয় নেই, অনেকের আয় কমে গেছে। এক চরম অনিশ্চিতার মধ্যে দিন যাপন করছে সবাই। এই পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ ও সুরক্ষা সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নিন্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিপ্রয়োজনীয় ঔষধ ও সুরক্ষা সামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঔষধের দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করে তা সমাধাণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। করোনাকে পূজি করে কেউ যেন বাড়তি দামে ঔষধ বিক্রি না করতে পারে সেই দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও অতি প্রয়োজনীয় কিছু ঔষধকে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ঔষধের দাম বৃদ্ধি করলে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।