ভোলা নিউজ ডেস্কঃ ভোলার করোনা জয়ী মীম। এখন পুরোপুরি সুস্থ। তার অসুস্থকালীন সময়ে যে মানুষিক সমস্যা গুলো রোগের বাহিরেও এই শিশুটিকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার নিজের লেখা সেই কষ্টের লেখাগুলো ভোলা নিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম…..
“আলহামদুলিল্লাহ 😊
আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে এবং সকলের দোয়া ও ভালোবাসায় আজ আমি ও আমার আব্বু সুস্থ এবং করোনামুক্ত। ✌️
আবারও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। আলহামদুলিল্লাহ।
আমাদের সমাজের অনেকেই হয়তো ভাবছেন,”যাক ভালোই, মেয়েটা “করোনা” নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলো।”
হা হা হা 😂😂😂,, না…..,অভিশাপ না,
এটা ছিলো আমার জন্য আশীর্বাদসরূপ। হ্যা….ঠিক শুনেছেন। আশীর্বাদ ছিলো।
কেনো জানেন???
আমি শিখতে পেরেছি, বুঝতে পেরেছি, জানতে পেরেছি, চিনতে পেরেছি। হ্যা…আমি শিখতে পেরেছি জীবনের মানে, বুঝতে পেরেছি জীবন কে, জানতে পেরেছি নিজেকে, নিজের পরিবারের মানুষদেরকে আর চিনতে পেরেছি এই ভদ্র সমাজকে, ভদ্র লোকগুলোকে।
২৫ এপ্রিল, আমি এবং আমার আব্বু করোনা টেস্ট করতে দিলাম। করোনা হতে পারে ভেবে টেস্ট করতে দিই নি,সামান্য জ্বর এবং কাশি দেখে বাসার সকলে ভাবলো যে,টেস্ট টা করিয়েই রাখি, মনের ভয় দুর হোক। টেস্ট করতে দেয়ার সময় দ্বিতীয়বার একটু চিন্তা করিনি যে, যদি পজিটিভ আসে, তখন কি হবে?
২৮ এপ্রিল, রিপোর্ট আসলো।করোনা পজিটিভ। সাথে সাথে ঝড়ের বেগে আর নদীর স্রোতে খবর পৌছে গেলো মানুষের কানে। এলাকায় যেনো তুলকালাম শুরু হয়ে গেলো। সবাই আমাদের বাড়ির দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। যেনো আমাদের বাড়িতে কোনো সন্ত্রাসী-জঙ্গি দল ধরা পড়েছে 😂।
কেউ হাসছে,কেউ টিটকারি করছে, কেউ গালিগালাজ করছে। আচ্ছা??? এটা কি আমাদের দোষ ছিলো??? মুহুর্তের মধ্যে অনেকের চোখের বিষ হয়ে গেলাম। যে যেভাবে পাড়ছে বলছে। আর গুজব??? সেটা না হলে তো কাহিনিতে twist আসবে না😂😂😂
As a result…. যে যা মনে আসছে,মুখে আসছে…. কথা ছড়াচ্ছিলো। কিন্তু তখনও আমি একদম সুস্থ, স্বাভাবিক। শুধু আব্বুর যা একটু জ্বর ছিলো। এর পর থেকে অবস্থার উন্নতি আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন,আলহামদুলিল্লাহ আমরা একদম সুস্থ।
শুধু শুধু কি দরকার ছিলো এতো গুজব ছড়ানোর, এতো কথা, গালিগালাজ, আমার ছবি নিয়ে আমাকে চিহ্নিত করে আরো বেশি বাজে কথা রটানোর??… এগুলো সভ্য সমাজের ভদ্রলোকদের মানায়?? হুহ্,
যাই হোক….একটা জিনিস ক্লিয়ার হলাম যে, সমাজটা আদৌ সভ্য হয় নি। 🙂
৫ মে,দ্বিতীয়বার টেস্ট করতে দিলাম, যেটার রিপোর্ট ৬ মে নেগেটিভ এসেছে। আবার ৭ মে টেস্ট করতে দিলাম, যেটার রিপোর্ট ১০ মে আবারো নেগেটিভ এসেছে।
সুস্থ হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু নতুনভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে যে, বাইরে বের হলে তো “করোনা রোগী”, ” করোনা পজিটিভ ” অনেক কথা হয়তো কানে আসবে।অনেকে হয়ত ১০০ হাত দূরত্ব বজায় রাখবে। ভাবলাম নতুন বোরকা কিনবো যেনো আগের বোরকা পড়ে বের হলে চিনে ফেলার রিস্ক না থাকে।😂
অনেকেই বলবে ” হ্যা বোন…সেটাই better হবে”
আচ্ছা?? সমাজের চোখ ফাকি দিয়ে চলবো?? নিজের রং পাল্টে নতুন ভাবে বের হবো??
But why???
আপনারা পারেন না? আমাদের নয় বরং সমাজের রং পাল্টাতে?? দূষিত সমাজটাকে নতুনকরে সাজাতে পারেন না?? আপনারা ভদ্র সমাজ…আমার কথাগুলো তো অন্তত বুঝতে পেরেছেন। কি অদ্ভুত তাই না??? আমরা সবাই বলি,,, ছিহ্,, সমাজ টা একদম দূষিত, নোংরা, আবর্জনায় ভরা….কিন্তু আমরা কেউ সেই আবর্জনার স্তুপে নেমে সমাজটাকে দূষণ মুক্ত করতে রাজি নই😂
আজ যদি সমাজের মানুষ গুলো তাদের রং পাল্টাতো, মন fresh রাখতো, নিজেদের এতো অসহায় মনে হতো না। বাড়ির কেউ যদি অন্তত খাবার আনতে লক করা গেইট এর সামনেও যেতো… এলাকার লোকজনের তা-ও বাজে কথার শেষ নেই। কেউ বলে আমাদেরকে বাসায় কেনো রাখা হলো, করোনা মানেই হাসপাতালে দৌড়াও। হাসপাতালে নিলে হয়তো বলতো ” এই রাস্তা দিয়ে কেনো নেয়া হলো”। হায়রে 😂😂😂তো মেরে ফেললেই তো পারেন। ওই টুকু ক্ষমতা থাকলে হয়তো তা-ই করতো। যাক অভিযোগ নেই আর তাদের প্রতি।
না…এই সমাজের কাছে নত হবো না। আল্লাহ রোগ দিয়েছিলেন, তাঁর রহমতে আজ সুস্থ। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নত করবো না।
অসুস্থতার সেই রাতগুলো যখন আমার পরিবারের সবাই যার যার কামরায় একা কাটিয়েছিলো, সেদিন একমাত্র আল্লাহ সহায় ছিলেন আমাদের। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সেই দিনগুলো ভালোভাবে পার করার সাহস ও শক্তি দিয়েছেন।
তবে সমাজে দূষিত মানুষের সংখ্যা অনেক হলেও আমার এবং আমার পুরো পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষীর সংখ্যা আল্লাহর রহমতে অনেক অনেক, যারা নিয়মিত বাড়ির সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন, হতাশ না হয়ে পরার জন্য, মনোবল অটুট রাখার জন্য সবসময় তারা সাহস যুগিয়েছেন।
বাড়ির ছোট-বড় কাজিনগুলো…যাদের সাথে পচানি ছাড়া কথা হয় না, ঝগড়া রেগুলার….তারা-ও সেদিনগুলোতে খুব কেয়ারিং ছিলো। ঠিকমতো খাবার, ঔষধ খেতে বলতো, যেনো সুস্থ হয়ে উঠি আর আবারো আমাকে পচানি দিতে পারে।
চিরকৃতজ্ঞ এই প্রিয়জনদের প্রতি, আমার বাড়ির প্রতিটি মানুষের প্রতি,সবসময় বাড়ির প্রত্যেকটি মানুষ মনে সাহস যুগিয়েছেন। কৃতজ্ঞ আমার সকল বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি। যারা একটা মুহূর্তের জন্য এটা চিন্তা করতে দেয়নি যে আমাদের কিছু হয়েছে কিংবা কিছু হতেও পারে।
End of the day….সমাজের কাছে বেশি কিছু না….কিছু-ই চাওয়ার নেই। কারণ জানি, সমাজ দিতে পারবে না ।
একটাই অনুরোধ, সকলের প্রতি সহনশীল, ভালো আচরণ করুন। অযথা কোনো গুজব ছড়িয়ে কারো মনোবল ভাঙার চেষ্টা করবেন না, না জেনে কারো নামে উল্টাপাল্টা কথা ছড়াবেন না।
সবাই ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন।
আল্লাহ তায়ালা যেনো সবাই কে ভালো রাখেন। সুস্থ রাখেন। আমীন।