মনজু ইসলামঃ
“ইলিশা ঘাট দিয়ে বহিরাগতরা আসছেন” এই নিউজ নিয়ে দিন রাত কাজ করা সাংবাদিক আকাশকে জেলের ভয় দেখিয়ে জরিমানা করেছেন ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান আহম্মেদ সায়েক। এই ঘটনার বিবরণ দিয়ে জেলাা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দক বরাবর খোলা চিঠি লিখেছেন সাংবাদিক আকাশ তার চিঠিটি ভোলা নিউজের পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে দরলাম।
“”লেখাটি ভোলা জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম সিদ্দিক স্যারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি,
স্যার আমি আকতারুল ইসলাম আকাশ। দৈনিক বাংলার কন্ঠ, ভোলা নিউজ ও বিডি ক্রাইম ২৪ ডটকম পত্রিকায় আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আমি আমরা সংবাদকর্মীরা ছুটে চলেছি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ও দেশের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে আমরা আমাদের লেখনির মধ্যই তুলে ধরার চেষ্টা করি সঠিক তথ্য/কারনটি।
দেশের এই দুঃসময়ে অনেকেই চেয়েছিলো যাঁর যাঁর নিজ জন্মস্থলে সে সে ফিরে যেতে। ইলিশা ঘাট দিয়ে যখন করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে ভোলায় হাজার হাজার মানুষ প্রবেশ করছে। তখন আমি/আমাদের মতো সংবাদকর্মী ই তা সংবাদ পরিবেশন করে আপনাদের দৃষ্টি গোচর করেছি। আর তাতে আপনারা ব্যবস্থাও নিয়েছেন।
স্যার আজকে তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে আপনার সাথে কথা বলেছিলো। আমি শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভোলায় যাতে কেউ বাহির থেকে ডুকতে না পারে সেদিকে সু দৃষ্টি রাখতে।
আমি যখন ইলিশা ঘাটে মানুষ প্রবেশ করছে এমন সংবাদ পরিবেশন করেছি। তখন থেকেই এই ভোলার অনেক সচেতন মানুষ আমাকে ফোন করে বলেছিলো, আকাশ ভাই নারায়ণগঞ্জ থেকে বরিশাল হয়ে ভোলার ভেদুরিয়া দিয়ে অনেক করোনা ভাইরাস ঝুঁকি নিয়ে মানুষ ভোলায় প্রবেশ করতেছে। যদি এই নিয়ে একটা নিউজ করতেন তাহলে, প্রশাসন এদিকে নজর রাখত। আমরা নিরাপদে থাকতাম।
জনগণের সেই তথ্য পেয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আজ রবিবার বিকেল ২টার দিকে ভেদুরিয়া ঘাটে যাই। গিয়ে নিউজ কাভারেজ করে ভোলায় ফিরছিলাম। আমার নিজ মোটরসাইকেল ছিলো আমার সাথে। আমি জানি এসময় দুজন মোটরসাইকেলে চড়া নিষেধ। তবে সংবাদকর্মীরা কি দুজনে চড়তে পারবে কিনা এ বিষয়টা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আমি ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মো. এনায়েত হোসেনকে অবগত করি। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আকাশ ভাই আপনারা তো সাংবাদিক। আপনারাও তো জনগণের সেবায় নিয়োজিত। আপনারা দুজন চড়তে পারেন। তবে ভাই মাস্ক এবং নিরাপত্তা বজায় রেখে চলবেন।
আমি ওসির সেই কথার সাথে একমত পোষণ করে, আজ রবিবার আমি আমার মোটরসাইকেল ক্যামেরা মাস্ক হেলমেট মাথার পিপি পড়েই ভেদুরিয়া ঘাটে গিয়েছিলাম। গিয়ে নিউজ কাভারেজ শেষে ভোলায় ফিরছিলাম। আমার মোটরসাইকেলে ভোলার দৈনিক আরেকটি পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন। তার কাঁধেই আমার ব্যাগ ও ক্যামেরা ছিলো।
নিউজ কাভারেজ শেষে আমি যখন ভোলা খেয়াঘাট ব্রিজ থেকে নামতেছিলাম। ঠিক তখনই ভোলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান আহম্মেদ সায়েক তার গাড়িটি আমার গাড়ির সামনে রেখে আমাকে গতিরোধ করেন। আমি তখন গাড়ি থেকে নেমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সালাম দিলাম, ‘ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বললেন আপনারা দুজন এক মোটরসাইকেলে কেনো.? আমি উত্তর দিলাম স্যার আমরা দুজন গণমাধ্যমকর্মী। নিউজ শেষে ভোলায় ফিরছি। আমার মোটরসাইকেল আছে আমার সাথের ওনার নেই। নিউজে তো আর একা আসা সম্ভব নয়। তাই ওনাকে সাথে নিয়ে আসলাম। এরমধ্যে আমি ওসি সাহেবের কথাটিও বলেছি। এমনকি আমি ঐসময় ওসি সাহেবের সাথে দুজন চড়ার বিষয়টি যে বলেছিলাম তাও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি ঐখানে দাঁড়িয়ে ওসি মহোদয়কে ফোনে কল করে তার সাথে কথা বলে দিতে চেয়েছিলাম। ম্যাজিস্ট্রেট কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সবশেষ ম্যাজিস্ট্রেট তার সাথে থাকা এসআইকে দিয়ে ওসিকে ফোন দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিতও হয়েছিলেন।
তবুও ম্যাজিস্ট্রেট কোন কথাই কর্ণপাত করেননি। উল্টো তিনি আমাকে বলছেন, দুজন চড়ার কারণে তিনি আমাকে ৬ মাসের জেল ও দুই হাজার টাকা জরিমানা করবেন। আমি তখন সাথে সাথেই আমার অফিসকে বিষয়টি অবগত করি। অফিস বলছে বিষয়টি ডিসি স্যারকে জানাতে। আমি তখন ডিসি স্যারকে তিনবার কলও দিয়েছিলাম। ডিসি স্যারের মুঠোফোন রিসিভ হয়নি। আমি যখন আবার আমার অফিসে ফোন দিচ্ছিলাম তখন রেগে ম্যাজিস্ট্রেট একেবারে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। আমি তখন তার নাম জিজ্ঞেস করছিলাম তাকে। তিনি নাম জিজ্ঞেস করায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। অবশেষে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মতো আমি ও আমার সাথে থাকা সে সংবাদকর্মী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করে বলছি, প্লিজ স্যার প্রথমবারের মতো আমার ভুল হলে আমাকে ক্ষমা করে দিন। আজকের পর থেকে দুজনে চড়ব না। আমরা সংবাদকর্মী। অনন্ত একবার তো আমাদের ক্ষমা করা যায়। তিনি আমাদের ক্ষমা করেননি। উল্টো এবিষয়টা আমি আমার অফিস ও প্রেস ক্লাবে জানানোর দায়ে তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি এটাও বলেছিলেন, ‘আমরা সাংবাদিকরা নাকি তাকে জ্বালাই.!!
এবার ডিসি স্যার আপনাকে বলছি, ‘কি এমন অন্যায় করেছিলাম আমি.? আমি তো হেলমেট মাস্ক মাথার পিপি সবই পড়েছিলাম। তবুও কেনো তিনি দুজন চড়ায় আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করলেন.? কি এমন অপরাধ করেছিলাম আমরা সংবাদকর্মীরা.? আমি তো গতকালও ভোলায় দেখেছিলাম পুলিশের মোটরসাইকেলে দুজন চড়া অবস্থায় পুলিশ মোটরসাইকেল চালাচ্ছে। আজকে বিকেলেও আমি যখন ভেদুরিয়া নিউজের উদ্দেশ্যে যাই। তখনও তো দেখলাম পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে দুজন চড়া। তাহলে আমাদের বেলায় এমন কেনো হলো.? আমরা সংবাদকর্মীরা এমন কি অন্যায় করলাম.??
আরেকটি বিষয় স্যার, ‘ম্যাজিস্ট্রেট জিমরান যে গাড়িতে ছিলেন সেই গাড়িতেও তো দেখলাম ৬-৭ জন। পুলিশ সদস্যসহ। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে সেই গাড়িতে তো শুধু ম্যাজিস্ট্রেট ও ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকার কথা নয়.??বিষয়টি বিবেচনা করতে আপনার কাছে প্রেরণ করলাম।
আকতারুল ইসলাম আকাশ, স্টাফ রিপোর্টারঃ দৈনিক বাংলার কন্ঠ। ভোলা সদর ভোলা। ১১ এপ্রিল ২০২০।””