ভোলা প্রতিনিধি ॥
ভোলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে অস্বীকার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বোরহানউদ্দিন নির্বাচন অফিসের অফিস সহকারী মনির হোসেন লোকমানের বিরুদ্ধে। স্বামীর অধিকার পাওয়ার দাবীতে ভোলার আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা করে ভূক্তভোগী সালমা বেগম। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) ভোলার জজ আদালতে হাজির হয়ে এই মামলা দায়ের করেন প্রতারনার শিকার সালমা বেগম। যাহার মামলা নং-১১৫/২০। প্রতারক মনির হোসেন লোকমান চরফ্যাশন পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের জালাল মাস্টারের ছেলে।
আদালতের মামলা সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কাশেমগঞ্জ এলাকার মেয়ে সালমা বেগম ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারী জাতীয় পরিচয়পত্র (ভোটার আইডি কার্ড) সংশোধনের জন্য চরফ্যাশন নির্বাচন অফিসে যান। সেখানে গেলে ওই অফিসের ‘অফিস সহকারী মনির হোসেন লোকমান’ ভোটার আইডি কার্ড দ্রুত সংশোধন করে দিবে বলে সালমা বেগমের কাছ থেকে কাগজপত্র নেয়। এসময় লোকমান ভুক্তভোগী সালমা বেগমের কাছ থেকে মোবাইল নাম্বার রেখে বাড়ী চলে যেতে বলে। পরের দিন লোকমান সালমা বেগমকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে লোকমান সালমা বেগমকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে লোকমান সুন্দর ভবিষ্যতে প্রলোভন দেখিয়ে সালমা বেগমকে প্রেমে রাজি করায়। এর কিছুদিন পর লোকমান সালমা বেগমকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। সালমা বেগম সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরল মনে বিবাহে রাজি হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারী-২০১৯ইং তারিখে লোকমান বিবাহের কথা বলে সালমা বেগমকে ঢাকার শ্যামলীতে লোকমানের বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে একজন কাজী ডেকে এনে চরফ্যাশন পৌরসভার বাসিন্দা জালাল মাস্টারের ছেলে লোকমানের সাথে সালমা বেগমের শুভ বিবাহ পড়ানো হয়। ওই সময় সালমা বেগম কাবিননামার কথা বললে লোকমান আইডি কার্ড সংশোধন করা হলে তারপর কাবিন করবেন বলে সালমাকে জানান। বিবাহের পর থেকে তাদের দুজনের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং দুজনের একাধিকবার মেলামেশা হয়। সালমা বেগমের বাড়ীতেও লোকমানের যাতায়াত শুরু হয়। লোকমান সালমা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে যেতো। কিছুদিন তাদের সম্পর্ক ভালোই চলছিলো। এসময় লোকমান সালমা বেগমের অশ্লীল ভিডিও ও ছবি তুলে রাখতো। কিছুদিন পর সালমা বেগম লোকমানের কাছে স্বামীর স্বীকৃতিসরূপ কাবিননামা চাইলে লোকমান ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। লোকমান উত্তেজিত হয়ে সালমা বেগমকে মারধর করে এবং তার সাথে কোন বিবাহ হয় নাই বলে জানায়। বিভিন্ন সময় সালমা বেগমের তোলা অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে সালমা বেগমকে হুমকি দিতো লোকমান। সালমা বেগমের বিবাহের বিষয়টি লোকমানের চাচা হারুন, আলম গংরাও জানতেন। তারা সালমা বেগমকে বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়ে ধৈর্য্য ধরার কথা বললে দিনের পর দিন ঘুরাতেন। একসময় তারা কিছু টাকা নিয়ে চলে যেতে সালমা বেগমকে প্রস্তাব দেন। সালমা বেগম তাতে রাজি না হওয়ায় আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন লোকজন দিয়েও লোকমান সালমা বেগমকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। সালমা বেগম নিরুপায় হয়ে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে জানায়। লোকমান গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি। লোকমান চরফ্যাশন নির্বাচন অফিস থেকে বদলী হয়ে পটুয়াখালী যোগদান করে সর্বশেষ বোরহানউদ্দিনে অফিসে কর্মরত আছে। স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে লোকমানের সাথে যোগাযোগ করলে সালমা বেগমকে প্রাণের হুমকি ও ইন্টারনেটে আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ছেড়ে দিবে বলে জানায়। একপর্যায়ে সে সালমা বেগমকে চিনে না বলে জানিয়ে দেয়। সালমা বেগমকে লোকমান বলে আমার অনেক টাকা ও ক্ষমতা আছে। আমাকে তুমি কিছুই করতে পারবে না, এই বলে তাকে হুমকি দিতো। পরে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগী সালমা বেগম বাদীয় হয়ে ভোলার জজ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-১১৫/২০।
ভুক্তভোগী সালমা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি গরীব ঘরের মেয়ে। আমার প্রথম বিবাহের পর দীর্ঘদিন সুখে-শান্তিতে সংসার চলছিলো। সেই বিবাহের ডিবোর্স হয় গত ৫ বছর আগে। আমার আগে ঘরে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৯ সালে জানুয়ারী মাসে আমার ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে প্রতারক লোকমান আমার কাগজপত্র এবং আমার ফোন নাম্বার রাখে। তারপর সে আমাকে ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা এবং প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে আমি রাজি না হলে সে ভবিষ্যতের কথা বলে আমাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। আমার সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিয়ে প্রস্তাবে রাজি হয়। সে আমাকে ঢাকা নিয়ে কাজী এনে বিবাহ করে। তারপর থেকে তার সাথে আমার স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। লোকমান বিভিন্ন সময় আমার আপত্তিকর অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে রাখে। বিষয়টি লোকমানের চাচা হারুন, আলম গংরাও জানতেন। তারা আমাকে একটু ধৈর্য্য ধরার কথা বলে শান্তনা দিতেন। পরে কাবিননামা চাইলে সে আমার সাথে প্রতারনা করে। আমার অশ্লীল ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিবে বলে হুমকি দেয় এবং আমাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে। আমি স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মনির হোসেন লোকমানের সাথে তার ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করলে তিনি বলেন, সালমা বেগম আমার কাছে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার জন্য আসে। পরে এক বন্ধুর কাছ থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে সালামই প্রথম আমার সাথে কথা বলে। তার সাথে আমার কিছুদিন আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। এর বাইরে আর কিছু নয়। তাকে আমি বিবাহ করিনি। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। অশ্লীল ভিডিও ও ছবির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তা অস্বীকার করেন লোকমান।
প্রতারক লোকমানের ছবি সংযুক্ত
##
ভোলা প্রতিনিধি
১৮-০২-২০ইং