নিউজ ডেস্ক।।
ভোলা থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী-০৪ নামক লঞ্চ থেকে গত ১৭ জুন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা’র মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের দাবী জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। ২৩ জুন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো দলীয় প্যাডে লিখিত বিবৃতি দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন,ভোলা কলেজ ছাত্রদল নেত্রী সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা কর্ণফুলী-০৪ লঞ্চের তিনতলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজের ৪ দিন পর তার মরদেহ লক্ষ্মীপুর থেকে উদ্ধার করা হয়। অভিযোগ রয়েছে ওই লঞ্চে সে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলো। নেতৃবন্দ বলেন,জুলাই যোদ্ধা সুকর্ণাকে বিভিন্ন সময় পতিত স্বৈরাচার ফ্যাসিষ্টের পদলেহীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল। তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওইসব ব্যাক্তিদের উল্লাস লক্ষ্যণীয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রদল এঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবী জানান। এদিকে রহস্যময় এমৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবীতে আজ মঙ্গলবার
(২৪ জুন) বেলা সাড়ে ১২ টায় ভোলা সরকারী কলেজ ছাত্র ও শিক্ষার্থীরা জেলা শহরে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদসভা করেছে।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের ৪ দিন পর ২১ জুন লক্ষ্মীপুর সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইস্পিতার পরিবার মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছেন ২২ জুন বিকালে। তথ্যটি নিশ্চিত করছেন,ইস্পিতার বাবা মো: মাসুদ রানা। তিনি জানান,তার মেয়ে সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতার লাশ রোববার (২১ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুর থানাধীন মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা নৌ-পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে তা ভোলা সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় জানায়। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুর নৌথানা মরদেহের পরিচয় পেতে বিলম্ব হওয়ায়
২২ জুন সকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে লক্ষ্মীপুর আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম কর্তৃক মরদেহটি সেখানেই দাফন করা হয়। ভোলা সদর মডেল থানায় ইস্পিতার বাবার দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির আলোকে থানা পুলিশ ইস্পিতার পরিবারকে লক্ষ্মীপুর নৌথানায় এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে মর্মে খবর দেয়। তাৎক্ষনাত ইস্পিতার বাবা মরদেহর ছবি দেখে নিশ্চিত হন এটি তার মেয়ে। সূত্রজানায়, সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা’ ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদল নেত্রী ও অনার্স তৃতীয় বর্ষের (প্রাণীবিদ্যা) শিক্ষার্থী। জানা গেছে,সে কলেজ ছাত্রদল আসন্ন কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রার্থী ছিলেন। ইস্পিতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়,১৭ জুন সকালের দিকে বাসা থেকে প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছে বলে বের হন তিনি। পরে আর সে বাসায় ফিরেননি। এ ঘটনায় ইস্পিতার বাবা মাসুদ রানা ভোলা সদর মডেল থানায় একদিন পর (১৮ জুন) তার মেয়ে নিখোঁজ দাবি করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইস্পিতার সহপাঠীদের ভিতরে বিভিন্ন প্রকার প্রশ্ন করতে দেখা দেখা গেছে। কেউ বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যা আবার কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করছেন, ইস্পিতা লঞ্চে ধর্ষণের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে এবিষয়ে ছাত্রদল নেত্রী ইস্পিতার পরিবারের বক্তব্য,তারা কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না। কিন্তু এটি হত্যা নাকী আত্মহত্যা তা তদন্ত করে বের করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। তবে ইস্পিতার বাবা মাসুদ রানা ভোলা নিউজ ‘কে জানান,বোরহান উদ্দিন উপজেলায় বাপ্পী নামের এক যুবকের সাথে তার মেয়ের সম্পর্ক ছিলো,যা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে এমভি কর্ণফুলী-০৪ লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু বাবু জানান,ওইদিন ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে কর্ণফুলী-০৪। ভোলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জের কালিগঞ্জ ঘাট পার হওয়ার কিছু সময় পর তিনি খবর পান, এক নারী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গিয়ে লাইফবয়া ফেলা হয়। একবার ওই তরুণীকে নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনি চোখের আড়াল হয়ে যান।পরে ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পর কোস্টগার্ডকে জানিয়ে লঞ্চটি ঢাকার পথে রওনা দেয়।
এ বিষয়ে কর্ণফুলী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, ১৭ই জুন সকালে কর্ণফুলী-০৪ লঞ্চ থেকে মেহেন্দিগঞ্জের পরে ইলিশা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চের তৃতীয় তলা থেকে এক তরুণী নদীতে ঝাঁপ দেয়। লঞ্চের মাস্টার খবর পেয়ে এক ঘন্টা ব্যাপী তাকে উদ্ধারের জন্য লঞ্চ বেক গিয়ার দিয়ে খোঁজাখুঁজি করে। তাকে না পেয়ে পরে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে চলে যায়। এ ঘটনায় লঞ্চে থাকা অন্য আরেক নারী ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঝাঁপ দেওয়া তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ দেয়। পরে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ওই লঞ্চ থেকে স্টাফ রাসেল হৃদয় (৩২) কেবিন বয় শান্ত (২৫),শমশের (২৭) ও অভিযোগকারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। ঘটনার প্রাথমিক তথ্য জেনে পরে পুলিশ তাদেরকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
এই ঘটনায় মুন্সিগঞ্জ থানার প্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম জানান,১৭ জুন কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে একজন নারী ধর্ষনের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করছে বলে ৯৯৯-এ অভিযোগ আসে। পরে পুলিশ ওই লঞ্চের দুই স্টাফ এবং অভিযোগকারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার তথ্যাদি সংগ্রহ করে তাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমানিত না হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা হয় ভোলা সরকারী কলেজ ছাত্রদল সদস্য সচীব ফজলুল করীম ছোটন’র সাথে। তিনি ভোলা নিউজ ‘কে জানান, সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতা ছাত্রদলের একজন সক্রীয় কর্মী ছিলেন। জুলাই গণ অভ্যুত্থান আন্দোলনে ভোলায় ছাত্র জনতার সাথে রাজপথে তারও সক্রীয় ভূমিকা ছিলো। তার মৃত্যু রহস্য উদঘাটন এবং আইনী ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান,তিনি।
উল্লেখ্য,নিহত শিক্ষার্থী সুকর্ণা আক্তার ইস্পিতার বাড়ী ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের নবীপুর গ্রামে। তার বাবা মো: মাসূদ রানা পেশায় একজন বোরাক চালক।
ভোলা সদর মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসনাইন আহমেদ পারভেজ গণমাধ্যমকে জানান,বিষয়টি তদন্ত করে খুব দ্রততম সময়ের মধ্যে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে। অপর একটি সূত্র জানায়,কলেজ ছাত্রীর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে একটি কম্বাইন্ড সার্চ টিম কাজ শুরু করছে।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান
মন্তব্য করুন