ভোলা নিউজ প্রতিবেদক।। ভোলার ঘরে ঘরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ না দিয়ে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস প্রদানের সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে ইন্ট্রাকোর সাথে সূন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চুক্তি বাতিলসহ ৬ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেছে দেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা ভোলার ২২ লক্ষ মানুষের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত “আমরা ভোলাবাসী” সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১২টায় ভোলা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আমরা ভোলাবাসীর আহ্বায়ক আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলা একটি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমৃদ্ধ এলাকা। গ্যাস জাতীয় সম্পদ। তাই ভোলাসহ সারা বাংলাদেশের উন্নয়নে গ্যাস ব্যবহৃত হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভোলার গ্যাস ভোলাবাসীকে না দিয়ে ভোলার বাহিরে যাবে এটা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। ভোলার গ্যাস ভোলার ঘরে ঘরে সংযোগের মাধ্যমে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বিগত সরকার প্রাথমিক ভাবে পৌর এলাকায় পরে পৌর এলাকার বাহিরে গ্যাস সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোলা সদর ও বোরহানউদ্দিন পৌর এলাকার প্রায় ৫০ কিলোমিটার গ্যাস পাইপ লাইন বসায়। সেই পাইপ লাইনের আওতায় ২০ হাজার পরিবারকে সংযোগ দেয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০৩৫ জন গ্রাহককে সংযোগ দিয়ে মাঝ পথে গ্যাস সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দূর্নীতিগ্রস্থ জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের চক্রান্তে ইন্ট্রাকোর সাথে সূন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অসম চুক্তির মাধ্যমে ভোলার বাহিরে গাজীপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস নিয়ে যাচ্ছে। এই চুক্তি সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক।
ইন্ট্রাকো সূন্দরবন কোম্পানির কাছ থেকে মাত্র ১৭ টাকা দরে গ্যাস কিনে ৪৭ টাকা দরে বিক্রি করছে। অথচ ভোলায় প্রতিষ্ঠিত সিরামিক কারখানা শেলটেক গ্যাস কিনছে ৩০ টাকা দরে। সে ক্ষেত্রে ইন্ট্রাকোকে কম দরে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই ইন্ট্রাকোর সাথে এই বৈষম্যমূলক চুক্তি বাতিল এখন সময়ের দাবী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ভোলা জেলা একটি খাদ্য উদ্বৃত জেলা। প্রতি বছর ৫ লক্ষ মেঃ টন খাদ্য শষ্য ও ৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড হয়ে ভোলার বাহিরে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে অবহেলিত ভোলাবাসী কিছুই পাচ্ছেনা। তাই ভোলার গ্যাস ভোলার বাহিরে নিতে হলে ঘরে ঘরে সংযোগসহ ভোলাবাসীর ৬ দফা যৌক্তিক দাবী মেনে নিতে হবে।
ভোলাবাসীর দির্ঘ দিনের দাবীর প্রতি সরকার কোনো কর্নপাত করেনি। বাধ্য হয়ে আন্দোলনরত ছাত্র – জনতা ইন্ট্রাকোর গ্যাস নেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে গত ৮মে-২৫ তারিখে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. মইনউদ্দীন ভোলায় এসে জেলা প্রশাসকের সম্নেলন কক্ষে আন্দোলনরত ছাত্র – জনতার প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের সাথে মতবিনিময় করে আমাদের যৌক্তিক দাবীগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলাপ করার জন্য ৭ দিনের সময় নেয়। ফলে ৯মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়। কিন্তু ১৯ মে পর্যন্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর কাছ থেকে কোনো সারা পাওয়া যায়নি।
এ অবস্থায় “আমরা ভোলাবাসী” এক জরুরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্ট্রাকোর সাথে চুক্তি বাতিল করে ভোলার প্রতিটি ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগ স্থাপন, সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন, ভোলা – বরিশাল সেতু নির্মান কাজ শুরু করা, গ্যাস ভিত্তিক সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপন, ভোলাকে স্থায়ীভাবে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ ৬ দফা দাবী আদায়ের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষনা করেছি। দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র – জনতার এ আন্দোলন চলবে বলে জানান তারা।
আমরা ভোলাবাসীর আহ্বায়ক আলহাজ্ব গোলাম নবী আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ভোলা জেলা বিজিপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী হারুন অর রশিদ, ইসলামি শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এম ওবায়েদুর রহমান বিন মেস্তোফা, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেছিন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধূরী ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্য সচিব মীর মোশারেফ অমি প্রমূখ।
পরে তারা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের ৫ দফা কর্মসূচি ঘোষনা করেন।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান
মন্তব্য করুন