ইব্রাহিম আকতার আকাশ,ভোলা: ভোলায় ধর্ষণের অভিযোগে আটক হওয়া মো. হাসান (২৫) নামের এক যুবকের মরদেহ থানার হাজতবাস থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই যুবক হাজতবাসের বাথরুমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) মধ্যরাতে ভোলা সদর মডেল থানার হাজতবাসে এ ঘটনা ঘটে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসনাইন পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হাসান সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের মেদুয়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে এবং সদ্য বিবাহিত।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন দুপুরে হাসানের বাড়িতে ফ্রিজে মাংস রাখতে এক নারী যায়। এসময় হাসান ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে হাসানকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। বিকেলের দিকে পুলিশ হাসানকে এবং ভিক্টিমকে উদ্ধার করে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর রাতে তাকে থানার হাজতবাসে রাখা হয়৷ সেখানে গলায় জায়নামাজ পেঁচিয়ে হাসান আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
পুলিশ বলছে, রাত ১২টা ১৮ মিনিটের দিকে হাসান হাজতবাসের বাথরুমে গিয়ে গলায় জায়নামাজ পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এরপর তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, থানার হাজতবাসের একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় হাসান নামের ওই যুবক হাজতবাসের মধ্যে একটি জায়নামাজ দাঁত দিয়ে কেটে বাথরুমে নিয়ে যাচ্ছে। বাথরুমে ঢুকার আগেও হাসান হাজতবাসের সামনে থাকা রডের সঙ্গে জায়নামাজ পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ বলছে, বাথরুমে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ নেই। যাঁর কারনে তাঁর আত্মহত্যার দৃশ্যমান কোনো ফুটেজ নেই। এছাড়াও হাসানকে থানা থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনো ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে পাওয়া যায়নি।
হাসানের মৃত্যুতে পুলিশের গাফলতি এবং ভিক্টিম নারী দায়ী দাবি তুলে পরিবার বলছে, হাসানকে স্থানীয়রা নির্মমভাবে পিটিয়েছিল। যেমনভাবে মানুষ কুকুরকেও মারে না। হাসানের সমস্ত শরীর আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। ওই নারী হাসানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছে। ওই নারীর সঙ্গে হাসানের পরিবারের জায়গাজমি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। যাঁর কারনে ওই নারী পরিকল্পিতভাবে হাসানকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছেন এবং পুলিশ হাসানের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আঘাত করেছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।
হাসানের মা শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমার ছেলে পুলিশকে বারবার অনুরোধ করে বলেছিল, ‘স্যার আমি একটু আমার মা এবং বউয়ের কাছে ফোন করমু মোবাইলটা একটু দেন। কিন্তু, এরপরও পুলিশ তাকে ফোন দেয়নি। তাকে একটু খাবারও খেতে দেয়নি। আমার ছেলে যদি অপরাধী হয়। তাহলে তাকে দেশের আইনে বিচার করবে। কিন্তু, তাকে এভাবে মানুষরা কেন মারল? পুলিশ একটুও দয়ামায়া করেনি’।
হাসানের স্ত্রী বলেন, হাসান সদ্য বিবাহিত। দেড়মাস তাদের বিয়ের বয়স। ওই নারী পূর্ব শত্রুতাকে কেন্দ্র করে হাসানকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, হাসান যখন আত্মহত্যা করে তখন সেখানের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য কোথায় ছিল? হাসানের মৃত্যুতে পুলিশের গাফলতি রয়েছে। পুলিশ তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করলে আজ হাসানের মৃত্যু হতো না।
এ ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাউকে বরখাস্ত করা হয়নি জানিয়ে ভোলা পুলিশ সুপার মো. শরীফুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘এটি সুইসাইড৷ আসামি হাসান হাজতবাসের বাথরুমে গিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে’। এছাড়াও এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এখানে পুলিশের কোনো গাফলতি নেই।
মন্তব্য করুন