জমিতে পা দিলে কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে না

 

ষ্টাফ রিপোর্টার ॥ জমিতে পা দিলে কেউই বেঁচে ফিরতে পারবে না। এ ভাবেই হুমকি ধামকির মাধ্যমে ভোলা পৌর সভার ৭নং ওয়ার্ডের উকিল পাড়ার বাসিন্দা মৃত আপরোজা খাতুনের ৬০ বছরের ভোগদখলীয় প্রায় ১১ শতাংশ জমি ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী সন্ত্রাসী কামরুল, মেজবাহ, শামীম, রুবেল গংরা। স্থানীয়রা মিলে বিষয়টিকে সমাধানে একাধিকবার শালিস বিচার করেও ওই সন্ত্রাসীদের ক্ষমতার দাপটে কোন ভাবেই করতে পারেনি এর সুরাহা। ওল্টো জমির প্রকৃত মালিক মৃত আফরোজা খাতুনের ওয়ারিশদেরকে হামলা মামলা দিয়ে করছেন তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৫৮ সাল থেকেই শহরের উকিল পাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন প্রধান সড়কের পাশেই ১০.৩৮ শতাংশ জায়াগা পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবে ভোগ দখল করে আসছে জমির প্রকৃত মালিক আফরোজা খাতুন। রীতি মতো এ জায়গায় তিনি দোকান ঘর উত্তোলন করে তা ভাড়া দিয়ে মাসের পর মাস ওই সকল ঘর থেকে ভাড়া উত্তোলন করে আসছে। ২০১৭ সালের ৩রা অক্টোবর জমির মালিক আফরোজা খাতুন মারা যান। এর আগেই ওই জমির একটি অংশ অর্থাৎ ১০.৩৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৩.৮৪ শতাংশকে ভিপি জমি আখ্যা দিয়ে ওই জমির মালিকানা দাবী করেন স্থানীয় সন্ত্রাসী কামরুল, মেজবাহ, শামীম, রুবেল গং। তারা তৎকালীন সৈরাচার সরকারের শাসনামলে ক্ষমতার দাপটে ২০১৫ সালের দিকেই ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে ওই জমির ৩.৮৪ শতাংশ নিজেদের দাবী করে তা নিয়ে ভোলার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মোট জমির ১০.৩৮ শতাংশের মধ্যে ৩.৮৪ শতাংশ নিয়ে মামলা চলমান থাকলেও বাকি জমিতেও এর প্রকৃত মালিক মৃত আফরোজা খাতুনের ছেলে-মেয়ের মধ্যে শাজাহান, কালিমুল্লা, সেন্টু, সেলিম, রোকেয়া, বিউটি, লিলি, পান্না, সেলি সহ দশ সন্তান ওয়ারিশ হিসেবে জমির মালিক হয়েও কোন ভাবেই তাদের জমিতে কোন কাজ কর্ম করতে পারছেন না তারা। শুধু তাই নয়, ওই জমিতে উত্তোলিত দোকানপার্ট এর ভারাটিয়াদেরকে সেখান থেকে জোরপূর্বক উঠিয়ে দিয়েছে ওই সকল সন্ত্রাসীরা। এমনকি দোকান গুলো সংস্কারের জন্য একাধিবার চেষ্টা করেও বরাবরই সন্ত্রাসীদের তোপের মূখে পড়তে হয়েছে জমির মালিক আফরোজা খাতুনের ওয়ারিশ গংদের। সন্ত্রাসীরা একে একে কয়েকবার তাদের উপর হামলা চালানোর মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। এ নিয়ে আফরোজা খাতুনের গংরা ১৪ নভেম্বর ২০১৭ সালে ভোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। যার নং ৭২২।
যদিও এ ঘটনায় একাধিকবার স্থানীয়রা শালিস বিচার করেও ওই সন্ত্রাসীদেরকে কোন ভাবেই সমাধানের পথে আনতে পারেনি। এমনকি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেও ক্ষমতার দাপটে সন্ত্রাসী কামরুল গংরা জেলা প্রশাসনকেও দেখিয়েছেন বৃদ্ধাঙ্গুলী। এ ব্যাপরে জমির প্রকৃত মলিক মৃত আফরোজা খাতুনের ওয়ারিশ গংদের সাথে কথা হলে তারা জানান, কামরুল গংরা যদি জমি পাওনা হয়েই থাকেন তাহলে তো এ নিয়ে বহুবার বসাবসি হয়েছে, কোনবারইতো তাদের দাবীকৃত জমির সঠিক কোন ধরনের কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। ওয়ারিশ গনদের মধ্যে শাজাহান, সিরাজুল, সেন্টু তারা বলেন, আমাদের ভোগদখলীয় জমির মধ্যে ৩.৮৪ শতাংশ জমি প্রতিপক্ষ দাবী করে তা নিয়ে তারা মামলা করেন। কিন্তু আমাদের বাকি জমিতে তারা কোন কাজকর্ম করতে দিচ্ছেন না কেন তা নিয়ে আমাদের কারোই বোধগম্য নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে আমাদের জতিতে থাকা দোকানপার্ট গুলোকে সংস্কারের জন্য আমরা লোকজন নিয়ে কাজ শুরু করতেই আমাদের প্রতিপক্ষ ওই সকল সন্ত্রাসী কামরুল গংরা দেশীয় অন্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এমনকি আমাদের জমিতে পা রাখলে কেউই আর জিবিত ফিরে যেতে পারবে না বলেও ওই সন্ত্রাসীরা এমনটি হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে প্রতিপক্ষ কামরুল গংদের সহযোগী রুবেল এর সাথে কথ হলে তিনি জানান, যেহেতু জমি নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে তাই এই জমিতে কেউই কোন ধরনের কাজকর্ম করতে পারবেন না। কিন্তু মোট জমির ১০.৩৮ শতাংশের মধ্যে মামলা চলছে ৩.৮৪ শতাংশ নিয়ে তাহলে বাকি জমিতে মৃত আফরোজা খাতুনের ছেলে সন্তানদেকে যেতে দেয়া হচ্ছে না কেনো এমন প্রশ্নে রুবেল এড়িয়ে গিয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে একাকিত্ব কথা বলার প্রস্তাব দেন তিনি।
এমতবস্থায় ওয়ারিশ সূত্রে জমির বর্তমান মালিক মৃত আফরোজা খাতুনের ছেলে মেয়েরা বিষয়টি সুষ্ঠু সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন। তা না হলে সামনের দিন গুলোতে এ নিয়ে বড় ধরনের সংঘাত সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপরে ভোলা সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, বেশি দিন হয়নি এ থানায় আমি যোগদান করেছি। তাই এ ব্যাপারে আমি কোন ভাবেই অবগত নই। এরপরও যদি বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে কোন ধরনের অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE