ঈদের খাবার-দাবার: বিশেষ নজরে থাকুক উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা

হেলথ কর্নার  |
অনলাইন ডেস্ক

ঈদ হলো আনন্দের দিন। আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খাবার। ঈদকে উপলক্ষ করে সবার বাসায় নানান মুখরোচক খাবার তৈরি হয়। ঈদের দিন সবাই সকালে নাশতার টেবিলে বসে মুখে দেন সেমাই, পায়েস, জর্দা, পোলাও কোর্মাসহ আরও কত খাবার। আর কোরবানির ঈদ হওয়ায় গরু বা খাশির মাংসের প্রাধান্য থাকে বেশি। তাই খাদ্যগ্রহণে আমাদের সবাইকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে একটু বিশেষ নজর দিতে হবে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের।

মুখরোচক খাবারের দিকে না তাকিয়ে খাবারের পুষ্টিগুণের দিকে তাকাতে হবে এ সময়ে। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই এ সময়ে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ঈদের খাবারকে মুখরোচক করতে গিয়ে নানা রকম ঘি ও মসলা ব্যবহার করা হয়। আর এতেই খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে, যেমন-মাইওকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, ব্রেইন স্ট্রোক ও পেরিফেরাল ভাসকুলার ডিজিজ। কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে, বৃদ্ধির সঙ্গে আনুপাতিক হারে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। লিভারে উৎপন্ন কোলেস্টেরল রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে সরবরাহ হয়ে থাকে।

দেখা গেছে যে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে সারা দেহের রক্তনালিতে স্থানে স্থানে স্তূপাকারে কোলেস্টেরল জমা হতে থাকে। এসব স্তূপকে অ্যাথেরোমা এবং জমা হওয়ার পদ্ধতিকে অ্যাথেরোসেক্লরোসিস বলে। অ্যাথেরোমাকে সাধারণের ভাষায় প্ল্যাক বলা হয়। যার ফলে রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি হয়ে থাকে। হার্ট ব্লকের জন্য রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলকে দায়ী করা হয়ে থাকে। লিভার কোলেস্টেরল উৎপন্ন করে থাকে। হজম প্রক্রিয়া ব্যবহারের জন্য পিত্তরস তৈরিতে কোলেস্টেরল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিধায় লিভার পিত্তরস তৈরির জন্য কোলেস্টেরল উৎপাদন করে থাকে। কোলেস্টেরলকে বেশ কয়টি ভাগে করা হয়। যাদের লিপিড নামেও অবিহিত করা হয়ে থাকে।

যেমন Total Cholesterol (TC) যার মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। LDL যাকে সবচেয়ে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। HDL এর মাত্রা বেশি থাকলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায় বলে বন্ধু কোলেস্টেরল বলা হয়। Triglyceride  (TC) যা চর্বি জাতীয় খাদ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। রক্তে এর মাত্রার কিছুটা বৃদ্ধি ঘটলেও কোনো সমস্যা হয় না, তবে অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি ঘটলে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। TG-এর স্বাভাবিক মাত্রা 150mg/dl-এর নিচে। 150mg/dl থেকে 250mg/dl পর্যন্ত মাত্রাকে High এবং 250mg /dl এর বেশি থাকলে তাকে Very high বলে বিবেচনা করা হয়। LDL এর মাত্রা 150mg/dl অথবা তার নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়। যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে মাত্রা 100mg/dl এর নিচে রাখাই উত্তম। HDL-এর মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে 40mg/dl এবং মহিলাদের 50mg/dl এর উপরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

পরামর্শ : যাঁদের বয়স কম, শারীরিক বা হজমেরও কোনো সমস্যা নেই, তাঁরা নিজের পছন্দমতো সবই খেতে পারেন, শুধু অতিরিক্ত না হলেই হলো, বিশেষ করে চর্বি-জাতীয় খাদ্য। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যায়। যাদের এনাল ফিশার ও পাইলস-জাতীয় রোগ আছে, তাঁদের পায়ুপথে জ্বালাপোড়া, ব্যথা ইত্যাদি বাড়তে পারে। তাই প্রচুর পরিমাণে পানি, শরবত, ফলের রস, ইসবগুলের ভুসি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি খাবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে আমাদের সচেতন হতে হবে। মনে রাখবেন প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান

SHARE