বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ভোলার চরফ্যাশনে ফের দুদকের হানা। জ্যাকবকে পবিত্র বলার কয়েক দিনের ব্যাবধানে চরফ্যাশনে অবৈধ হাজার কোটি টাকা আর্জনের গভীর আনুসন্ধানে নেমেছেন দুদক। অনুসন্ধানের প্রথমদিন দুদক বহুল আলোচিত মধুমতি ব্যাংক এর চরফ্যাশন শাখায় অবৈধ সেই ১১ একাউন্টের খোজ খবর নেন। একজন উপ পরিচালকের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের দুদকের তদন্ত দল মদুমতি ব্যাংকের সকল খুটি নাটি অনুসন্ধান করে দেখেন। এতে অনেক অসংগতি প্রথমিক ভাবে পেয়েছেন বলেও একটি নির্ভরযোগ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে এখনো মধুমতি ব্যাংক ভোলার চরফ্যাসন শাখার ৯ কোটি টাকার অনিয়ম নিয়ে তোলপাড় চলছে। আর সেই অনিয়মের তীর যার দিকে সেই ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার হাজার কোটি টাকা পাচারের গোপন তথ্য তুলে ধরলেন ভোলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। তবে নিজের দায় না এড়িয়ে বলেন, এসব অনিয়ম বাধ্য হয়েই করেছেন তিনি।
ভোলা প্রেস ক্লাবের হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ব্যাংকটির সাবেক ম্যানেজার মো: রেজাউল করিম বলেন, ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে মধুমতি ব্যাংকের ভোলার চরফ্যাসন শাখায় চাকরি করছেন তিনি। ম্যানেজার হিসেবে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ভাই জাহিদুল ইসলাম সৌরভ, তার ভাতিজা মধুমতি ব্যাংকের চরফাসন শাখা অফিসার তরিকুল ইসলাম নিয়ন্ত্রণ করতেন সবকিছু। ব্যাংকের ক্যাশ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে কোথায় নিত বা কী করত তা জানাত না। বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা এই ব্যাংকের ভল্টে রাখা হতো। তা জানতে চাওয়া হলে তার ওপর প্রেসার করা হতো বলে অভিযোগ করেন সাবেক এই ম্যানেজার মো: রেজাউল করিম।
রেজাউল করিম আরো বলেন, তার ওপর আনীত ১২টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে আট কোটি ৯৫ লাখ টাকা গরমিলের ছয় কোটি ১০ লাখ টাকা ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের ভাই জাহিদুল ইসলাম সৌরভ তার বিকাশ ব্যবসার জন্য নিয়ে সেই টাকা আটকে ফেলেন। ম্যানেজার টাকা চাইলে মাত্র ৪৫ লাখ টাকার চেক দেন। পরে সেই চেকটিও ডিজঅনার হয়।
এভাবে প্রায় প্রতিদিনই সৌরভ ৫, ৬, ৭ এমনকি ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকা তরিকুল ইসলাম তার ব্যবসার কাজে ব্যবহার করে আর ফেরত দেননি। তারা সব সময়ই এভাবে টাকা নিয়ে যেতেন আবার বিকেলে অথবা পরের দিন দিয়ে যেতেন। একবার ফেরত দিতে গড়িমসি করেন।
এ দিকে জাহিদুল ইসলাম সৌরভ ও তরিকুল ইসলাম শরীফ মধুমতি ব্যাংকের ভল্টের টাকা গ্রামীণ এন্টারপ্রাইজ, চার দেয়াল ডেকোরেটর, কায়িফ এন্টারপ্রাইজ, মো: জাহিদুল ইসলাম, উপকূল ব্রিকস, মিলন ট্রেডার্স, মা ট্রেডার্স, উপকূল কনস্ট্রাকশন, রুহি ফার্নিচারসহ একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রায়ই লেনদেন করে তারা এসব অর্থ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার অভিযোগ করেন রেজাউল করিম। তারা মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাসন শাখাকে পারিবারিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এই ব্যাংকের মালিকদের মধ্যে স্থানীয় এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যদের ইশারায় ব্যাংক চালাতে হতো ব্যাংক বলেও অভিযোগ করেন সাবেক ম্যানেজার। উল্লেখ্য, ভোলার বাসিন্দা রেজাউল করিম মধুমতি ব্যাংক ভোলার চরফ্যাসন উপজেলা শাখায় ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে কর্মরত থাকার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মধুমতি ব্যাংকের এক অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশনে ১২টি পে-অর্ডারের বিপরীতে তার বিরুদ্ধে আট কোটি ৯৫ লাখ টাকা গরমিলের অভিযোগ তোলেন। বলা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা হলেও তা পরে ভল্টে জমা রাখেননি তিনি। তবে রেজাউল করিম বলেন, এসব টাকা তিনি উত্তোলন করে জাহিদুল ইসলাম সৌরভ ও তরিকুল ইসলাম শরীফকে দিয়েছেন। তারা তা ফেরত দেননি। পরে জাহিদুল ইসলাম ৪৫ লাখ টাকার একটি চেক দিলেও তার অ্যাকাউন্টে অর্থ না থাকায় তা ক্যাশ করা সম্ভব হয়নি।
১১ একাউন্টের মাধ্যমে সকল অনিয়মের তথ্য সহ বিস্তারিত আসছে…….