ডেস্ক অনলাইন,
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কী এমন পরিবর্তন আনবে, তাদের ইশতেহার দেখে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দেয়, দেশ চায়নি তারা দেশকে কী দিতে পারবে?
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিজয় দিবসের আলোচনায় এসব কথা বলেন দলের সভাপতি।
এর কয়েক ঘণ্টা আগে ১৪ দফা অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে ঐক্যফ্রন্ট, যেখানে ছিলেন ড. কামাল হোসেনও। সেখানে ১৪ দফা অঙ্গীকার করা হয়। ফ্রন্ট নেতারা দাবি করেন, তারা একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন। রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওনারা কী পরিবর্তন করে ফেলবে? আজকে যারা এক হয়েছে তারা কারা? একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সে যুদ্ধাপরাধীরা কীভাবে নমিনেশন পায়, যারা বাংলাদেশই চায়নি। আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। মনে হয়, যেন নামটাই নেওয়া উচিত না।’
‘মানুষ ভালো থাকলে তাদের ভালো লাগে না। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে কোন পরিবর্তনের কথা বলছেন তারা? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দিয়ে পরিবর্তন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেণ, ‘এরা মানুষকে কিছু দিতে পারবে না। এদের কাছে দেশবাসীর চাওয়ারও কিছু নাই।’
‘আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন, যুক্তি দেখান, বুদ্ধি দেন, বড় বড় কথা বলে, আদর্শের বুলি আওড়ায়- আজকে তাদের সব ধরনের উচ্চবাচ্য কোথায় হারিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে খুনিদের সাথে, দুর্নীতিবাজ অস্ত্র চোরাকারবারিদের সাথে। কীসের স্বার্থে কেন- এটাই প্রশ্ন।’-
‘আমার তাদের জন্য করুণা হয়, কারণ তারা দিকভ্রষ্ট। তাদের আর কোনো নীতি নাই। নীতিভ্রষ্ট, আদর্শহীনরা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই এবং দিতেও পারবে না। আমি বলব এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।’
স্বেচ্ছাচারীতা কোথায় হলো?
ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী ইশতেহারে দাবি করেছে গত ১০ বছরে ‘কল্পনাতীত স্বেচ্ছাচারিতা’ করা হয়েছে। এর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দশ বছরে আমরা যে পরিবর্তনটা এনেছি, সেই পরিবর্তনটা অনেকের চোখে পড়ে না? যখন মানুষ ভালো থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা কী করে হল- এটা আমার প্রশ্ন। কী দেখতে পেল তারা?’
‘তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম, তারা ঘোষণা করেছে- স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে।’
‘এ পরিবর্তন কি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন, দেশের সমস্ত উন্নয়ন ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া?’
‘এই পরিবর্তন তারা আনতে চান? ছিল তো ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই ৪৭ বছরের মধ্যে ২৯ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ?’
‘আর আমাদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দুর্নীতি পায়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। বাংলাদেশের কোনো মানুষের মাথা হেঁট হোক- সেটা করি নাই কখনও। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গেলে সম্মান, মর্যাদা পাচ্ছে, সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায়?’
‘বাংলাদেশের কপালে যে দুর্নীতিগ্রস্তের তকমা ছিল, আমাদের ১০ বছরের শাসনামলে তা দূর করা হয়েছে। মানুষের জীবনমানে আজ পরিবর্তন হয়েছে। তারা আজ আশাবাদী হতে পারে। আস্থার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে।’
‘সাধারণ মানুষ আর তৃণমূলের উন্নয়নই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। হাওয়া ভবনের মতো কোনো দুর্নীতির কারখানা আওয়ামী লীগ নেয়নি।’
আওয়ামী লীগই জিতবে
আগামী নির্বাচনে আবার আওয়ামী লীগ জিতবে বলেও প্রত্যয়ের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তাদের (ঐক্যফ্রন্ট) সরকার প্রধান কে হবেন- তা জানেন না তারা। দেশের মানুষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমার বিশ্বাস, দেশের মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেবে না। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে কেউ থামিয়ে দিতে না পারে- সেজন্য আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন আওয়ামী লীগের।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১৭ডিসেম্ববর-২০১৮ইং)