ডেস্ক: ভোলারনিউজ.কম,
জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসের পুরো সময়টাই ইলিশের ভরা মৌসুম, কিন্তু সেই সময় পেরিয়েছে অনেক আগেই, এরপরও ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নাই। বাজারেও মিলছে না মানুষের কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। উত্তাল মেঘনা-তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েও ইলিশসহ কোনও মাছেরই দেখা মিলছে না জেলেদের জালে। তবে জেলেদের দাবি, সাগরে প্রচুর ইলিশ রয়েছে।যা ও বা পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই সাগরের। সেই ইলিশের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সাগরের ইলিশের তুলনায় নদীর ইলিশের স্বাদ বেশি। সাগরের ইলিশের স্বাদ কিছুটা লবণাক্ত হয়ে থাকে, নদীতে এসে স্রোতের প্রতিকূলে সাঁতার কেটে ইলিশ উজানের দিকে চলে আসে বলে তার গায়ের লবণ ঝরে যায়, ফলে ইলিশের আকার ও স্বাদ দুটোই বাড়ে।
এ কারণে সাগরের চেয়ে নদীর ইলিশের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই জনমনে প্রশ্ন- ‘সময় তো চলে যাচ্ছে, আর কবে দেখা মিলবে সেই কাঙ্ক্ষিত ইলিশের?’ সাধারণত বছরের এই সময়ে নদীতে ইলিশের দেখা মিললেও এবছর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না। হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন ভোলার জেলেরা। দু’একটা ইলিশ পেলেও, তা বিক্রি করে উঠছে না খরচের টাকা। জাল তৈরি ও অন্যান্য ব্যয় মেটাতে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে জেলেদের। ভোলায় নিবন্ধিত ১ লাখ ৩২ হাজার ২ শত ৬০ জন জেলেসহ ৩ লাখেরও বেশী জেলের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে।
শোধ করতে পারছেন না ধার দেনা ও ঋণের টাকা। ভোলা জেলার বিভিন্ন মৎস ঘাট ঘুরে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে পানির স্রোত প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই সাগর থেকে ঝাঁক বেঁধে ইলিশ নদীর মোহনায় আসতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নদীর গতিপথ পরিবর্তন,জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব,নদীর মধ্যে জেগে ওঠা নতুন চর―এই তিন কারণে নদীতে প্রয়োজনীয় স্রোত নেই।
আর এ কারণেই প্রবল বৃষ্টি থাকার পরেও এই ভরা মৌসুমে ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ভোলার ইলিশা, ধনিয়া, রাজাপুর, ভোলার খাল, দৌলতখানের চৌকিঘাট, তজুমদ্দিন উপজেলার সোনাপুর, স্লুইসগেইট, চরফ্যাশনের বেতুয়া, বেতুয়া, সামরাজ, ঢালচর, ঘোষেরহাট মৎস ঘাটের একাধিক মাঝিদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বৈশাখ মাস থেকে ইলিশের ভরা মৌসুম থাকলেও তারা মহাজন থেকে জাল, তৈল, খাবার, নিয়ে বারবার নদীতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসায় মহাজনের দেনা পরিশোধ করতে পারেনি।বউ ছেলে-সন্তান নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ঘোষেরহাট ঘাটের ইউনুছ মাঝি বলেন, ৭/৮ জন ভাগি মাল্লা নিয়ে ঘাট থেকে ২০ হাজার টাকা বাজার নিয়ে তেতুলিয়া নদীতে ইলিশ মাছ ধরার জন্য যাই, ফিরে এসে ৩৫০০ হাজার টাকার ইলিশ মাছ বিক্রি করিয়াছি।
একই উক্তিতে জামাল মাঝি বলেন, প্রায় ৩০ হাজার টাকা বাজার নিয়ে মাত্র ৪ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করিয়াছি। বেতুয়াঘাটের রইজল মাঝি বলেন, ১৬/২০জন ভাগি মাল্লা নিয়ে ঘাট থেকে ৫০হাজার টাকা বাজার নিয়ে মেঘনা নদীতে একগইন (এক সপ্তাহ)-এর জন্য যাই। গইন শেষে ৬হাজার টাকার ইলিশ মাছ বিক্রি করিয়াছি। একই উক্তিতে শফি মাঝি বলেন, প্রায় ৬০হাজার টাকা বাজার নিয়ে মাত্র ৯হাজার টাকার মাছ বিক্রি করিয়াছি।
অাহম্মেদপুর ইউনিয়নের শুকনাখালীর মোঃ কামাল হোসাইন জানান, প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে নৌকা জাল তৈরি করে সাগরে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছি। এখন শুনি নদীতে মাছই নেই। ভোলার ইলিশ ব্যবসায়ী (আড়তদার) সেলিম হোসেন বলেন, প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় কিছু জেলে নদীতে সারা বছরই বিভিন্ন মাছের পোনা ধরে। এর মধ্যে ইলিশের পোনাও জালে ধরা পড়ে। এতে ইলিশের উৎপাদন কিছুটা ব্যাহত হয়। ভরা মৌসুমে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ কম ধরা পড়ার এটিও একটি কারণ বলে মনে করেন তিনি।
ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিককালে ইলিশের মৌসুমে পরিবর্তন আসায় এখন মাছ ধরা পড়ছে না , আগে জুলাই মাসে জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়তো, তবে এখন আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নদীতে চর পড়ার কারনে সাগর ও নদ-নদীতে এখন আর আগের মত মাছ ধরা পড়ছেনা। এ ছাড়া যে সময় এবং যে পরিমান বর্ষা পড়ার কথা সে পরিমান বর্ষা এখনো পড়া শুরু হয়নি। তবে আশা করা যায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে বর্ষা শুরু হলে নদীতে জেলেদের জালে রূপালী ইলিশ ধরা পড়বে।
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ২৫জুলাই-২০১৮ইং)