অনলাইন ডেস্ক।। দেশে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ১১৯ জন সাংবাদিককে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়েছে। একই সময়ে ১৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)।আসক জানায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। জানুয়ারি থেকে জুন এই ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ছিল উদ্বেগজনক। এ ছাড়া বেআইনি আটকের অভিযোগ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন, সীমান্তে হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে।সোমবার প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ মাসে ঢাকায় সর্বাধিক ২৯ জন এবং চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ৮ জন করে সাংবাদিককে হয়রানি ও নির্যাতন করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বরাত দিয়ে আসক জানায়, ৬ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৪টি মামলার মোট আসামি হয়েছেন ৬০ জন। এর মধ্যে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার হয়েছেন ২৬ জন। এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে ৪ জন এবং গুলিতে ২ জনসহ মোট ৬ জন মারা গেছেন।এরমধ্যে র্যাব হেফাজতে নওগাঁয় সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাকে বিদ্যমান আইন ও যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার অন্যতম উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এ ছাড়া একই সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ১৭৯টি। এতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন এবং আহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৪২২ জন।এরমধ্যে নরসিংদীতে ৩ জন নিহত, ঢাকায় ৭টি ঘটনায় ১৯২ জন আহত এবং বরিশালে ১০টি ঘটনায় ১৩৯ জন আহত হয়েছেন।আসকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ৬ মাসে অন্তত ১১ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে ৫টি ঘটনায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৩টি বাড়িঘরসহ ১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় ১ জন নিহত ও অন্তত ৬২ জন আহত হয়েছেন। এ হামলার ঘটনায় ১০৩টি বাড়ি ও ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত ৬ মাসে যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতা হয়েছে ১৫৪ জন নারী-পুরুষের ওপর। এরমধ্যে ৭৯ জন নারী ও ৭৫ জন পুরুষ। যৌন হয়রানির কারণে ১০ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে, যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৩ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছে ৩ জন নারী। এ ছাড়া ৬৬ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।পারিবারিক নির্যাতন করা হয়েছে ২৫৩ জন নারীর ওপর। এরমধ্যে ১৫৬ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫৯ জন নারী। শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে ৩৮ জন নারীর ওপর। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতন করা হয়েছে ৭৪ জন নারীর ওপর। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৩৪ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের পর আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন নারী। এরমধ্যে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে ৩৭ জনকে। এ সময়কালে মোট ১৩ জন গৃহকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জন মারা গেছেন।আসক জানায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের প্রায় সবকটি জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সর্বাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায় ২৭। এরপরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জে ২২, চট্টগ্রামে ১৬ এবং বগুড়ায় ১৫।এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৬ মাসে মোট ৮০৪ শিশুকে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যা করা হয়েছে ১০৯ শিশুকে। ১ ছেলে শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৪৫ শিশু। বিভিন্ন সময়ে মোট ৮৭ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ৬ মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন মোট ২৪ জন। এরমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯ জন, খুলনা বিভাগে ১ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন নিহত হয়েছেন।আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পায় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় নাগরিকের সব ধরনের মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার দ্রততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায় আসক।দেশের১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসক সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে জানায় সংগঠনটি।
ভোলা নিউজ / টিপু সুলতান