নিউজ ডেস্ক ঃ অপেক্ষায় থেকে থেকে শিক্ষার্থীদের কেটে গেছে ৫৪৩টি সকাল। কবে খুলবে স্কুল-কলেজ এ প্রশ্ন ছিল অভিভাবক আর সাধারণ মানুষের। করোনা মহামারিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টানা দেড় বছর পর আজ খুলছে। মহামারিতে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পাঠ কার্যক্রমে যুক্ত থাকলেও শ্রেণিকক্ষে ছিল তালা। দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষ আবার সরব হবে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। বিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হওয়াদের কারও কারও আজ হবে প্রথম স্কুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ বিরতির পর করোনা ঝুঁকির মধ্যেই খুলছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।সরকারি নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হবে পাঠদান। কোথায়, কীভাবে ক্লাস হবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় কি ব্যবস্থা নিতে হবে তার বিস্তারিত নির্দেশনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগেই পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রতিষ্ঠানগুলোও নিয়েছে প্রস্তুতি। গতকাল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা গেছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি নিতে। দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারার আনন্দ শিক্ষার্থীদের মাঝেও। তারাও প্রস্তুতি নিয়েছে মহামারিকালে প্রথম পাঠ গ্রহণের দিনটি উদ্যাপনে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যথাযথ নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, সামনে সংক্রমণ বাড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবার বন্ধ করে দেয়া হতে পারে।ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। এতদিন অপেক্ষার পর স্কুলে স্টুডেন্টদের নিয়ে ক্লাস করে আনন্দ উপভোগ করতে পারবো। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। স্টুডেন্টদের সঙ্গে আবার সেই আগের মতো মুখোমুখি বসে ক্লাস নিতে পারবো। ফিরে আসবে আগের সেই পুরনো চিত্র। এটা সত্যিই আনন্দের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে ক্লাস নেয়ার জন্য মোটামুটি সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আমরা আমাদের স্টুডেন্টদের আনন্দের সঙ্গে ক্লাস করাতে চাই। তাদের সবাইকে স্কুলে স্বাগত জানাই। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুলে সব শাখা মিলে প্রায় ২৬ হাজারের কাছাকাছি স্টুডেন্ট আছে। কলেজে একেক ক্লাসে ১৫০ জন করে স্টুডেন্ট। যেমন, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ১৫০ করে স্টুডেন্ট আমাদের সেটাকে অর্ধেক করে দুই শিফটে ক্লাস নিতে হবে। এইরকম আমাদের ১৭টি শাখা আছে। যাদের প্রতিদিন ক্লাস করার কথা তাদের তো প্রতিদিন ক্লাস করতে হবে। যে সমস্ত ক্লাসের স্টুডেন্টদের একদিন ক্লাস করার কথা তাদেরও ভাগ করে করে দুইদিন করে ক্লাস নিতে হবে। কারণ এক ক্লাসে তো বেশি স্টুডেন্ট নিয়ে ক্লাস করানো সম্ভব না। এতে করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশংকা থেকে যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একদিন প্রতিষ্ঠানে আসবে। সপ্তাহে প্রতিদিন নির্দিষ্ট শ্রেণিতে দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপাতত এসেম্বলি বন্ধ থাকবে। প্রতিদিন নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুযায়ী তথ্য পাঠাতে হবে।
ওদিকে স্কুল পরিচালনা করতে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনা অনুযায়ী দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরৎ (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা জেড বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক গ্রুপে ভাগ করে একাধিক কক্ষ ও শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহের ছয় দিন চলবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে একদিন আসবে। একইদিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণির বা সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হালনাগাদ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে। শ্রেণি কার্যক্রমে গ্রুপ ওয়ার্ক ও পেয়ার ওয়ার্কের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী শিখন কাজ আপাতত বাদ রাখতে হবে। শিক্ষকরা মাস্ক পরে ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন তিনি। ক্লাস শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। সব শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একত্রে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করতে দেয়া যাবে না। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একের পর এক কক্ষের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ করতে হবে। একাধিক শিফটে ক্লাস চললে, আগের শিফট ও পরের শিফটের ক্লাস শুরুর মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটের বিরতি রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ পানির বোতল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি ঘরে বসে শিখি, বাংলাদেশ বেতার ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম, গুগল মিটের মাধ্যমে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম ক্লাস রুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অব্যাহত রাখতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী নিজে বা পরিবারের সদস্যদের করোনার লক্ষণ দেখা দিলে বা আক্রান্ত হলে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে না। তারা ঘরে বসে শিখি ও অনলাইন পাঠদানে অংশ নেবে। একই কারণে ওই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে অনুপস্থিত গণ্য করা যাবে না। কোনো এলাকায় করোনা সংক্রমণের হার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করবে। ওদিকে স্কুল-কলেজ খুললেও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি। খোলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর বৈঠকের কথা রয়েছে। ওই বৈঠকের পর খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী মাসের শুরুতে বিশ্ববিদ্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হলে গত বছরের ১৭ই মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। মাঝে সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্ননি হলে সরকারি বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধই থাকে। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও সরকারি এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন পক্ষ। প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের তরফেও কর্মসূচি পালন করা হয়।