সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ

 

।। তাইফুর সরোয়ার।।

সংবাদপত্র সমাজের দর্পন স্বরূপ। এই দর্পনে যিনি আলোর সঞ্চার করেন তাকে বলা হয় সাংবাদিক। একজন সাংবাদিক তার লেখনীর মাধ্যমে সমাজের নানান অনিয়ম, অসঙ্গতি, সমস্যা ও সম্ভাবনাকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন। এতে করে প্রকৃত অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসে, সমস্যাগুলোকে সম্ভবনায় রূপ দেয়া যায়। সমাজে ফিরে আসে শান্তি ও শৃঙ্খলা।

একজন সাংবাদিক চরম ঝুকির মধ্যে থেকে সকলের সামনে সত্যকে উন্মোচন করার চেষ্টা করেন। কোন সংবাদ কোন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চলে গেলে কখনো কখনো সেই সাংবাদিক ঐ গোষ্ঠীর তোপের মুখে পরেন। তখন তাকে বিভিন্ন ভয়, ভীতি দেখানো হয়। এমন কি মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।

সম্প্রতি ভোলা সদর উপজেলায় “দৈনিক সংবাদ দিগন্ত” পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও “প্রভাতি নিউজ” এর স্টাফ রিপোর্টার শামীম আহাম্মেদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে মাদক নিয়ে লেখার কারনে তিনি এই হামলার শিকার হন। এদিকে প্রায় দুই মাস আগে ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল ওজনে কম দেওয়ার প্রতিবেদন করায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ডব্লিউ নিউজ ৩৬০ ডট কম নামের একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক ও বাংলাদেশ অনলাইন প্রেসক্লাবের ভোলা শাখার সভাপতি সাগর চৌধুরী। ভোলাসহ সারাদেশে বেড়েই চলছে সাংবাদিক নির্যাতনের সংখা।

গত ৮ মে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি তথ্য প্রকাশ করে। তথ্যে এ বছরের গত চার মাসে ৮৫ সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলার সময় তিন দিনে অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী আহত হন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা দেয়া হয়েছে এবং নানাভাবে হয়রানি ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত।

সংবাদপত্রকে রাষ্ট্রের ফোর্থ স্টেট বলা হয়। একটি দেশ কতটা গনতান্ত্রিক, তা নির্ভর করে অনেকেটা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর। সাংবাদিকদের মনে করা হয় জাতির বিবেক। সংবাদিক নির্যাতনকারীরা উপর মহলের আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায়, তারা বরাবরই পার পেয়ে যায়। দু একটি ঘটনায়, বিচার হলেও অনেক ক্ষেত্রেই আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে পার পেয়ে যায় প্রকৃত অপরাধীরা।

সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি অপরাধীদের আরো অপরাধ করতে উৎসাহী করে তোলে। সত্য সংবাদ প্রকাশের কারণে কোন সাংবাদিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শিকার হলে, দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে সন্ত্রাসীদের দ্রুততম সময়ে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

SHARE