সাংবাদিকতা, সংগঠন এবং কিছু কথা

 

।। তাইফুর সরোয়ার।।

সংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। নানা প্রতিকূল পরিবেশে এমন কি মৃত্যু ঝুঁকিতে থেকেও সাংবাদিকরা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরেন “সত্য”কে। জাতীয় পর্যায়ের গণমাধ্যমেগুলোতে সাংবাদিকতার যথেষ্ট নিয়ম নীতি মানা হলেও মফস্বল সাংবাদিকতায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এড়িয়ে যাওয়া হয় এই সকল নিয়ম কানুন। অধিকাংশ মফস্বল সাংবাদিকদের নেই সাংবাদিকতার কোন প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মফস্বল সাংবাদিকতা চলছে “কপি এন্ড পেস্ট” স্টাইলে। বেশিরভাগ মফস্বল সাংবাদিকদের মাসিক বেতন বা সম্মানীর ব্যবস্থা না থাকায় কিছু সাংবাদিক সাংবাদিকতার কার্ডকে পূঁজি করে বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এই সব কারণে গ্রহণ যোগ্যতার দিক দিয়ে মফস্বল সাংবাদিকতা মূল ধারার সাংবাদিকতা থেকে কিছুটা হলেও পিছিয়ে আছে। আমাদের দ্বীপ জেলা ভোলাতেও মানা হয় না মফস্বল সাংবাদিকতার যথাযথ নিয়ম নীতি।

ইদানিং সোস্যাল মিডিয়ায় ভোলার সাংবাদিকদের বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক সংগঠনের আত্নপ্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু খারাপটা তথনই, যখন দেখা যায়- সকালে সংগঠনের জন্ম হয়, আর দুপর না গড়াতেই সেই সংগঠনের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নিজেকে সংগঠন থেকে প্রত্যাতার করে নেয় বা সংগঠনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে সোস্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দেয়। অর্থাৎ সবটাই হচ্ছে একের সাথে অন্যের কোন যোগাযোগ ছাড়াই। এই সংগঠনগুলো অনলাইনেই থাকে, অফলাইনে এদের উপস্থিতি বা কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পরে না। সাংবাদিকতার উন্নয়ন বা সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে এরা নিজেদের প্রচার করতেই বেশি ব্যস্ত থাকে।

ভোলায় সাংবাদিকদের নামসর্বস্ব বিভিন্ন ভুঁইফোঁড় সংগঠন না করে, সকলকে নিয়ে একটি কার্যকর সংগঠন গঠন করা হলে সেটা সবচেয়ে ফলপ্রসু হবে বলে আশা করছি। এই লক্ষ্যে ভোলার প্রবীন ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের নিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি করা যেতে পারে। সেই কমিটি পরবর্তীতে ভোলার সকল সাংবাদিকদের সাথে আলাপ আলোচনা করে, তাদের পছন্দের ভিত্তিতে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। এই কমিটি একটি নীতিমালা তৈরি করবে, যা ভোলার সকল প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ পেপারগুলো বাধ্যতামুলকভাবে অনুসরণ করবে। এই কমিটিই নির্দিষ্ট করে দিবে সাংবাদিকতা করার নূন্যতম বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা। শিক্ষানবিশ সাংবাদিকদের জন্য এই কমিটি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। সাংবাদিকদের সম্মানীর বিষয়টি নিয়েও এই কমিটি কাজ করবে। দায়িত্বপালন কালে কোন সাংবাদিক হেনস্তা ও নির্যাতনের শিকার হলে এই কমিটি সেই সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াবে।

ভোলায় সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে এবং পেশাদার সাংবাদিক তৈরি করতে ভোলার প্রবীন ও অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ প্লাটফর্ম চালু করা সময়ের দাবী। আশা করি সাংবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে এগিয়ে এসে ভোলায় “মফস্বল সাংবাদিকতা”কে একটি সুন্দর ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিবেন।

সহ সম্পাদক,
ভোলা নিউজ।

SHARE