সময় এসেছে সুন্দরবনকে নিয়ে নতুন করে ভাববার

 

তাইফুর সরোয়ারঃ-

সুন্দরবন! বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এক প্রশস্ত বনভূমির নাম যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। বাংলাদেশের মতো ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলের জন্য সুন্দরবন অল্লাহর আশির্বাদ স্বরূপ এক প্রাকৃতিক রক্ষা কবজ।

সমুদ্র হতে সৃষ্ট প্রায় প্রতিটি দুর্যোগেই সুন্দরবন বাংলাদেশের পক্ষে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়, ২০০৭ সালের সিডর, ২০০৯ সালের আইলা, ২০১৬ সালের রোয়ানু, ২০১৮ সালের বুলবুল ও ২০১৯ সালের ফণীর ধ্বংসলীলা থেকে সুন্দরবন রক্ষা করেছে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিকে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ভয়াবহতা থেকেও বাংলাদেশকে রক্ষা করতে সুন্দরবন উজাড় করে দিয়েছে নিজেকে। আঘাতের পর আঘাতে নিজে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, কিন্তু দেশ ও দেশের মানুষকে আঘাতের আঁচ লাগতে দেয় নি।

আম্পান যে গতি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল তার প্রভাব আটকে দিয়েছিল সুন্দরবনের গাছপালা। ভারতে আম্পানের মূল আঘাতের পর ২শ মাইলের মধ্যে থেকেই সুন্দরবন বাতাসের গতিবেগ প্রতিরোধে ভূমিকা নিয়েছে। ভারতে মূল ঝড়ের আঘাত ১৮০ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশের খুলনায় এ আঘাত ৯০ কিলোমটিারের মধ্যেই ছিল। বাংলাদেশে আঘাত হানার আগেই সুন্দরবন এর শক্তি কমিয়ে দেয়। ফলে এই ঝড়ে যে পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে উপকূলের মানুষ ও সম্পদ রক্ষা পেয়েছে। এর জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতাও ৩ থেকে ৪ ফুট কমিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শ্বাসমূলীয় বনটি।

এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সুন্দরবনকে নিয়ে নতুন করে ভাববার। বার বার যে বনাঞ্চল আমাদের সমুদ্র হতে সৃষ্ট বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে রক্ষা করছে, তাকে রক্ষা করতে না পারলে যে আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই রক্ষা করতে পারব না। মহা পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দরবনের গাছ পালা ও জীব বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে হবে আগামী প্রজন্মকেকে একটি সুন্দর ও নিরাপদ বাংলাদেশে উপহার দিতে।

SHARE