সময়টা ভালো নয়: দলীয় নেতাদের- সেতুমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক, ভোলানিউজ.কম,

এখন সময় ভালো নয় বলে নিজ দলের নেতাদের সতর্ক করেছেন ওবায়দুল কাদের। এই সময় নিজের সীমানার বাইরে গিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন কোনো বক্তব্য না দিতে অনুরোধ করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘ভাষণ না  দিয়ে’ কাজে মন দেয়ার পরামর্শ দেন কাদের।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শনিবার দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ।

কাদের বলেন, ‘সময়টা ভালো নয়, আমি আমাদের নেতৃবৃন্দের কাছে আমার সহকর্মীদের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো যার যার সীমানা পেরিয়ে  দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিবেন না।… দল সরকার বিব্রত হয় এমন কোন কথা দয়া করে কেউ বলবেন না। হোম ওয়ার্ক করে কথা বলবেন। পলিসির ব্যাপারে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে কথা বলবেন, ফ্রি স্টাইল কথা বলা যাবে না।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক বক্তব্য তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, মন্ত্রীরা বিদেশ যেতে চায়। নেতারা কথা বেশি বলে কাজ তেমন করে না। বর্তমানে নেতাদের বঙ্গবন্ধুর সেই উক্তি স্মরণ করার অনুরোধ করছি।’

‘সরকারি পদে আমরা যারা মন্ত্রী আছি আমাদের সকলের মনে রাখা উচিত। যারা নেতারা আছেন ভাষণ না  দিয়ে কাজের দিকে মনযোগ দিবেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’

বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার নয়

বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে নেতাদের নিজেদের প্রচার নিয়েও কথা বলেন কাদের। তিনি একে দেখছেন আত্মপ্রচার হিসেবে। বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশে নিজের ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এই ছবি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন।’

‘বঙ্গবন্ধুকে ব্যবহার করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে আত্মপ্রচারে যারা নিমগ্ন তাদের রাজনীতির কমিটমেন্ট নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্লিজ এটা দেখবেন।’

‘একজন এমপি, তার বাড়ি ঢাকা থেকে অনেক দূরে একটি দ্বীপে, তিনিও ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর পাশে ছবি দিয়ে পোস্টার বিলবোর্ড করেছেন।  কেন? যারা বাইরে তারা এখানে ছবি দিচ্ছেন, এটা কি তাদের নির্বাচনী এলাকা? প্লিজ, এইসব প্র্যাকটিস বন্ধ করুন। ’

এভাবে ছবি প্রদর্শন করে মনোনয়ন পাওয়া যাবে না, সেটাও জানান কাদের। বলেন, ‘নমিনেশন (মনোনয়ন) পাওয়া যাবে জনগণের সেবা করে; জনগণের মন জয় করে নিজের নম্বর যত প্লাস হবে, তিনিই নমিনেশন পাবেন।’

কাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেনমওদুদকে প্রশ্ন

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শেষ-এই জাতীয় বক্তব্য দেয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের কাছেও বেশ কিছু প্রশ্ন রাখেন কাদের। বিএনপি নেতা কী করেছেন, সেটি তার কাছেই জানতে চান তিনি।

অতিদ্রুত দেশের রাজনীতির চিত্র কীভাবে বদল হবে-এমন প্রশ্নও মওদুদকে উদ্দেশ্য করে করেন কাদের। বলেন, ‘কেন বদল হবে? কী কারণে বদল হবে? মওদুদ সাহেবের কী ম্যাজিক আছে যে ম্যাজিক দিয়ে রাজনীতি বদল করবেন?’

‘নির্বাচনে দেশের জনগণের রায়ের মাধ্যমে সরকার বদল হতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে বদল করার যে খোয়াব দেখছেন, তা্ অচিরেই কর্পুরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবেন।’

মওদুদকে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘রাতের অন্ধকারে কী গোপন বৈঠক করলেন? কাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন? সরকার কে বদলাবে? জনগণ। জনগণ কি আপনাদের চায়? নয় বছরে জনগণ আপনাদের ডাকে সাড়া দেয় নাই, তারপরও বুঝেন নাই?’

‘আজকে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির দিন শেষ। আর সুযোগ নাই। দেশের জনগণকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর সুযোগ নাই আর।’

‘সকল আন্দোলনে ব্যর্থ হয়েছে, এখন দেখছি নালিশ আর নালিশ। আবার গোপন বৈঠক। আমরা জানি কোথায় কারা কারা বৈঠক করছেন। টেমস নদীর পাড়ে কখন কার সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। ব্যাংকক, দুবাইতে বসে কারা কোন গডফাদারের সঙ্গে বৈঠক করছেন। দেশেও রাতের অন্ধকারে বসে কোন বৈঠক হচ্ছে সব আমাদের নলেজে আছে। সময়মতো ধৈর্য ধরে আছি। মনিটর করছি আরও খোঁজ খবর নিচ্ছি। সময়মতো ব্যবস্থা নেব।’

মওদুদকে কেন বিশ্বাস করেনবিএনপিকে প্রশ্ন

মওদুদ আহমদকে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেন বিশ্বাস করেন এ প্রশ্নও করেন কাদের। বলেন, ‘বিএনপিকে বলি এ লোকটাকে কেন বিশ্বাস করেন? আলতু ফালতু কথা বলে সেই জন্য? কীভাবে বেগম জিয়াকে হাসপাতালে রেখে এরশাদ সাহেবের দলে যোগ দিয়েছিলেন, এটা ইতিহাস।’

‘এদেশের রাজনীতির বহুরূপী ব্যারিস্টার। কথায় কথায় যিনি দল ও রঙ বদলাতেন। কখনও সাহেব কখনও বিবি, কখনও বিবি কখনও সাহেব। তাঁর নাম হলো মওদুদ আহমদ।’

‘তিনি এখন বেগম খালেদা জিয়াকে পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু যখন (এরশাদ সরকারের সময়) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আহত হয়ে কুমিল্লা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বেগম জিয়ার সঙ্গে। ওই আমাদের নেত্রী বেগম জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন ঘূর্ণিঝড় এলাকায় পরিদর্শনের সময়। আমরা যাওয়ার আগেই মওদুদ আহমদ সাহেব হাসপাতাল ত্যাগ করলেন। পরের দিন শুনলাম তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।’

গুলশানে মওদুদ আহমদের বাড়ি দখলের কথা তুলে ধরে কাদের বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া কাগজ করে যে লোক বাড়ি দখল করে তাঁর রাজনীতি কি স্বচ্ছ? তিনি কি দেশপ্রেমিক। তিনি কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন?’

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারের সভাপাতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১১আগস্ট-২০১৮ইং)

SHARE