অনলাইন ডেস্ক:ভোলানিউজ.কম,
সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়ে ‘করে খাওয়ার’ পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং মেয়ে সায়ম ওয়াজেদ পুতুলের জন্য কোনো সম্পদ রেখে যাবেন না।
শনিবার দলের চার বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে করা বিশেষ বর্ধিত সভায় এ কথা জানান করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে তার শাসনামলে জনকল্যাণে নেয়া নানা কর্মসূচি তুলে ধরা, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সেগুলোর ব্যাপকভিত্তিক প্রচার এবং দলীয় কোন্দল নিরসনের নির্দেশের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের কাহিনি তুলে ধরেন। জানান, তিনি দেশে ফেরার পর তার বাবার বাসভবন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঢুকতেও দেয়া হয়নি।
সেই সঙ্গে তার রাজনীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তার চেষ্টার কথা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তুলে ধরেন তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের বিপুল সম্পদের কথা।
জনগণের কল্যাণ রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য জানিয়ে শেখ হাসিনা জানান, তিনি কখনও ব্যক্তিস্বার্থে দেখেন না।
‘প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম, নিজে প্রধানমন্ত্রী ছিলাম আরও দুইবার। কখনও তো নিজের ভাগ্য গড়ার জন্য কাজ করিনি। যেটুকুই কাজ করেছি বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে জনগণের উন্নয়নে জনগণের স্বার্থে।’
‘ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, বলেছি, তোমাদেরটা তোমরা করে খাবে। কারণ শিক্ষা, এটাই সবচেয়ে বড় সম্পদ, আর কোনো সম্পদ রেখে যেতে পারব না। কিন্তু বাংলাদেশটাকে, বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের জীবন মান উন্নত করব। এটাই হচ্ছে আমাদের রাজনীতি, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
‘বিএনপি অবৈধ দল’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল উচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বলেন অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে করা দল বৈধ হয় না।
জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রপতি হওয়া এবং পরে সেনা প্রধান থাকা অবস্থায় আইন লংঘন করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন সায়েম সাহেব। তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিল জিয়াউর রহমান। কার ক্ষমতা গ্রহণকে উচ্চ আদালত অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ হিসেবে রায় দিয়েছে।’
জিয়াউর রহমানের ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘না বাক্স পাওয়া যায়নি। আর তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১০০ ভাগের ওপর ভোট পড়েছে।’
‘একদিনে সেনাপ্রধান, আরেকদিনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী। যেটা আর্মি রুল অ্যাক্ট বিরোধী।’
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিএনপি গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে গঠন করল রাজনৈতিক দল। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ক্ষমতায় বসে যে দল সৃষ্টি হয়, সে দলও তো অবৈধ দলই হয়ে যায়।’
‘এই দলের কার্যক্রম কী? এরা যখনই ক্ষমতায় এসেছে বাংলার মানুষের ওপর অত্যাচার হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের তো কথাই নেই।’
‘তারা দিনের পর দিন লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে। রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী করে ক্ষমতায় বসিয়েছে। অর্থাৎ ৭৫ এর পরে দেশে ক্ষমতায় বসেছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগের সাত কর্মীকে যারা হত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত শফিউল আলম প্রধানকে ক্ষমা করে রাজনীতিতে নিয়ে আসারও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘তারা যুদ্ধাপরাধী, খুনি আসামি, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সদস্য, তাদেরকে নেতা বানাল, পুরো রাজনীতিকে কলুষিত করে দিল।’
‘সেই দৃশ্য সহ্য করার মতো ছিল না’
৮১ সালে দেশে ফেরার পর বনানী করবস্থানে তার স্বজনদের সমাধিতে যাওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যখন ফিরে আসি নিঃস্ব, রিক্ত অবস্থা। কোনো চেনা মুখ নেই। চেনা মুখের মধ্যে কী দেখলাম? বনানীনে সারি সারি করব। এটা সহ্য করার মতো না, অত্যন্ত কষ্টকর ছিল।’
‘দূরে থেকে শুনেছি এক রকম। কিন্তু চোখের সামনে এ রকম সারি সারি কবর আমি দেখেছি।’
দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু ভবনে ঢুকতে পারেননি বলে জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাব সবার জন্য দোয়া করতে। কিন্তু জিয়াউর রহমান ৩২ নম্বরে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। রাস্তায় বসে বাবা মা ভাই বোনদের জন্য দোয়া করেছি।’
(আল-আমিন এম তাওহীদ, ৩০জুন-২০১৮ই)