সংবিধান রক্ষা, উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে পাশে চান প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক: ভোলানিউজ.কম,

সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে কোনো হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে শৃঙ্খলা বজায় রেখে কাজ করা এবং সরকারের উন্নয়ন যাত্রায় সহযোগী হিসেবেও সেনাবাহিনীকে পাশে চেয়েছেন তিনি।

রবিবার সেনা সদরদপ্তরে ২৭টি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই আহ্বান জানান। সেনা সদস্যদের তিনি বলেন, ‘পবিত্র সংবিধান ও দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বর্তমান সরকার সব সময় জনগণের সেবক হিসেবে সরকার পরিচালনা করতে চায় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কখনও শাসক হিসেবে নয়। জনগণের সেবা করার জন্য আপনাদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি।’

সেনাবাহিনী সরকারকে সব সময় সহযোগিতা করবে বলেও আশাবাদী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যখনই প্রয়োজন হবে তখনই সেনাবাহিনী জনগণের পাশে এসে দাঁড়াবে, এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’

‘কারণ, মনে রাখতে হবে দেশটা আমাদের, দেশের মানুষ আমাদের। আপনারা যারা এখানে উপস্থিত, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই আপনারা এখানে এসেছেন, যেখানে আপনাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছে। আপনাদের বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে সকলেই আছে। কাজেই বাংলাদেশের সকল মানুষের সার্বিক উন্নতি, এটাই হচ্ছে আমাদের আওয়ামী লীগ সরকারের মৌলিক লক্ষ্য।’

সেনাবাহিনীকে শৃঙ্খলাবদ্ধও দেখতে চান শেখ হাসিনা। বলেন, সেনাবাহিনীতে ‘যারা সৈনিক আছেন, আপনারা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভাতৃত্ববোধ, কর্তব্য পরায়নতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবেন বলে আমি আশা করি।’

নিজেকে ‘জনগণের সেবক’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে কোনো ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। চাই মানুষের কল্যাণ, চাই মানুষের উন্নতি। এই বাংলাদেশটাকে এমনভাবে উন্নয়ন করতে চাই বাংলাদেশটা যেন বিশ্বে সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে।’

তার ওপর আস্থা রাখায় দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতাও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই কাজ আমি কখনও করতে পারতাম না, যদি না বাংলাদেশের জনগণ আমাকে, আমার সংগঠন আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত না করতে পারত। আর যদি আমি দেশ সেবার সুযোগ না পেতাম তাহলে এত কাজ করতে পারতাম না।’

দীর্ঘ বক্তব্যে সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠা, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনা এবং তার আলোকে বর্তমান সরকারের ফোর্সেস গোল ২০৩০ নির্ধারণ, সেবাহিনীর আধুনিকায়ন, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ও সিগন্যালিং যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ বিভিন্ন সেনা ইউনিট গঠনের কথা জানান।

সেই সঙ্গে সেনা সদস্যদের জীবনধারার উন্নয়ন ও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প সফলভাবে চালু হওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেল এখন অবধি আমদানি নির্ভর। এখন দেশেই এটি উৎপাদন হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একেকটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করাটা সমাধান না। এখানে মাঝে মাঝে সমস্যা হয়। এখানে প্রেসক্রিপশন আসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে।’

‘আমাদের পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা প্রেসক্রিপশন শুনলে মাথা খারাপ হয়ে যেত, ওটাই কার্যকর করত। আমার কথা হচ্ছে, এটা আমার দেশ, আমার সম্পদ, জনগণের সম্পদ। কীভাবে এটাকে লাভজনক করা যায়, আমরা যে ব্যবস্থা করব। মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলা তো সমাধান না, আজকে সেটা প্রমাণ হয়েছে, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আজকে লাভজনক।’

‘ভেজিটেবল ওয়েল লিমিটেড দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল, আমি সেনাপ্রধানকে বললাম, এটা আপনাদেরকে দিতে চাই। এরপরে দীর্ঘ সময়, মামলা মোকদ্দমায় অনেক সময় চলে গেছে। আজকে সেটা করলাম। আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লাভজনক হবে। আমাদের তেলটা বিদেশ থেকে আনা হয়। এখন দেশে উৎপন্ন হবে, সেটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।’

বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ করে দিতে যাওয়া বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন কারখানা সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেয়ার পর লাভজনক হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। একইভাবে খুলনা শিপইয়ার্ড ও ড্রাইডককে নৌবাহিনী লাভজনক করা, নিজেদের যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। জানান, এই প্রকল্পটিও বিএনপি সরকার বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল।

বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা দিয়ে বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকারও প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে আছে পদ্মাসেতু, হাতিরঝিল, বহদ্দারহাট ও মহীপাল ফ্লাইওভার, আলীকদম সড়ক প্রভৃতি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের ক্ষেত্রে সকলেই সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সম্পদ, দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। তাই পেশাদারিত্বের কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সফল এবং মঙ্গলময় জীবনের জন্য উদ্বুদ্ধ হতে হবে।’

বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্রয় আর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘বর্তমানে আমরা মহাকাশে পৌঁছে গেছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ইতিমধ্যে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে সফলভাবে। এটা একটা নতুন প্রক্রিয়া এবং নতুন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অনেকের সন্দিহান ছিল।’

‘চিকিৎসা সেবা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রে আমরা এর ব্যবহার করতে পারব। সেই সাথে অন্যান্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আমরা অর্জন করতে পারব। সেই দিক থেকেও এটা আমাদের একটা বিরাট অর্জন।’

দেশের উন্নয়নে ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জানান ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা শেষ হওয়ার আগেই নতুন এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

(আল-আমিন এম তাওহীদ, ১৩মে-২০১৮ইং)

SHARE