ঢাকা ও বেইজিং দীর্ঘ দিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সম্মত হয়েছে। গতকাল বেইজিংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট জিনপিংয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই মতৈক্য হয়। গতকাল সন্ধ্যায় দিয়াওউয়াতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র সচিব মো: শহীদুল হক বলেন, ‘দুই নেতা প্রথমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সম্মত হয়ে বলেন, এটি অমীমাংসিত রাখা যাবে না।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, চীনের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এ ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরের পর দু’বছর পেরিয়ে গেছে। পররাষ্ট্র সচিব দুই নেতাকে উদ্ধৃত করে আরো বলেন, ‘কিভাবে এই সমস্যার সমাধান হবে এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। রোহিঙ্গারা অবশ্যই তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে।’
শহীদুল হক বলেন, উভয় নেতা উল্লেখ করেন যে, এ ব্যাপারে দু’দেশের প্রতিনিধিরা এক সাথে কাজ করবে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে তারা মিয়ানমারের ওপর ‘গুড উইল’ কাজে লাগাবে।
বীরদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে তিয়েন আনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবের বীরদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী এই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর চীনের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরদের প্রতি সম্মান জানানোর অংশ হিসেবে তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং পৌঁছলে চীনের সশস্ত্রবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে প্রধানমন্ত্রী গ্রেট হল অব পিপলে চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) চেয়ারম্যান লি ঝাং শুর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন।
যোগাযোগ করবে সিপিসি : চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও নিশ্চিত করেছেন যে তার দল কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি) সমঝোতার ভিত্তিতে দীর্ঘদিনের রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করবে।
তিনি বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে আমরা অং সান সু চিসহ মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করব।’ গতকাল বিকেলে স্থানীয় দিয়াওউনতাই রাষ্ট্রীয় গেস্ট হাউজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎকালে সিপিসি নেতা এ আশ্বাস দেন। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান এবং চীনের শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দিনের সরকারি সফরে এখন চীন রয়েছেন। সিপিসি নেতার সাথে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো: নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের প্রশংসা করে সং তাও আরো আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমরা আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’ সিপিসি নেতা বাংলাদেশের অত্যন্ত বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উল্লেখ করে এতে ‘বিশ্বে দুর্লভ’ বলে বর্ণনা করেন। কেবল উচ্চপর্যায়ে নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল চীন সফর করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের মাধ্যমে দু’টি দলের মধ্যকার বন্ধন আরো দৃঢ় হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিগগিরই একটি সিপিসি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। বৈঠকের শুরুতেই সিপিসি নেতা চীন সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সিপিপির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি ১৯৯৩ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে চীনে তার প্রথম সফরকে স্মরণ করে বলেন, সফরের পর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করব যাতে আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে।’
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চীনা জনগণ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্র সচিব মো: শহিদুল হক ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।