মনপুরায় বনদস্যুদের দখলে সামাজিক বনায়ন ও ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল

 

ইমরানঃ–

ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৫ হাজার একরের সুবিস্তৃত বনভূমি। কিন্তু, এর বড় অংশই এখন বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে উজাড়ের মুখে। তারা যখন তখন কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনের গাছ। বিশাল এই বনভূমি রক্ষায় আছেন বন বিভাগের মাত্র ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ফলে জনবল সংকটের কারণে চেষ্টা করেও তাদের থামাতে পারছে না বন বিভাগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মনপুরায় রাস্তার দুপাশে ও বনের ভেতর থেকে দিনের বেলায় ও রাতের অন্ধকারে বড় বড় গাছ কেটে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ও কাঠ চোরাকারবারিরা। বনের ভেতরে ও রাস্তার দুপাশে দেখা গেছে, অসংখ্য কাটা গাছের গোড়া। কবে, কখন কে বা কারা এসব গাছ কেটেছে তা জানে না বন বিভাগ। এদের কাউকে আইনের আওতায় আনতেও পারছে না সরকারি সংস্থাটি। একই অবস্থা, ৪নং দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের রাস্তার দু’পাশে লাগানো সবুজ বেষ্টনীর।

বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের মুখে বনভূমি।
মনপুরা উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার একর বনভূমি রয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন মাত্র ২৩ জন বন কর্মকর্তা ও প্রহরী। অল্প জনবল দিয়ে এই বিশাল বনভূমি রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বনবিভাগকে।

স্থানীয়রা বলছেন,দিনের বেলা ও রাতের আঁধারে চোরাকারবারিরা ট্রলার নিয়ে এসে গাছ কেটে রাতেই নদী পথে চলে যায়। একইসঙ্গে মনপুরা উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া পঁচা কোড়ালিয়া বিটের বন বিভাগের সংলগ্ন চর ফিয়াল থেকে একটি চক্র হরিণ শিকার এবং কাকড়া, মেহগনি,নাটাই ও কেওরা গাছ কেটে নিয়ে যায়।
দক্ষিণ সাকুচিয়া পঁচা কোড়ালিয়ার বিট কর্মকর্তা মোবারক বলেন, ২৪ ঘণ্টা টহলের ব্যবস্থা করা দরকার। এখানে দক্ষ কর্মচারী বাড়ানো দরকার। না হলে হরিণ শিকারি ও চোরাকারবারিদের থামানো সম্ভব হবে না।

দক্ষিণ সাকুচিয়ায় সংরক্ষিত বনের আয়তন প্রায় ১ হাজার একর। এখানে কোনও একসময় ৮/১০ জন বনকর্মী ছিলেন। এখন সেখানে আছেন মাত্র ৪ জন। এছাড়াও এই বনরক্ষায় নেই কোনও নৌযান। এতবড় বনভূমিতে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খাল। কখনও কখনও সাঁতরে এগুলো পার হতে হয় বন কর্মীদের। এ সুযোগ ব্যবহার করছে গাছ চোরাকারবারিরা।

বৃক্ষনিধন চলছে

মনপুরার মেইন সড়ক ও বেড়িবাঁধে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য বড় বড় গাছের কাটা গোড়া । এসব কাটা গোড়াগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে কিছুদিন আগেও এখানে রেইন ট্রি, আকাশমনিসহ বিভিন্ন গাছ দাঁড়িয়েছিল। নজরদারির অভাবে এগুলো কেটে নিয়ে গেছে স্থানীয় চোরাকারবারিরা। বনের ভেতর থেকেও গাছ কাটছে তারা।

বৃক্ষনিধন চলছে,বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের মুখে বনভূমি

দক্ষিণ সাকুচিয়া সংরক্ষিত বনের বিট কর্মকর্তা মোবারক বলেন, ‘দক্ষিণ সাকুচিয়ার চরফিয়াল অনেক বড় বন। আর আমাদের এখানে জনবল খুবই কম। তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে বন থেকে গাছ চুরি না হয়। এর মধ্যে কয়েক স্থানে গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাছ চুরি রোধে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমাদের লোকবল কমের কারণে এতবড় বনভূমি রক্ষায় কষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রতিটি স্থানে সঠিক সময় টহল দিতে পারছে না বনরক্ষীরা। চোরাকারবারিরা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বনের ভেতর ও মেইন সড়ক থেকে কেটে নিচ্ছে তাদের পছন্দ মতো গাছ। একইসঙ্গে বনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালীরা গাছের ডালসহ গাছ কেটে নিচ্ছে লোক চক্ষুর সামনে ও আড়ালে।

বন উড়াড় করে কেটে নেওয়া হচ্ছে গাছ

এদিকে, মনপুরাসহ দক্ষিণ সাকুচিয়া বেড়িবাঁধের ওপরে লাগানো রেইনট্রিসহ বিভিন্ন গাছের ডাল ও গাছ কেটে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রকাশ্যে লোক দিয়ে রাস্তার পাশের গাছের ডাল ও গাছ কেটে নেওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে প্রভাবশালীরা স্থান ত্যাগ করেন। শ্রমিকরা জানান, গাছ কাটার জন্য মজুর হিসেবে নিয়েছে তাদের। আমরা দু’মুঠো ভাতের জন্য কাজ করি। প্রভাবশালীদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আপনাদের কাছে তাদের নাম বললে পরে আমাদের ওপরে অত্যাচার হবে।’

বন উড়াড় করে কেটে নেওয়া হচ্ছে গাছ

মনপুরা বনবিভাগের কর্মকর্তা (রেঞ্জ অফিসার) সুমন দাস দৈনিক ভোলা নিউজ কে বলেন, ‘মনপুরা রেঞ্জে যে পরিমাণ জনবল থাকার কথা তা না থাকায় মাঝে মাঝে দু-এক স্থান থেকে কিছু লোক গাছের ডালপালা কাটে। যেখানে ডাল বা গাছ কাটার সংবাদ পাই সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটে যাই এবং আইনগত ব্যবস্থা নেই। তবে জনবল বৃদ্ধি হলে এই সমস্যাও থাকবে না।’

বনদস্যুদের দৌরাত্ম্যে ধ্বংসের মুখে বনভূমি

এ বিষয়ে বন বিভাগের ভোলা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মোঃ তৌফিক সাহেব কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের এরিয়ার মধ্যে বনদস্যুরা গাছ কাটার খবর পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেই্। এছাড়া নদী পথে চর ফিয়াল, কাজীরচরসব অন্য কোনও বন থেকে যে গাছ পাচার হয় তা পুলিশের সহযোগিতায় আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। বন থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটার বিরুদ্ধে আমরা সবসময় তৎপর রয়েছি।

SHARE