ইব্রাহিম আকতার আকাশ: ভোলার মনপুরা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম শাহীনের বিরুদ্ধে মনপুরা সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তদবির করে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বিএনপির সাধারণ কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। এতে তোপের মুখে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাহবুবুল আলম শাহীন। পরবর্তীতে ওই আওয়ামী লীগ কর্মীর চাকরি বাতিল করা হয়।
জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেছেন, এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্যদিকে, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাচ্চু চৌধুরী বিষয়টি অবগত বলে স্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
জানা যায়, মনপুরা সদর হাসপাতালে ১০ জন আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে ঠিকাদার কর্তৃক যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের বিধান থাকলেও মাহবুবুল আলম শাহীন তার রাজনৈতিক ক্ষমতা অপব্যবহার করে ৫ জন প্রার্থীর জন্য জোর তদবির করে চাকরি প্রদানে বাধ্য করেন। অভিযোগ রয়েছে, এরমধ্যে রুবেল আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। মোটা অঙ্কের অনৈতিক অর্থ সুবিধা নিয়ে তাকে শাহীন চাকরি দেন।
এ ঘটনা জানাজানি হলে শাহীনের এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ কর্মীরা ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় হাজিরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে তাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে অভিহিত করেন। তাকে পদচ্যুতসহ বিএনপি থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায় বিক্ষুব্ধরা।
বিএনপি কর্মী হাসান জানান, মাহবুবুল আলম শাহীন আওয়ামী লীগের দালাল। তিনি আওয়ামী লীগের দালালী করে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন। এখন টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের চাকরি দিচ্ছেন।
বিএনপি কর্মী কামাল বলেন, শাহীনের মতো একটা অযোগ্য ছেলেকে সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম তার প্রতিষ্ঠিত কলেজে চাকরি দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর সে কলেজ থেকে নাজিম উদ্দিন আলমের মায়ের নাম পরিবর্তন করার মতো ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এক এগারোর সময়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাচ্চু চৌধুরীর বিরুদ্ধেও সে ষড়যন্ত্র করেছিল। ‘উত্তরে বাংলাভাই দক্ষিণে দাদাভাই’ শিরোনামে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন নিউজ করিয়েছিল। সেই নিউজের ফলে একজন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধকালীন কমান্ডার বাচ্চু চৌধুরী কারাগারে যায়। বিচার শেষে তিনি নির্দোষ প্রমাণ হন ও বেকসুর খালাস পান।
কামাল আরও জানান, কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরের বাসায় একাধিকবার তার পিতাকে নিয়ে যান। তিনি জাকিরসহ সাবেক এমপি জ্যাকবের সাথে দেখা করেন। তার অতীত অপকর্মের জন্য তাকে আওয়ামী লীগে নেননি সাবেক এমপি জ্যাকব। কিন্তু তিনি এখন বিএনপিসহ সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চাকরি দেওয়াসহ নানা জায়গায় পুনর্বাসনের ইজারা নিয়েছেন। এজন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কারসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাহলে আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
অভিযুক্ত মাহবুবুল আলম শাহীন ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মনপুরা হাসপাতালের ১টি পদে আমার সুপারিশজনিত অনাকাঙ্খিত ঘটনাটির জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইতিমধ্যে ওই একটি পদ সংশোধন করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাচ্চু চৌধুরী বলেন, শাহীন আওয়ামী লীগের একজন সমর্থককে চাকরি দিয়েছে সেটি আমরা অবগত। তবে বিষয়টি জানাজানির পর আওয়ামী লীগের ওই সমর্থকের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। এটা বড় কোনো বিষয় নয়। তবুও আমরা বিষয়টি দেখছি।
জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর বলেন, মনপুরা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। সেখানকার এমন কোনো বিষয় আমি অবগত নই। বিএনপির কোনো নেতা আওয়ামী লীগের লোকজনকে চাকরি দেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ভোলা নিউজ৷ / টিপু সুলতান