ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে ৩ গুন ভাড়া, ৮ বছরে ৩ বার বৃদ্ধি

এইচ এম জাকিরঃ
দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান পথ ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুট। রুটটিতে বরাবরই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। গত আট মাসে এ রুটে তিনবার ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন নৌযান মালিকরা। আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত থেকে অতিরিক্ত ভাড়া। যাত্রীদের অভিযোগ, বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

দ্বীপজেলা ভোলা হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরের সঙ্গে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুট দিয়ে যোগাযোগ করে দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ২১ জেলার মানুষ। প্রতিদিন এ রুটে ফেরি সার্ভিস ছাড়াও লঞ্চ, ট্রলার ও সি-ট্রাকের মাধ্যমে কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত আগস্টের দিকে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট পর্যন্ত নৌযানগুলোয় যাত্রীপ্রতি ভাড়া গুনতে হতো ৮০ টাকা। এর দুই মাসের মাথায় কোনো কারণ ছাড়াই এ ভাড়া ২০ টাকা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে লঞ্চ মালিকপক্ষ আবারো ২০ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ১২০ টাকা নেয়া হলেও গত মার্চের শুরুতে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১৫০ টাকা।

রুটটিতে বর্তমানে ফেরি ছাড়াও দোয়েল পাখি, এমভি পারিজাত নামে দুটি লঞ্চ, কুতুবদিয়া নামে একটি জাহাজ ও একটি সি-ট্রাক চলাচল করছে। এছাড়া অনুমতি না থাকলেও অবৈধভাবে চলাচল করছে বেশকিছু ট্রলার ও স্পিডবোট। সব ধরনের নৌযানেই প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ন্যূনতম ১৫০ টাকা। অথচ বিআইডব্লিউটিএর নিয়মানুযায়ী কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা হিসেবে রুটটির ২৬ কিলোমিটারের ভাড়া হওয়ার কথা ৪৫ টাকার মতো। এ হিসেবে রুটটিতে তিন গুণেরও বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এছাড়া লঞ্চ ও জাহাজে আপার লেভেল, ভিআইপি সিট ও কেবিনের জন্য গুনতে হচ্ছে আরো অন্তত ২০০-৩০০ টাকা।

এ বিষয়ে কথা হলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করেন বিআইডব্লিউটিএর ভোলা অঞ্চলের পরিবহন পরিদর্শক ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা মো. নাসিম আহমেদ। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী ৪৫ টাকা ভাড়া নিলে লোকসানের অভিযোগ করেন লঞ্চ মালিকরা। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে আলোচনার পর এক বছর আগে রুটটির ভাড়া ৮০ টাকা করা হয়েছিল। তবে কয়েক দফায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ ভাড়া বাড়িয়ে বর্তমানে ১৫০ টাকা করেছে। বিষয়টি আমরা অবগত হলেও এখন পর্যন্ত যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।

ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন যাত্রী বলেন, কোনো কারণ ছাড়া এভাবে ভাড়া বৃদ্ধি অন্যায়। তাছাড়া কয়েক গুণ বেশি ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে। এতে খরচ ও ভোগান্তি বেড়েছে রুটটিতে নিয়মিত চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের।

চট্টগ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী বেল্লাল হোসেন বলেন, এ রুটে মাত্র দেড় ঘণ্টার পথের ভাড়া ১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। অথচ ভোলা-ঢাকার ৯ ঘণ্টার পথের জন্যও একই পরিমাণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

একই অভিযোগ করেন কামাল উদ্দিন নামে এক সবজি ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, এ পথে ২০ বছর ধরে ভোলা থেকে সবজি নিয়ে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় যাতায়াত করছি। ভাড়া নিয়ে এর আগে এমন অনিয়ম কখনো সৃষ্টি হয়নি। প্রায় প্রতিবারই এ নিয়ে লঞ্চের দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়।

অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বিষয়ে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী এমভি দোয়েল পাখি-১ লঞ্চের মালিক আফসার উদ্দিন দাবি করেন, তারা নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন। কোনো যাত্রীর কাছ থেকে ১ টাকাও বেশি নেয়া হচ্ছে না। একই দাবি করেন এমভি পারিজাত লঞ্চের মালিক পক্ষের নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত চার্ট অনুসারে ভাড়া নিয়ে থাকি। তবে তারা কেউই সরকারিভাবে ১৫০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের কোনো তালিকা বা চার্ট দেখাতে পারেননি।

এ বিষয়ে কথা হলে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. মাসুদ আলম সিদ্দিক বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া থেকে বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে

SHARE